Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তালপাতার পাখা হারিয়ে যেতে বসেছে

অনেকেই ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছে

মো. নাজমুল হেসাইন তালুকদার, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

‘তোমার হাতপাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে’ জনপ্রিয় এই গানটি হয়তো ভুলে যাননি। কিন্তু সত্যিকার তালপাতার পাখা হারিয়ে যেতে বসেছে। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক এ যুগে তালপাতার হাতপাখার পরিবর্তে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার বেড়েছে। সে সঙ্গে কমেছে তালপাতার পাখার চাহিদা।
তালপাতার হাতপাখা বাঙালি সংস্কৃতির একটি প্রাচীন ঐতিহ্য এটি। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতিতে এ পাখার একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। তারপরও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় তিন শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে স¤পৃক্ত।

এক সময় নতুন জামাই কিংবা বাড়ির অতিথির জন্য ঘরে রকমারি পাখা রাখা হতো। বিভিন্ন ধরনের হাতপাখা থাকলেও তালপাখা ছিল প্রথম সারিতে। চারদিকে রঙিন কাপড়ে বাঁধানো পাখা দিয়ে অতিথিকে সম্মান জানানো বাঙালির আতিথিয়েতার একটি বিশেষ দিক। শুধু তাই নয়, তালপাতা সাহিত্যেরও একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। হাতপাখার নতুন পাতায়, তালের পাখায় মধু মাখা ইত্যাদি নানা ধরণের লোক সাহিত্য এখনো শোনা যায় মানুষের মুখে মুখে। এসব এখন বিলুপ্তির পথে।

রায়গঞ্জ উপজেলার পাইকড়া হিন্দু পাড়ার ৫০টি পরিবারের প্রধান পেশা তালগাছের কঁচিপাতা থেকে হাতপাখা তৈরি। যা স্থানীয় ছোট বড় ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে চলে যায় রায়গঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গ্রামে ঘুরে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এখন চলছে ব্যস্ততা। ভাদ্র মাসের তালপাকা গরমে হাতপাখার চাহিদায় বেড়ে যায়। তবে বছরের অধিকাংশ সময়ই তাদের বেকার থাকতে হয়। যে কারণে ইতোমধ্যেই অনেকেই পুরানো পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।
দাস পাড়ার ধাঞ্চীরানী বলেন, লেখাপড়া ও ঘরের কাজ সেরে প্রায় সারাদিনই ব্যস্ত থাকি পাখা তৈরিতে। প্রতিদিন অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি পাখা তৈরি করা যায়। আর বিক্রির টাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে বাকি টাকা সংসারে লাগে। তাপসী নামে আরেকজন জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে পরিবার হাতপাখা তৈরি করে থাকে। এটিই তাদের একমাত্র পেশা। আর এ পেশার উপর নির্ভর করেই চলছে তাদের জীবন।

দেব শঙ্কর জানান, তাল গাছের কঁচিপাতা সংগ্রহ করে পানিতে ভিজিয়ে শুকানোর পর পাখা তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে তালগাছের সংখ্যা কমে গেছে। এতে করে পাতা সংগ্রহ কষ্টকর। এক সময় এসব পাতা এমনিতেই সংগ্রহ করা গেলেও এখন প্রতিটি পাতা ৫ টাকা দরে গাছের মালিকের কাছ থেকে কিনতে হয়। ফলে এখন পাখা তৈরির খরচ বেড়ে গেছে।

ঘরে ঘরে বিদুৎ। এছাড়াও সৌর বিদুৎ গ্রাম অঞ্চলের পৌঁছে গেছে। এতে করে হাতপাখার ব্যবহারও কমেছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও বেঁচে থাকার তাগিদে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। আর যারা এখনো এ পেশাকে আকড়ে আছেন তাদের পক্ষেও বেশিদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাতপাখার শিল্পী নিখিল বিশ্বাস বলেন, সব ধরণের জিনিসের দাম বাড়লেও সেই তুলনায় হাতপাখার দাম বাড়েনি। তালপাতার পাখা তৈরিতে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী তাল গাছের ডাগুরসহ পাতার দরকার। সেই ডাগুরসহ পাতা শুকিয়ে গোলাকার আকৃতিতে কাটার পর ছেটে প্রয়োজন মাফিক বাঁশের শলাকা ও বাতা সেলাই করে আটকে পাখা তৈরি করা হয়।

এই হাতপাখা দৃষ্টি নন্দন করতে রঙ দিয়ে নানা ধরনের চিত্রাঙ্কন করা হয়। বর্তমানে তালপাতার পাখার চাহিদা কমে গেছে। আর পর্যাপ্ত তাল পাতাও পাওয়া যায় না। তাই এখন এ ব্যবসা বিলুপ্তির পথে। উন্নত প্রযুক্তির যুগে মানুষ আয়েসে থাকতে পারলে কাহাতক আর কষ্ট করবে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ