Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখলদারদের নতুন করে তৎপরতা

নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

উচ্ছেদ অভিযান শেষ দুই মাস আগে। এখনো নদীতীর উন্নয়নের কাজ শুরু না করায় বুড়িগঙ্গার তীরের অনেক স্থানেই নতুন করে দখলদারদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা নিয়মিত মনিটরিং না থাকলে আবারো দখল হবে বুড়িঙ্গার পাড়। এ দিকে উচ্ছেদ করা স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ না সরানোয় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। ঢাকার নদীগুলোর পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন, ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু নদীর জায়গা উদ্ধারের পর পুরো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় আবারও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। উচ্ছেদের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখানো কাজে অগ্রগতি সামান্য।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, নদীর দুই তীরে খুঁটি বসানোর কাজ শেষ করে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, স্থায়ীভাবে নদী দখলমুক্ত করার স্বার্থে এলাকাবাসীকে সাময়িক কষ্ট মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত করতে চলতি বছরের শুরুর দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। ছয় মাসের অভিযানে ৭২৫টি পাকা, ৯৮৬টি আধা পাকা স্থাপনাসহ প্রায় পাঁচ হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ ও ১২১ একর জমি উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ১০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জরিমানাসহ প্রায় ১১ কোটি টাকা নিলাম বাবদ আদায় করা হয়। উচ্ছেদের পর নদীতীরে স্থায়ী ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা থাকলেও তা এখনো শুরু হয়নি। এই সুযোগে অনেক স্থানেই অস্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে দেখা গেছে। কামরাঙ্গীরচরের এই স্থানে ছয় মাস আগের অভিযানে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমানে সেখানে পিকআপ ও রিকশার গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। আবার নদীর দুই পাড় ধরে এভাবেই পরে রয়েছে ভাঙা বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। ধুলাবালি আর কংক্রিটের স্তূপের কারণে রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের। রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে নদীর জমি সম্পূর্ণভাবে দখলমুক্ত থাকবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা।

ঢাকার নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছিল সবচেয়ে জটিল কাজ। পদে পদে বাধা এসেছে। তারপরও এই কাজ বেশ দ্রুতগতিতে গুছিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু এরপর কাজের গতি থেকে গেছে। দুই মাস ধরে তেমন কোনো কাজের অগ্রগতি নেই। গত জানুয়ারিতে শুরু হয় ঢাকার নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদ-নদীর পাড়ের অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। গত ৬ জুলাই স্থায়ী সীমানাখুঁটি বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। ওই দিন কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে নদীর পাড়ে সীমানাখুঁটি বসিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে উদ্বোধনের পরদিন থেকে ওই কার্যক্রম আর সামনে এগোয়নি।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কামরাঙ্গীরচরের মুনসুরবাগের যে অংশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুঁটি বসিয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন, তা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সীমানাখুঁটির রডগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। রডগুলো উন্মুক্ত থাকার কারণে যেকোনো সময় সেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাজধানীর চারপাশে নদীর পাড় ঘুরে আর কোথাও সীমানাখুঁটি বসানোর কার্যক্রম নজরে পড়েনি।

উচ্ছেদ ও সৌন্দর্য বর্ধনের দায়িত্বে আছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষা মৌসুম হওয়ার কারণে নদীতে পানির প্রবাহ বেশি। তাই সীমানাখুঁটি বসানোর কাজে দেরি হচ্ছে। আর বিদেশ থেকে উন্নতমানের যন্ত্র আনতেও সময় লাগছে। এ ছাড়া যে স্থানে সীমানাখুঁটি বসানো হবে, তা চিহ্নিত করতেও কিছুটা সময় যাচ্ছে। তাই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্য (অর্থ) মো. নুরুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ-নদীর তীরে প্রায় ৫২ কিলোমিটার এলাকায় সীমানাখুঁটি স্থাপন, হাঁটার পথ, জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ যৌথ জরিপের মাধ্যমে নদীর যে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে, তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩টি পয়েন্ট বুঝিয়ে দেয়া হয়। আরও কিছু পয়েন্ট দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুব-উল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের ধীরগতি কম নয়। প্রকল্প অনুমোদনের পর নকশা, ডিপিপি তৈরি, দরপত্র আহ্বানসহ আনুষঙ্গিক কাজে তাদের প্রায় এক বছর সময় লেগেছে। চলতি মাস থেকে সীমানাখুঁটি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী নভেম্বর থেকে বাকি কাজগুলোও শুরু হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে ৮৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি নতুন কাজ যুক্ত হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট দফতরে মোট ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীতীরে ১০ হাজার ৮২০টি সীমানাখুঁটি বসানো হবে। এর মধ্যে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় বসানো হবে ৩ হাজার ৮০৩টি খুঁটি। বাকি সীমানাখুঁটি টঙ্গী বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সীমানায় বসানো হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি পার্ক করারও পরিকল্পনা। এর মধ্যে সদরঘাট ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এক কিলোমিটারজুড়ে পর্যটন পার্ক, আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন, মিরপুর বড় বাজার ও টঙ্গী বন্দর এলাকায় ইকোপার্ক করা হবে। এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচর রায়েরবাজার খাল থেকে বছিলা পর্যন্ত আট কিলোমিটার বুড়িগঙ্গা নদীর উভয় তীরে হাঁটাপথ নির্মাণ ও নদীর পাড়ে বাঁধ দেয়া হবে। মিরপুর বড় বাজার এলাকায় তুরাগ নদের উভয় তীরে আট কিলোমিটার, টঙ্গী এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার, ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে পাঁচ কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের ডিপিডিসি এলাকায় ছয় কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায় ছয় কিলোমিটার হাঁটার পথ নির্মাণ করা হবে। হাঁটার পথ নির্মাণের পাশাপাশি এসব এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, বনায়ন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ