Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা

স্বজনদের আহাজারি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

‘ছয় বছর ধরে বাবার ছবি নিয়ে বসে আছি। আর ভালো লাগছে না। কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। আমি বাবাকে ফেরত চাই।’
এমনই ছিল ছয় বছর ধরে নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের নবম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে রাইসা ইসলামের বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হন ২৫ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সুমন। গুম হওয়া সুমনের ছোট মেয়ে ওয়েসতা ইসলাম পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত বাবা কি জিনিস চাই বুঝে উঠতে পারেনি ওয়েসতা। স্কুলে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে তাদের বাবাকে দেখলে একটা শূন্যতা কাজ করে ওর ভেতর। দিনের পর দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। রাইসা বাবার স্নেহ অল্প সময়ের জন্য পেলেও ওয়েসতা একেবারেই পায়নি।

সানজিদা বলেন, সুমনের স্থায়ী নিবাস শাহীনবাগ এলাকায়। কিন্তু র‌্যারের সদস্যরা তাকে তার খালার বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ভাটারা থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। প্রতিদিনই আমরা আশা করে বসে থাকি, কিন্তু সুমন আর আসে না।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যাতে অংশ নিয়েছেন গুম হওয়া অনেকের পরিবারের সদস্যরা। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সদস্য ও ২০১৩ সালে গুম হওয়া ঢাকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী।

শুধু সাজেদুল ইসলাম সুমনই নন। ফ্যাসিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী জাতীয় কমিটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫২৬ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী।

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে কাউছার হোসেনকে (৩৫) সাদা পোশাক পরিহিত ৭-৮ জন র‌্যাবের পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। তারপর এখন পর্যন্ত হদিস মেলেনি তার। গুম হওয়া কাউছারের স্ত্রী মিনু আকতার (২৭) বলেন, সেই রাতে নিজ বাড়ি নাখালপাড়া সি আর মাজারের ঢাল থেকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭-৮ জন সদস্য। পরদিন তেজগাঁও থানায় গেলে জিডি নেয়নি পুলিশ।

কাউছারের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে মিমকে (৯) প্রতিদিনই শোনাতে হচ্ছে নতুন নতুন মিথ্যা কাহিনী। জীবনধারনের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গুম হওয়া কাউছার স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ছিল বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। এছাড়া নিজ ঘরে আরবি পড়িয়ে কিছু টাকা উপার্জন করেন তিনি। ঈদের সময় বিএনপির পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা দেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন গুম হওয়া কাউছারের স্ত্রী।

ছাত্র দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (৩৫) নিখোঁজ অবস্থায় আছেন ২০১২ সাল থেকে। তার স্ত্রী বেবি আকতার (২৮) জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ১২ আগস্ট থেকে নিখোঁজ আরিফুল। রাত দেড়টার দিকে পল্লবী থানার পরিচয়ে মিরপুর ১২ নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। থানায় গেলে গেলে সরাসরি অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। পরে বহু মিনতি করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
যৌথ পরিবারে তিন বোন ও বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন বেবি। তিনি বলেন, মূলত বাবা-মায়ের আয়ের ওপরই চলতে হয়। এছাড়া থ্রি-পিসের একটি ছোট প্রতিষ্ঠানও আছে তার।

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার থেকে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াছ আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াছ, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি, সুমনের মেয়ে রাইসা। আরো বক্তব্য রাখেন ২০১৩ সালের ২৬ এলি গুম হওয়া রনি হোসেনের মা আঞ্জুমান আরা বেগম, ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট গুম হওয়া সাজ্জাদ হোসেনের মা সাজেদা বেগম, ২০১৯ সালের ১৯ জুন গুম হওয়া ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার, তপুর মা সালেহা বেগম, সবুজের মা সাহেদা বেগম, পিন্টুর বোন মুন্নী, পারভেজ হোসেনের শিশুকন্যা হৃদী, নিখোঁজ ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়াসহ আরো অনেকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ