Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

টার্গেট করেই হামলা

পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশবক্সের সামনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নিউমার্কেট থানায় মামলাটি করেন এসআই জহিরুল ইসলাম। মামলা নম্বর-১৩।

অন্যদিকে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। শনিবার মধ্যরাতে জিহাদি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তারা এই দায় স্বীকার করে। সারাদেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশকে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশকে টার্গেট করেই হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি ক্রাইম সিন এবং সিটিটিসি ইউনিট। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও বিষয়টির ছায়া তদন্ত করতে মাঠে নেমেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সায়েন্স ল্যাব মোড়ে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ টার্গেট ছিল বলে জানা গেছে। শনিবার আনুমানিক রাত সোয়া ৯টার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর পরপরই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশপাশের সব সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাই তদন্তাধীন এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত মতামত দেয়া যাবে না। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত বস্তুটি একটি আইইডি (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছিল। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পুলিশকে টার্গেট করে এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি (তদন্ত) মো. শের আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার পর এসআই জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত দেয়া হয়েছে থানার আরেক এসআই মো. আলমগীর হোসেন মজুমদারকে। মামলার তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইইডি (ইম্প্রোভাইজডএক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। এর আগে রাজধানীর মালিবাগ ও গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। তবে হামলার লক্ষ্যবস্তু কারা, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সাইট ইন্টেলিজেন্স জানায়, ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে অত্যাধুনিক আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আইএস। এতে দুই পুলিশ আহত হয়েছে। এর আগে গত ২৪ জুলাই রাতে ঢাকার খামারবাড়ি ও পল্টনে পুলিশ চেক পয়েন্টের সামনে বোমা পুঁতে রাখার দাবি করেছিল আইএস। এরও আগে ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশের তিন সদস্যের ওপর বোমা বিস্ফোরণকারীরা আইএস সদস্য বলে দাবি করে সাইট ইন্টেলিজেন্স।

সন্ত্রাসবাদের সমস্যা বৈশ্বিক মন্তব্য করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঘটনার পরপরই জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের দায় স্বীকার কতটা সত্য তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠনের যোগাযোগ আদৌ আছে কি না, নাকি অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব প্রচারণা, তা জানার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। এসব ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক চক্রান্ত রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সায়েন্স ল্যাবে পুলিশের ওপর ককটেল হামলার ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশের যেকোনো গাড়ি আন-অ্যাটেন্ডেড না রাখাসহ পুলিশের যেকোনো স্থাপনায় প্রবেশকালে সবাইকে বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তল্লাশি করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বলেন, রোববার সকালে পুলিশের সব এসপি, ডিআইজি ও ইউনিট প্রধানদের মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সতর্ক থাকার জন্য।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আহত দু’জন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে রাত সোয়া ৯টার দিকে মন্ত্রীর গাড়িবহর ঘটনাস্থলের সামনেই ছিল। মন্ত্রীও গাড়িতে ছিলেন। তাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়িটি সামনে ছিল। একজন পুলিশ সদস্য প্রটেকশনের গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন। তখনই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।

আহত এএসআই শাহাবুদ্দিন গতকাল জানান, তিনি মন্ত্রীর প্রটোকলে ছিলেন। এ সময় রাস্তায় জট দেখে নেমে সামনে যান। ঠিক সে সময় তার পাশে হঠাৎ একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে তিনি পায়ে আঘাত পান। কিছুক্ষণ আগে মন্ত্রী এসে তাদের দেখে চলে গেছেন।

গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েন্স ল্যাবে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থল পুলিশের সদস্যরা ঘিরে রাখেন। সায়েন্স ল্যাব পুলিশবক্সের ১০ থেকে ১২ গজ উত্তরে আহত পুলিশ সদস্যদের রক্ত পড়ে জমাট বেঁধে আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করেছেন।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী রাতে মুঠোফোনে বলেন, তেজগাঁওয়ের নিজের কার্যালয় থেকে তিনি সায়েন্স ল্যাব মোড় হয়ে সীমান্ত স্কয়ারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে যানজট দেখে প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা এএসআই শাহাবুদ্দিন সেখানে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে যান। তখনই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে।

তিনি বলেন, শাহাবুদ্দিন নেমে ১০০ গজের মতো দূরে গিয়েছিলেন। পুলিশবক্সের ওখানে তখন আরো ৫-৭ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। বিস্ফোরণের আওয়াজ পেলেও সেটা যে ককটেল হামলা, তা তখন বুঝতে পারেননি তিনি। ভেবেছিলেন কোনো গাড়ির চাকা ফেটে গেছে। তাই তার এবং পুলিশের গাড়ি সীমান্ত স্কয়ারের দিকে রওনা হয়। পরে পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে তাকে এই হামলার খবর জানানো হয়।

নিজের প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যকে রেখেই চলে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলছেন, অন্যান্য পুলিশ সদস্য ভেবেছিলেন, তিনি মনে হয় হেঁটেই অনুষ্ঠানস্থলে চলে যাবেন।

আহত পুলিশকে দেখতে র‌্যাবের ডিজি
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সায়েন্সল্যাবরেটরি এলাকায় ককটেল হামলার ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্য শাহাবুদ্দিনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ঢামেকের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের পোস্ট অপারেটিভে থাকা আহত এ এসআই শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেন। একইসঙ্গে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আহত শাহাবুদ্দিনের পায়ে ফ্রাকচার আছে। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ