Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আশূরার সাথে মহানবী (স.) এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাতবরণের কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর রসূল (স.) সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনকে নিয়ে আশূরার রোযা রেখেছেন নবী মূসা (আ.) ও তার কওমের পরিত্রাণ প্রাপ্তির শুকরিয়া হিসেবে। তবে আজকাল অনেকেই হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনাকে আশূরার সাথে গুলিয়ে ফেলে। কারণ, পাক-ভারত উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কিছু এলাকা শিয়া প্রভাবিত হওয়ায় তারা এ দিন নানা ধরনের কর্মসূূচি পালন করে। বাংলাদেশে কিছু শিয়া তাজিয়া সাজায়, মিছিল বের করে, ঘোড়া সাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করে. হাই হোসেন, হাই হোসেন বলে মাতম করে। এটা দেখে অনেক সুন্নী মুসলিমেরও ধারণা, হুসাইন ইবনে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর শাহাদাতবরণের দিনকেই বোধ হয় আশূরা বলে। বাংলাদেশে মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ নামক বই পড়ে অনেকে একাধিক সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। এমনকি অনেকে গালিগালাজের পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে যায়। নাঊযু বিল্লাহ। মূলতঃ কারবালার ঘটনাকে করুণ থেকে করুণতর করতে গিয়ে অনেক শিয়া প্রভাবিত লেখক অনেক কল্পনার রঙ চড়িয়েছেন। আমরা কারবালা প্রান্তরের প্রকৃত ঘটনা এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনার প্রয়াস পেলাম।

৬০ হিজরীতে ইরাকবাসীদের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, হুসাইন ইবনে আলী (রা.) ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার হাতে বায়আত করেননি। তারা তাঁর নিকট চিঠিপত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিল যে, ইরাকবাসীরা তার হাতে খেলাফতের বায়আত করতে আগ্রহী। ইয়াজিদকে তারা সমর্থন করেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন। তারা আরো বললেন, ইরাকবাসীরা ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া (রা.)-এর প্রতিও মোটেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। চিঠির পর চিঠি আসতে লাগল। এভাবে পাঁচ শতাধিক চিঠি হুসাইন (রা.)-এর কাছে এসে জমা হল।

প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার জন্য হুসাইন (রা.) তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে পাঠালেন। মুসলিম কুফায় গিয়ে দেখলেন, আসলেই লোকজন হুসাইন (রা.)-কে চাচ্ছেন। লোকেরা মুসলিম বিন আকীলের হাতেই হুসাইন (রা.)-এর পক্ষে বায়আত নেয়া শুরু করলো। হানি বিন উরওয়াহর ঘরে বায়আত সম্পন্ন হল।

সিরিয়াতে ইয়াজিদের নিকট এ খবর পৌঁছা মাত্র বসরার গভর্নর উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পাঠালেন। উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে ইয়াজিদ আদেশ দিলেন যে, তিনি যেন কুফাবাসীকে তার বিরুদ্ধে হুসাইনের সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন। ইয়াজিদ হুসাইন (রা.)-কে হত্যার আদেশ দেননি।
উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ কুফায় গিয়ে বিষয়টি তদন্ত ও লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলেন। পরিশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, হানি বিন উরওয়াহর ঘরে হুসাইনের পক্ষে বায়আত নেয়া হচ্ছে।

এদিকে মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে অগ্রসর হয়ে দ্বিপ্রহরের সময় উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এসময় উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর ভয় দেখালেন। তিনি এমন ভীতি প্রদর্শন করেন যে, লোকেরা ইয়াজিদের ধরপাকড় এবং শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে পলায়ন করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে মুসলিম বিন আকীলের সঙ্গে থাকলেন মাত্র ৩ জন। সূর্য অস্ত যাবার পর মুসলিম বিন আকীল দেখতে পেলেন, হুসাইন প্রেমিক আল্লাহর একজন বান্দাহও তার সাথে নেই। এবার তাকে গ্রেফতার করা হল। উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। মুসলিম বিন আকীল উবায়দুল্লাহর কাছে আবেদন করলেন, তাকে যেন হুসাইনের নিকট একটি চিঠি পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এতে উবায়দুল্লাহ রাজি হলেন। চিঠির বক্তব্য ছিল নিম্নরূপ :

“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফাবাসীদের ধোকায় পড়ো না। কেননা, তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেখা এই তথ্য মিথ্যা নয়।”
অতঃপর যিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফা দিবসে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ মুসলিমকে হত্যার আদেশ দেন। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ করা দরকার যে, মুসলিম ইতঃপূর্বে কুফাবাসীদের ওয়াদার ওপর ভিত্তি করে হুসাইনকে আগমনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির ওপর ভিত্তি করে যিলহজ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা.) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। অনেক সাহাবী তাঁকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ