Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্লাংক চেক দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে যত খুশি টাকা লিখে নাও

সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম

‘রাইন’-এর আদলে বাংলাদেশেও নদীর এক পাশে ট্রেন অন্য পাশে গাড়ি চলবে

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, নানা ধরনের উন্নয়ন কাজ ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকেব্ল্যাংক চেক দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, সংস্থাটি বলেছে- প্রয়োজনমতো যত খুশি টাকা লিখে নাও। একই সঙ্গে বাংলাদেশে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আর কোনো লুকোচুরি থাকবে না।
গতকাল রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর দফতরে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ-ভুটান) মার্সি মিয়াং টেম্বনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এসব কথা জানান। এর আগে একই স্থানে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় আমাদের অনেকগুলো চলমান প্রকল্প রয়েছে, এগুলো আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করব। সম্ভাবনাময় খাতগুলো নিয়ে কাজ করার প্রতি বিশ্বব্যাংক গুরুত্বারোপ করেছে। তার মধ্যে আমাদের নদীপথ অধিক কার্যকর করার বিষয়টি অন্যতম। এটির মাধ্যমে কম খরচে ও সহজে অধিক পণ্য পরিবহন সম্ভব। সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশ্বব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ খাতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে প্রকল্প তৈরি ও অর্থায়নে প্রস্তুত। যত অর্থের প্রয়োজন হোক না কেন তা দিতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক। সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের পরমর্শও নেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের ৮৮ শতাংশ বøু-ইকোনমি। সম্ভাবনাময় এই বøু-ইকোনমি খাতেও কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ডেল্টা প্ল্যান প্রসঙ্গে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নেদারল্যান্ডসের পাশাপাশি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক এগিয়ে আসবে। এ খাতে অর্থ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে। এতে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। একই সঙ্গে ডেল্টা প্ল্যানে যদি ভারতও আসতে চায়, তবে স্বাগত জানাব।
সড়ক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবে। বাংলাদেশের সড়ক উন্নয়নে যত টাকার প্রয়োজন তত টাকা দেবে। সড়কে বাস-বে ও সড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগারসহ নানা উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। এসব দেখে প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক।
নতুন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশের বিষয়ে সংস্থাটির ইতিবাচক ধারণা হয়েছে। আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্থাটি অর্থায়ন করতে উন্মুখ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ-ভুটান) মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, বাংলাদেশ অকল্পনীয় উন্নতি সাধন করেছে, ২০০৭ সালে আমি যখন প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলাম তখনকার বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ তো আমি চিনতেই পারিনি। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সুবিধাসহ আর্থিক বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশ্বব্যাংক অত্যন্ত জোর দিচ্ছে এবং বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হাডিন শেফার ও জাতিসংঘের সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র চলতি মাসের ২৩-২৪ তারিখে এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন। সড়ক নিরাপত্তায় বাংলাদেশকে একটি মডেল দেশ হিসেবে দেখতে চায় বিশ্বব্যাংক। নদী, পানি ও বøুু-ইকোনমিতে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। মূলত আমি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ব্র্যান্ডিং করতে এসেছি। বøু-ইকোনমির ৮৮ শতাংশ কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। আসন্ন বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় আমি বাংলাদেশের অজনা সাফল্যের কাহিনী বিশ্ব দরবারে তুলে ধরব এবং বাংলাদেশের জন্য সাধ্যমতো আইডিএ ফান্ড প্রাপ্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমির সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু জাপান এবং অন্যতম বড় উন্নয়ন-সহযোগী হলো জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। অর্থমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে জাপান। এ ক্ষেত্রে তারা পাশে থাকতে চায়। একই সঙ্গে নদীর মধ্যে যে সব সম্পদ আছে তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে জাপান। আর তাই বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা করা হবে। নদীগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে কাজে লাগানো হবে। তিনি বলেন, জার্মানির বন শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অনন্য সুন্দর এক নদী ‘রাইন’। এই নদীর এক পাশে ট্রেন অন্য পাশে গাড়ি চলে। রাইন নদীর আদলে বাংলাদেশের নদীগুলোর পাড় বেঁধে দিয়ে এক পাশে ট্রেন এবং অন্য পাশে গাড়ি চালানো হবে। নদীর পলিগুলোকে কাজে লাগানো হবে। একই সঙ্গে নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অধিক অবদান রাখা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তাদের ব্যাপক আশা রয়েছে। মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরবর্তী ধাপে এটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে। নেদারল্যান্ডসের পাশাপাশি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করবে জাপান। আমাদের আরো অনাবিষ্কৃত সম্ভানাময় খাতগুলোসহ বিশাল সমুদ্রের বিপুল সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে সে বিষয়েও তারা খুবই আগ্রহী। একই সঙ্গে আমাদের যে ডেল্টা প্লান জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে আমাদের রক্ষা করবে, এই প্লানের সঙ্গে জাপান-জাইকা সম্পৃক্ত হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
লবণের উন্নয়নে জাপান এগিয়ে আসবে জানিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মাতারবাড়ীতে অত্যাধুনিক লবণ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করবে জাপান। একই সঙ্গে লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে রফতানিতেও অবদান রাখবে।
জাপানে জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স¤প্রতি জাপান সফরে এ বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের অর্থমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। জাপানে জনবল পাঠানোর বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। জাপানিরা খুবই শান্তিপ্রিয় জাতি। তারা খুব জোরে কথা বলা পছন্দ করে না। সুতরাং এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে জাপানে লোক পাঠানো হবে। জাপানে লোক পাঠানোর জন্য ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের যে সম্ভাবনাময় খাতগুলো এখনো আমরা ওইভাবে ব্যবহার করতে পারছি না সে খাতগুলোসহ, বিশাল সমুদ্রের বিপুল সম্পদের যে সম্ভাবনা রয়েছে সে বিষয়েও তারা খুবই আগ্রহী। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত জাইকা। এছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক খাতের অটোমেশন ও ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করবে তারা। যার মাধ্যমে আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে অটোমেটেড হবে, পাশাপাশি ব্যাংক খাত, ইন্স্যুরেন্স ও পুঁজিবাজার অটোমেশনে চলে আসবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাপান বাংলাদেশ নিয়ে বেশ আশাবাদী। জাপান মানে বাংলাদেশে কোনো বিষয়ে ফেল করবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার নিজস্ব গতিতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারা এবং আশপাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের আকর্ষণীয় এলাকা।
সাক্ষাৎকালে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি বলেন, জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে রক্ষা করবে, এই প্লানের সাথে জাপান-জাইকা সম্পৃক্ত হবে। মাতারবাড়ীতে অত্যাধুনিক লবণ উৎপাদন কারখানা স্থাপন, ফল প্রক্রিয়াতকরণ করে রফতানি, বিমানবন্দর, মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পে জাপান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। জাপানের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশের অগ্রগতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ