Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

হিজরী ১৪৪১ সাল শুরু হল। পৃথিবীর ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আল্লাহর নবী (সা.) এর হিজরতকে শুরু ধরে এ হিজরী সন গণনা করা হয়। পৃথিবীর শুরু থেকেই মাস যে বারটি তা কুরআন মাজীদ থেকেই প্রমাণিত। মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আর তা আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এরমধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, সুতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম অত্যাচার কর না।’ সূরা তাওবা, আয়াত : ৩৬

সাহাবী আবু বাকরাহ (রা.) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, বার মাসে এক বছর, তন্মধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস- যুলকাদাহ, যুলহিজ্জা ও মুহাররাম একত্রে এ তিনটি মাস এবং রজব মাস। -সহীহুল বুখারী হাঃ ২৯৫৮

তাই মুহাররাম মাসটি হলো এমন এক সম্মানিত মর্যাদাশীল মাস যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ।
আশুরা কী? : আশুরা শব্দটির বিশেষণ নিয়ে ভাষাবিদগণ বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশের নিকট মুহাররাম মাসের দশম তারিখই হলো আশুরার দিন। ইহা আরবী শব্দ আশারা হতে নির্গত, যার অর্থ হলো দশ। অতএব মুহাররাম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখার নামই হলো আশুরার রোযা। মিরআতুল মাফাতীহ ৭/৪৫ পৃষ্ঠা

আশুরায়ে মুহাররামের রোযা শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য নয় বরং ইহা পূর্ববর্তী যুগেও প্রচলিত ছিল। বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রা.) বলেন : একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আশুরার দিবস সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বলেন : এ দিনে জাহেলী যুগের লোকেরা রোযা রাখত অতএব যে রাখতে চায় রাখবে আর যে ছাড়তে চায় ছাড়বে। -সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৬৪২

সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়িশা (রা.) বলেন : জাহেলী যুগে মক্কার কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোযা রাখত এবং রাসূলুল্লাহও (স.) আশুরার রোযা রাখতেন। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৬৩২

বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : নবী (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে ইয়াহুদ স¤প্রদায় দশই মুহাররামে আশুরার রোযা রাখছে। তিনি প্রশ্ন করলেন : এ কী বিষয়? তারা বলল, এ হলো পবিত্র দিন, যে দিনে আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলকে তাদের শত্রæর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, ফলে মূসা (আ.) সে দিনটি শুকরিয়াস্বরূপ রোযা রেখেছেন (আমরাও তার অনুসরণ করে রাখছি)। নবী (সা.) বললেন : আমি তোমাদের চেয়ে মূসা (আ.)-এর মত রোযা রাখার বেশি অধিকার রাখি, অতঃপর তিনি রোযা রাখেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন। -সহীহুল বুখারী, হাদীস ২০০৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৩০

এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বর্ধিত অংশে বলা হয়েছে যে, আশুরা এমন একটি দিন, যে দিনে নূহ -এর কিশতী জুদী পর্বতে অবতরণ করে ফলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ ঐ দিনটিতে রোযা রাখেন। অতএব প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও উম্মাতের মাঝেও আশুরায়ে মুহাররামের রোযা রাখার ইবাদাত চালু ছিল।

পৃথিবীর ইতিহাসে এছাড়াও মুহাররমের ১০ তারিখ নানা ঘটনা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আর এর ধারাবাহিকতায় শেষ ঘটনাটি ঘটে কারবালা প্রান্তরে। নবী (সা.)-এর দৌহিত্র্য ইমাম হোসাইন (রা.) এদিন শাহাদাতবরণ করেন। বর্তমানে পৃথিবীর ইতিহাসের এদিনের অন্যসব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে হযরত হোসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাত। তবে এ উপলক্ষে শোক পালন করার কোন সুযোগ নেই। মহানবী ৯সা.)এর প্রিয় চাচা আমির হামজাহ (রা.) ওহুদের যুদ্ধে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। মহানবী (সা.) তাঁর চাচার বিয়োগে অত্যন্ত ব্যথিত হন। তবে নিজে কোন ধরনের শোক পালন করেছেন বা কাউকে শোক পালন করতে বলেছেন-এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। শোক পালনের বৈধতা পুরুষের জন্য মাত্র তিন দিন আর নারীর জন্য তার স্বামীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ মাস ১০ দিন। আল্লাহ আমাদের নবী (সা.)-এর তরীকা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার তওফিক দান করুন। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ