পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আশূরা অর্থ দশম। বিশেষ করে মুহাররম মাসের ১০ তারিখকেই আশূরা বলা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এই মুহাররমের দশ তারিখে। এর অন্যতম হচ্ছে ফেরাউন ও তার বাহিনীর কবল থেকে মূসা (আ.) ও সঙ্গীদের পরিত্রাণ। এ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত ঘটনা হচ্ছে-
ফিরআউন ছিল মিসরের ক্বিবতী বংশের শাসকদের উপাধি, আর ক্বিবতীরা ছিল মিসরের আদী বাসিন্দা। তারা সম্রাট বংশীয় হওয়ার কারণে শাম থেকে আগত সুখী-স্বচ্ছল বনু ইসরাঈলদের হিংসা করতে থাকে। তাছাড়া এই বহিরাগত ক্ষুদ্র দলটি নবী বংশ ও তাদের সুনাম সুখ্যাতিও সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসক দল ক্বিবতীদের হিংসার অন্যতম কারণ। সুদ্দী ও মুররাহ প্রমুখ (রহ) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফিরআউন একদা স্বপ্নে দেখে, বায়তুল মাকদিসের দিক হতে একটি আগুন এসে মিসরের ঘরবাড়ি ও মূল অধিবাসী ক্বিবতীদের জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অথচ অভিবাসী বনু ইসরাঈলিদের কিছুই হচ্ছে না। ভীতচকিত হয়ে তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। এরপর দেশের বড় বড় জ্যোতিষী ও জাদুকরদের সমবেত করে তাদের সামনে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বর্ণনা করলো ও এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলো। জ্যোতিষীগণ বললো যে, অতি সত্বর বনু ইসরাঈলদের মধ্যে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে। যার হাতে মিসরীয়দের ধ্বংস নেমে আসবে। -বিদায়া ও নিহায়াহ ১/২২২ পৃ:
মিসর সম্রাট ফিরআউন জ্যোতিষীদের এ কথা শুনে উক্ত সন্তানের জন্ম রোধের জন্য বনু ইসরাঈলদের ঘরে নবজাত সকল পুত্র সন্তানদের হত্যার নির্দেশ দিল। উদ্দেশ্য হলো এভাবে হত্যা করতে থাকলে এক সময় বনু ইসরাঈল যুবকশূন্য হয়ে যাবে। বৃদ্ধরাও মারা যাবে, ফলে মহিলারা সব দাসীবৃত্তিতে বাধ্য হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ফিরআউন ও তার মন্ত্রীবর্গ সারা দেশে একদল ধাত্রী মহিলা ও ছুরিধারী জল্লাদ নিয়োগ করে। ধাত্রী মহিলাগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বনু ইসরাঈলের গর্ভবতী-মহিলাদের তালিকা করত এবং প্রসবের দিন হাযির হয়ে দেখতো যে, নবজাতক ছেলে না মেয়ে। ছেলে হলে পুরুষ জল্লাদকে খবর দিতো। সে এসে মায়ের সামনেই ছুরি দিয়ে ছেলে সন্তানকে হত্যা করে চলে যেত। -তাফসীর ইবনু কাসীর, সূরা কাসাস আয়াত : ৮৯
এমতাবস্থায় মূসা (আ.)-এর জন্ম হলে তার পিতা-মাতা সন্তানের হত্যার আশঙ্কায় দারুণ ভীত হয়ে পড়লেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আ.)-এর মায়ের অন্তরে ইলহাম করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তীতে মূসা (আ.)-কে অবহিত করেন। তিনি বলেন :
‘আমরা তোমার ওপর আরো একবার অনুগ্রহ করেছিলাম। যখন আমরা তোমার মাকে প্রত্যাদেশ করেছিলাম, যা প্রত্যাদেশ করা হয়। এই মর্মে যে, তোমার নবজাত সন্তানকে সিন্দুকে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দাও। অতঃপর নদী তাকে তীরে ঠেলে দিবে এবং আমার শত্রু ও তোমার শত্রু (ফিরআউন) তাকে উঠিয়ে নিবে। আর আমি তোমার ওপর আমার পক্ষ থেকে বিশেষ মহব্বত নিক্ষেপ করেছিলাম তা এজন্য যে, তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।’ -সূরা ত্বহা ৩৭-৩৯
বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র এভাবে বলেছেন :
‘আমরা মূসার মায়ের কাছে প্রত্যাদেশ করলাম এই মর্মে যে, তুমি ছেলেকে দুধপান করাও। অতঃপর তার জীবনের ব্যাপারে যখন শঙ্কিত হবে তখন তাকে নদীতে নিক্ষেপ করবে। তুমি ভীত হয়ো না ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ো না। আমরা ওকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দিবো এবং ওকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করবো।’ -সূরা ক্বাসাস আয়ত: ৭
আল্লাহর এ ওয়াদা মূসা -এর মাকে নদীতে নিক্ষেপ করতে সাহস যোগায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
‘মূসা জননীর অন্তর (মূসার চিন্তায়) বিভোর হয়ে পড়ল। যদি আমরা তার অন্তরকে সুদৃঢ় করে না দিতাম, তাহলে সে মূসার (জন্য অস্থিরতার) বিষয়টি প্রকাশ করেই ফেলতো। (আমরা তার হৃদয়কে দৃঢ় করেছিলাম এ কারণে যে) সে যেন আল্লাহর উপর প্রত্যয়শীলদের অন্তর্ভুক্ত থাকে।’ -সূরা ক্বাসাস আয়াত : ১০
ফিরআউনের নিয়োজিত জল্লাদের হাতে নবজাত সন্তানের নিহত হবার নিশ্চিত সম্ভাবনার ফলে আল্লাহর প্রত্যাদেশ অনুযায়ী পিতা-মাতা তাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে সিন্দুকে ভরে বাড়ীর পাশের নদীতে ভাসিয়ে দিলেন। অতঃপর স্রোতের সাথে সাথে সিন্দুকটি এগিয়ে চললো। ওদিকে মূসা (আ.)-এর বড় বোন তার মায়ের নির্দেশে নদীর কিনারা দিয়ে চলতে লাগলো যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
‘আর সে মূসার বোনকে বলল, এর পেছনে পেছনে যাও। সে দূর থেকে তাকে দেখছিল অথচ তারা তা উপলব্ধি করতে পারছিল না।’ -সূরা ক্বাসাস আয়াত : ১১
এক সময় তা ফিরআউনের প্রাসাদের ঘাটে এসে ভিড়লো। ফিরআউনের পূণ্যবতী স্ত্রী আসিয়া ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাটিকে দেখে অভিভ‚ত হয়ে পড়লেন। ফিরআউন তাকে বনু ইসরাঈলদের সন্তান ভেবে হত্যা করতে চাইলো। কিন্তু সন্তানহীনা স্ত্রীর স্নেহের কারণে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ফিরআউন নিজেও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।
যেমনটি আল্লাহ বলেন :
‘ফিরআউনের স্ত্রী বললো (শিশুটি) আমার ও তোমার নয়নের প্রশান্তি। একে মেরো না। সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করব। আসলে তারা (এর পরিণাম) বুঝতে পারেনি।’ -সূরা ক্বাসাস আয়াত: ৯
এবার শিশু মূসা ফিরআউনের স্ত্রীর কোলে পুত্রস্নেহ পেতে শুরু করল। অতঃপর বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য রাণীর নির্দেশে বাজারে বহু ধাত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু শিশু মূসা কারোই বুকে মুখ দিচ্ছিল না, আল্লাহ বলেন :
‘আমরা পূর্ব থেকেই অন্যের দুধ খাওয়া থেকে মূসাকে বিরত রেখেছিলাম।’ সূরা কাসাস আয়াত ১২ এমন সময় মূসার বোন বললো, আমি কি আপনাদের এমন এক পরিবারের খবর দিব যারা আপনাদের জন্য এ শিশুকে লালন-পালন করবে। আর তারা এর শুভাকাক্সক্ষী।’ -সূরা কাসাস আয়াত ১২
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।