Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রোহিঙ্গা ও এনজিও বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতা

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো দেখাশুনাকারি কর্তৃপক্ষ এনজিও ব্যুরো, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনারের অফিস, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বপালনকারি সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সমন্বয়হীনতায় নানা ধরনের বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে।

এতে করে একদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা-স্থানীয় জনসাধারণ ও এনজিও গুলোর মধ্যে মারাত্মক ভুুল বোঝাবুঝি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে এই সমন্বয়হীনতায় দেশে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে সেনাবাহিনীর গণহত্যার মুখে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন অবস্থান করছে। সরকার মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া ছাড়াও শিক্ষা, চিকিৎসাক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এসব মানবিক সেবায় বাংলাদেশ সরকারের পাশে এসে দাড়িয়েছে ১৫০টির মত দেশী বিদেশী এনজিও।

শুরুতেই এ মানবিকতার আড়ালে কিছু কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দেয়ার ও প্রত্যাবাসন বিমুখ করার। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার দ্বিতীয় বর্ষ উদযাপন কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা সমাবেশ করলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এরই প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও কাজকামে নজরদারি বাড়ায়।

গত মাসের শেষের দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আপত্তিকর, উস্কানিম‚লক কর্মকান্ড ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিমুখ করার অভিযোগে ৪১ এনজিওকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহারের কথা। কিন্তু এ ঘোষণা সম্পর্কিত কোন তথ্য জেলা প্রশাসন-উপজেলা, পুলিশ, আরআরসি অফিস ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বপালনকারি কারো কাছে না থাকায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। খবর নিয়ে জানা গেছে তালিকাভুক্ত ওই ৪১ এনজিওর অনেকগুলোই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে গত ২৫ আগস্ট দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দিনক্ষণ ঠিক হলেও আকস্মিকভাবে এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সময় হয়নি বলে ৬১ এনজিওর বিবৃতি দেয়া নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। চীন মিয়ানমারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সরকার প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমন্বয়হীনতা বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনার পর সরকার আরআরসি এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত কয়েকজন সিআইসিকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। নতুন আরআরসি ও সিআইসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে এনজিও সংস্থা মুক্তির স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য দা, ছুরি, কুড়াল ও বেলচার মত প্রয়োজনীয় সামগ্রী উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার উখিয়ায় শেড নামের একটি এনজিও সংস্থার অফিস থেকে কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য এ ধরনের দা, ছুরি, কুড়াল ও বেলচা উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন। উখিয়া উপজেলা প্রশাসন এগুলোকে স্থানীয় অস্ত্র বলে জানালে স্থানীয় জনসাধারণ এবং সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এতে স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। অথচ এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বিত বক্তব্য দিলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হতনা।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এনজিও সংস্থা শেড পরিচালক ওমারাও চৌধুরীর লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাদের অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া দা, ছুরি, কুড়াল ও বেলচা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য অনুমোদিত প্রয়োজনীয় সামগ্রী বলে জানালে সন্দেহের নিরসন হয়।

সচেতন মহলের মতে, সব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নয়। একইভাবে সকল এনজিও সংস্থা ও সরকারবিরোধী এবং প্রত্যাবাসনবিরোধী কাজে জড়িত না। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সমন্বয়হীনতায় যে মারাত্মক বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে তা নিরসন হওয়া দরকার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ