Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উন্নয়ন বিড়ম্বনায় সিলেট নগরবাসী

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ চলছে সিলেট নগরীতে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাস্তব চিত্রের সুবিধাভোগের আগেই সীমাহীন বিড়ম্বনায় শিকার গোটা নগরবাসী। নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচলের অধিকার হরণ করে উন্নয়নযজ্ঞের বেসামাল পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের জনবান্ধবহীন মানসিকতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। উন্নত বিশ্বে উন্নয়ন কর্মের পূর্বে নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাফেরার বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করে দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। ব্যতিক্রমের কোন সুযোগ নেই, একটু ব্যতয় হলে ব্যর্থতার দায় নিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু সিলেট নগরীর উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এখন যেমন খুশি তেমনভাবেই চলছে। ব্যর্থতা বা জবাবদিহিতার কোন তোয়াক্কাই যেন নেই কর্তৃপক্ষের।

নানা বিচারে সিলেট নগরীর গুরুত্ব অশেষ। প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় থাকে এ নগরীতে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষের হরহামেশা উপস্থিতি লেগেই আছে বিশেষ করে শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজার ঘিরে। স্বাভাবিক এ চিত্রের বাস্তবতাকে আমলে না নিয়ে, উন্নয়নযজ্ঞের নামে ব্যাহত করা হচ্ছে নাগরিক অধিকারকে। রাস্তা প্রশস্তকরণ, কোথাও ড্রেন নির্মাণ, ছড়া-খাল উদ্ধার, খনন ও সংস্কার সব কাজই চলছে এক সাথে। এছাড়াও চলমান উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন সঞ্চালন, বাস টার্মিনাল ও ডাম্পিং গ্রাউন্ড উন্নয়ন, সুইপার কলোনি নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন এবং নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ। সব মিলিয়ে সিলেট নগরীতে বর্তমানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ এখন যেন গলার কাঁটা নগরবাসীর।

এর মূলে রয়েছে ঠিকাদারদের গাফিলতি ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের তদারকির ব্যর্থতা। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব উন্নয়ন কাজ সম্পন্নে অনিশ্চয়তাসহ নগরবাসীর দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হয়ে উঠছে। বৃষ্টিপাতের কারণে কাজে ধীরগতির কথা স্বীকার করে ও আবহাওয়ার চিরায়ত এ রূপ মোকাবেলা করে নগরবাসীকে কিভাবে দুর্ভোগমুক্ত রাখা যায় এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই তাদের।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নেয়ার কাজ শুরু হয়। গত ৬ মাসেও শেষ হয়নি লাইন টানার কাজ। ফলে দীর্ঘ এই সময় ধরে খোঁড়াখুড়ির কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া নগরীর ব্যস্ততম জিন্দাবাজার, বারুতখানা ও মজুমদারিসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে প্রায় ৬ মাস ধরে রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। রাস্তার উপর নির্মাণ সামগ্রী রাখায় এখন গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকায় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কার কাজও বর্ষার আগে শেষ করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন।

নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় ভারত সরকারের অর্থায়নে প্রায় এক বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল নগরীর ধোপাদিঘী সংস্কার ও চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর সিকিভাগ কাজও শেষ হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করায় এ কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি’র আওতায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন, ৬০ কোটি টাকায় দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে ডাম্পিং ইয়ার্ড উন্নয়ন, ৩০ কোটি টাকায় রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়নের কাজ চলছে। ধোপাদিঘী সংরক্ষণ, চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নগরীর চারাদিঘীরপাড়ে ৬ তলা স্কুল ভবন নির্মাণ ও কাস্টঘরে ৬ তলা সুইপার কলোনি নির্মাণের জন্য ভারতীয় সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু এক বছরেও এই কাজের সিকিভাগও শেষ হয়নি। ছড়া ও খাল সংস্কার ও খনন প্রকল্পের জন্য ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও বন্ধ রয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে রাস্তা, ড্রেন ও ডিভাইডার নির্মাণ এবং জলাশয় সংরক্ষণের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে বরাদ্দ দেয়া হয় একশত কোটি টাকা। কিন্তু সেই কাজও চলছে চম্বুগতিতে।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, নাগরিক সুবিধার জন্যই উন্নয়ন কিন্তু উন্নয়নের নামে নগরজীবন বিষিয়ে তোলার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে সংশ্লিষ্টদের চরম ব্যর্থতা। জবাবদিহিতার মানসিকতা না থাকায়, এহেন পরিস্থিতিতে জনগন যেন এখন অসহায়।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করায় এহেন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়ছে নগরবাসী। সেই সাথে কর্মযজ্ঞের জনবান্ধব অভিজ্ঞতা গ্রহণের ব্যর্থতা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জবাবদিহিতার প্রতি অবজ্ঞা।
নাগরিক দুর্ভোগ ও উন্নয়ন কাজে ধীরগতি কথা স্বীকার করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজর রহমান বলেন, দক্ষ ও পর্যাপ্ত শ্রমিক সঙ্কটসহ বৈরী আবহাওয়া উন্নয়ন কর্মকান্ডের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ