পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যে কোনো সময় ঘটতে
পারে বড় দুর্ঘটনা
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার সেই ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন মালিক পক্ষ। ওই ভবনটি সংস্কার করে নতুন করে ভাড়া দেয়া হলে যে কোনো সময় ভেঙে পড়াসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধে সংস্কার কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও থেমে নেই ভবন মালিকের দু’ছেলে হাসান ও সোহেল। ছয় মাসের মাথায় সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তারা। আর মুক্তি পেয়েই তারা আগুনে পোড়া পরিত্যক্ত সেই ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এলাকাবাসী কোনোভাবেই ভবনটি সংস্কার করতে দিতে চান না।
এলাকাবাসীর দাবি, পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হোক। এ ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশনের জোরালো ভূমিকা দেখতে চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
ওয়াহেদ ম্যানশন সংস্কারের বিষয়ে রাজউকের অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান জহির সাংবাদিকদের জানান, ভবনটিতে কেমিক্যাল থাকায় আগুন লাগার পর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে ভবনটির। সেটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি। এরপরও জানতে পেরেছি সেখানে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে আমরা তদারকিতে আছি, যেন কেউ সংস্কার কাজ করতে না পারে। ভূমিকম্পসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চূড়ান্তভাবে ভবন ব্যবহারের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকবে।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভবন সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে। আর স্থানীয়রা জানালেন, এর আগে একাধিকবার তারা সংস্কারের উদ্যোগ থামিয়েছেন। এবার মালিকরা জামিনে বেরিয়ে আসার পর তাদের থামানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তারা। এরই মধ্যে ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার ১০টি দোকান নতুন করে সিমেন্ট, বালু ও ইট দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। দোকানও বসেছে কয়েকটি। ভেতরের দোকানগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজও চলছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলার একটি অংশের দেয়াল বিস্ফোরণে ছিটকে গিয়েছিল সেই অংশ সংস্কার করার জন্যও রাখা হয়েছে বাড়তি ইট।
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ ও আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক হাসান ও সোহেল জেলে যাওয়ার পর সোহেলের শ্যালক রুবেল গত জুন মাসের দিকে ভবনটি সংস্কারের কাজ শুরু করে। এতে এলাকাবাসী প্রথমে বাধা দিলে তারা সিটি করপোরেশনের একটি অনুমতির কাগজ দেখিয়ে সংস্কার কাজ চালিয়ে যায়। পরে ওই কাগজটি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি স্থায়ীভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বুয়েটের টিম সরেজমিনে আসবে। সেজন্য ভবনের পোড়া জিনিসপত্র পরিষ্কার করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছিল। অথচ সেটি দেখিয়েই তারা সংস্কার কাজ শুরু করে। এলাকাবাসী বিষয়টি রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে অবহিত করলে রাজউকের পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কার করতে দিতে চাই না। ভবনটি এখনই নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। আর প্রাণহানি চাই না আমরা।
ওয়াহেদ ম্যানশনের বিপরীত দিকের পরিত্যক্ত ভবন রাজ্জাক ম্যানশনের নিচে অস্থায়ীভাবে ফলের দোকান বসিয়েছেন আবুল কালাম। আগে ওষুধের ফার্মেসির সামনেই ভ্যানে ফল বিক্রি করতেন। আগুনের ঘটনার দিন বিকেলেই গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে গিয়েছিলেন। যার কারণে বেচে গিয়েছিলেন। আগুনের ঘটনার কয়েক মাস পর তিনি রাজ্জাক ম্যানশনের পরিত্যক্ত দোকান পরিষ্কার করে অস্থায়ী দোকান শুরু করেন।
তিনি বলেন, রাজ্জাক ম্যানশন ভেঙে নতুন করে ভবন করবেন বলে জানিয়েছেন মালিক। তাই এখানে আপাতত আছি। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশন বারবার সংস্কার করার পাঁয়তারা চলছে।
ভবন মালিক সোহেলের শ্যালক রুবেল সাংবাদিকদের জানান, আগুনের কারণে ওয়াহেদ ম্যানশন শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হয়নি, আশপাশের অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদের দক্ষিণ পাশের যে দোতলা ভবনটি ছিল, সেটিও পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটাই সংস্কারের পর এখন ভালো ভবনে পরিণত হয়েছে। আর আমরা করলেই সমস্যা? এটা ঠিক না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, আদালত হাসান ও সোহেলকে ২১ আগস্ট জামিন দেন। গত ২২ আগস্ট তারা মুক্তি পান জেল থেকে। গত ২৯ আগস্ট আদালতে তাদের হাজিরা ছিল। আদালতে তারা হাজিরাও দেন। তবে তারা বের হয়ে ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানি না।
উল্লেখ্য, গত ২১ ফেব্রæয়ারি রাতে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে নির্মমভাবে মারা যান যায় ৭১ জন। এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজউক, আইইবি, বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও বুয়েটের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশে ওয়াহেদ ম্যানশন ও রাজ্জাক ম্যানশনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।