Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বে সেরা বাংলাদেশ : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সেরাদের সেরা বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ ২৬টি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১০ বছরে জিডিপিতে কারেন্ট প্রাইস মেথডে (চলতি বাজারমূল্য) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বে সবার উপরে।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্যটি অবহিত করেন। গত ২৯ আগস্ট ‘দ্য স্পেক্টেটর ইনডেক্স’ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তথ্যের ভিত্তেতে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়টি তুলে ধরেন। যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শতকরা ১৮৮ ভাগ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে চীন ১৭৭, ভারত ১১৭, ইন্দোনেশিয়া ৯০, মালয়েশিয়া ৭৮, অস্ট্রেলিয়া ৪১ এবং ব্রাজিল ১৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অসামান্য সাফল্যের দেশবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে চলমান অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকলে খুব সহসাই বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও জোরালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। বাংলাদেশের এ অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অর্থনৈতিক খাতে আরও শক্তিশালী অর্জনের মাধ্যমে অচিরেই বাংলাদেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণ করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২০ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮-১৯ ার্থবছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় গত এক দশকে প্রবৃদ্ধির গড় হার এখন পৌনে ৭ শতাংশে উপনীত হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথম প্রবৃদ্ধির হার ‘৬ শতাংশের চক্র’ ভেঙে বের হয়ে আসে। সে বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। পরের দুই বছর তা আরও বাড়ে আর চতুর্থ বছরে গিয়ে ৮ শতাংশের ওপরে উঠে আসে।

সূত্র মতে, বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষান্বিত হারে বেড়েছে। আর দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে, ৮ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি তাই- নির্দেশ করে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ সালে ১০ শতাংশ অর্জন ও ২০৪১ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা, যাতে করে আমরা ওই সময়ে উচ্চ আয়ের দশে পরিণত হওয়ার শক্তিশালী ভিত গড়তে পারি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুতগামী, যা গর্ব করার মতো। কিন্তু টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নজর দিতে হবে। প্রবাসী আয়ের প্রভাবে ব্যক্তি খাতে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সরকারের বাড়তি বিনিয়োগের কারণেই মূলত প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে শিল্পের ভিত্তি বাড়াতে হবে। গড় আয় বাড়লেও প্রকৃত আয় বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে আয় বৈষম্য কমাতে হবে। তারা মনে করেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে, রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ব্যক্তি খাতের উন্নতি নিশ্চিতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। সরকারের ব্যয় নির্বাহ করতে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেও গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ ধারা ধরে রাখা সম্ভব হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা-সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বাংলাদেশের জিডিপি উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা ইতিবাচক। প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি অর্জন আসলেই বিস্ময়কর। যা সবাই স্বীকার করছেন। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে বড় উদ্যোক্তা ও ছোট উদ্যোক্তার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য কমাতে হবে। প্রবৃদ্ধির এই ধারায় গুণগত মান অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের গড় আয় বাড়লেও বাড়েনি প্রকৃত আয়। ফলে আয় বৈষম্য বাড়ছে। যা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। এটি নিঃসন্দেহে গুণগত দুর্বলতা। এ দুর্বলতা কাটিয়ে সমৃদ্ধ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে চ্যালেঞ্জ অনেক। এ ক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাববিদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যা আসলেই চ্যলেঞ্জিং। এই ধারা অব্যাহত রাখতে অর্থনীতির সূচকগুলোকে ঠিক মতো তদারকি করতে হবে। তা না হলে এ ধারার ব্যত্যয় ঘটতে পারে।#



 

Show all comments
  • Mehedi Hasan ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:২৪ এএম says : 0
    ইকোনমি,ফরেন কারেন্সী,জিডিপি,মাথাপিছু আয়,নিজস্ব টাকায় মেগা প্রজেক্ট,মূল্যস্ফিতি টু ঋন প্রবনতা হ্রাস ১টি দেশের বর্তমান-ভবিষ্যৎ দেখায়।আর সে হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ না বরং ভালোর দিকেই এগুচ্ছে-ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mredul Hassain ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:২৬ এএম says : 0
    আপনার কথায় বোঝা যায়,পাঁচ বছর পর মায়ানমার বাধ্য হবে রোহিঙ্গা ফেরত নিতে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাহিয়ান ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:২৭ এএম says : 0
    ধন্যবাদ অর্থমন্ত্রীকে তার নির্লস প্রচেষ্টার জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ