পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ বিদেশে রফতানি হয়। একই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশে যান চিকিৎসার জন্য। বিশেষ করে প্রতিবছর ভারতে কয়েক লাখ রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য যান। এতে দেশের বিপুল পরিমান অর্থ বিদেশে চলে যায়। বিদেশে চিকিৎসার প্রবণতায় ভাটার টান ধরাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবায় বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শীর্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অ্যাপোলো হাসপাতাল শেয়ার বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছে। চলতি মাসেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে সূত্র জানিয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপোলো হাসপাতাল তথা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আসলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ার পাশাপাশি কমবে রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগে আসলে পরবর্তীতে অন্যান্য দেশও বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ পাবে।
সূত্র মতে, বর্তমানে ভারতেই প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। পাশাপাশি থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে এই সংখ্যা কম নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপোলো হাসপাতালে বিনিয়োগ করলে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সেবা পাবে বাংলাদেশের মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ইনকিলাবকে বলেন, অ্যাপোলো হাসপাতালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আমাদের জন্য সু-খবর। কারণ এতে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সেবা মিলবে। পাশাপাশি দেশের বৃত্তবান রোগীদের বিদেশমুখীতা অনেকাংশে কমবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফোর্ট ওর্থ এবং সানফ্রানসিসকো ভিত্তিক টেক্সাস প্যাসিফিক গ্রুপ অ্যাপোলো হাসপাতালের অধিকাংশ শেয়ার কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সারাবিশ্বের ১৭টি কার্যালয়ে ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ আছে। অ্যাপোলো হাসপাতাল পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান এসটিএস হোল্ডিংস লিমিটেড পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। পরবর্তিতে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং বড় কোন বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করে। তবে এসটিএস হোল্ডিংসের জনসংযোগ বিভাগ এই বিষয়ে কোন তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাপোলো হাসপাাতলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এই বিষয়ে চলমান আলোচনা সম্পর্কে জেনেছেন, তবে এখন পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। চলতি মাসের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি বোর্ড সভা হওয়ার কথা রয়েছে এবং তখন নতুন কোনও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জানা গেছে, এর আগে এসটিএস হোল্ডিংস কিছু শেয়ার শ্রীলংকার একটি বিনিয়োগ গ্রুপের কাছে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এবং ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর শেয়ার ১০৫ টাকায় নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু এই প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি। এসটিএস হোল্ডিংস ১৯৯৭ সালে যাত্রার শুরু করে এবং ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হয়। এটি অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ইন্ডিয়ার ফ্রাঞ্চচাইজ নিয়ে অ্যাপোলো হসপিটাল ঢাকা শুরু করে।
সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে স্থির-মূল্য পদ্ধতির আওতায় শেয়ারের জন্য ১২৫ টাকা দাম চেয়ে ৩৭৫ কোটি টাকার আইপিওর জন্য আবেদন করে। রাজধানীর হাসপাতালের অবকাঠামো স¤প্রসারণে ও চট্টগ্রামে নতুন আরেকটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য মূলত টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল এসটিএস হোল্ডিং। যদিও শেয়ারবাজারের খারাপ অবস্থার কারনে প্রক্রিয়াটি আর আগায়নি।
পরে ২০১৪ সালে, যখন শেয়ার বাজার আবার কিছুটা ঘুরে দাড়ালো, তখন এসটিএস হোল্ডিংস আবার আইপিওর জন্য আবেদন করে। ৩৫ টাকা হারে কোম্পানির দশ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে ২০১৫ সালে বিএসইসির পাবলিক ইস্যু বিধি পরিবর্তনের কারণে সংস্থাকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অধীনে আবার আবেদন করতে বলা হয়, যেখানে সংস্থাটি কেবলমাত্র তাদের কত মূলধন প্রয়োজন তা ঘোষণা করতে পারে এবং যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ারের দাম নির্ধারণ করবেন।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে, এসটিএস হোল্ডিংস বিনিয়োগকারীদের তার ব্যবসায়ের বিষয়ে জানতে ঢাকার একটি হোটেলে একটি রোড শো’র ব্যবস্থা করেছিল। তারা আনুমানিক ৪৯৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চ্যাটগ্রাম বন্দর নগরীতে অ্যাপোলো হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সংস্থাটি সময়মতো আইপিও করতে না পেরে তারা চ্যাটগ্রামে নতুন হাসপাতালের অবকাঠামো তৈরি করতে ঋণ ও নিজস্ব তহবিলের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
এসটিএস গ্রুপের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, রোড শো’র পরে সংস্থাটি আইপিও এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দুটোই বেছে নেয়। পাশপাশি নতুন হাসপাতালের কাজ শুরু করার কথা রয়েছে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং স্থানীয় বাজার দ্রুত বাড়ছে বলে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়ছে। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের দ্বীতিয় বৃহত্তম সিগারেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপকে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের মাধ্যমে কিনে নেয় জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল। জাপান টোব্যাকো আন্তর্জাতিক বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি তামাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের একটি। যারা এখন বাংলাদেশেও ব্যবসা করছে। এর আগে জাপান টোব্যাকো রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে স্থানীয় কয়েকটি সিগারেট কোম্পানি কিনে ব্যবসা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।