Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইন প্রণয়নে আগ্রহ কম এমপিদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজই হলো আইন-প্রণয়ন করা। এ জন্য তাদের বলা হয় আইন প্রণেতা। তারা এ জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধাও পেয়ে থাকেন। তবে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত আলোচনাতেই সবচেয়ে কম সংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। আইন সম্পর্কিত আলোচনা পর্বে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে অনাগ্রহের বিষয়টি উঠে এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে আইন প্রণয়নের আলোচনায় অংশ নিতে চান না বেশিরভাগ এমপি। এ জন্য দশম সংসদে শুধু কোরাম সঙ্কটে ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে টিআইবি। বিগত দশম জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে ২৩তম অধিবেশনের (জানুয়ারি ২০১৪ থেকে অক্টোবর ২০১৮) ওপর পরিচালিত ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। টিআইবি ধানমন্ডিস্থ নিজস্ব কার্যালয় মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট, ভারতের এমপিরা আইন প্রণয়নে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন। অথচ বাংলাদেশের এমপিরা আইন প্রণয়নে আগ্রহ দেখান না।

টিআইবির গবেষণায় বলা হয় দশম সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে আইন-প্রণয়ন (বাজেট ব্যতীত) আলোচনায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৯৪ জন। তাদের মধ্যে সরকার দলীয় ২৯০ জন সদস্যের মধ্যে ৭১ জন, প্রধান বিরোধী দলের ৪১ জন সদস্যের মধ্যে ১৯ জন এবং অন্যান্য বিরোধী দলের ১৯ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জন আইন প্রণয়নে সময় দেন। গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দশম সংসদের ২৩টি অধিবেশনে আইন প্রণয়ন কাযক্রমে মোট প্রায় ১৬৮ ঘণ্টা ১২ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে। যা অধিবেশনগুলোর ব্যয় হওয়া মোট সময়ের মাত্র ১২ শতাংশ। আইন-প্রণয়ন কার্যক্রম বিল পাসের আলোচনায় সরকারি দল ১১ শতাংশ, প্রধানবিরোধী দল ৬৭ শতাংশ এবং অন্যান্য বিরোধী দল ২২ শতাংশ সময় ব্যয় করেছে।

দশম সংসদে বিলগুলো উত্থাপন বিলের ওপর সংসদ সদস্যদের আলোচনা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি বিল পাস করতে গড়ে সময় লেগেছে ৩১ মিনিট। দশম সংসদে ৭১ শতাংশ বিল পাস হয়েছে এক থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে। অথচ পাসের দেশ ভারতের ১৬তম লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসে গড়ে ১৪১ মিনিট ব্যয় হয়েছে। সেখানে বিল পাসের আগে বিস্তর আলোচনা হয়।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে আইন পাস হওয়ায় সংসদ সদস্যরা আইনগুলো পাসের আগে ভালোভাবে পড়েন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইন প্রণয়নে খুব কম সময় ব্যয় করা হয়েছে। যেখানে একটি আইন পাস হওয়ার আগে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট, ভারতে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা হয়। তিনি বলেন, বিগত দশম জাতীয় সংসদে আশা জাগানিয়ার মতো কিছু দেখা যায়নি। আইন প্রণয়নে এমপিদের আগ্রহ কম।

গবেষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৭০ এর ৬ ব্যত্যয় ঘটিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন কটূক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহার- করা হয়। বেয়াদব, হারামজাদা, লম্পট, কুলাঙ্গার, বেঈমান, মোনাফেক, রক্তচোষা মহিলা ইত্যাদি শব্দগুলো দশম সংসদে অধিক ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবেদনে অষ্টম, নবম ও দশম সংসদের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়, আইন প্রণয়নে অষ্টম সংসদে (২০০১-২০০৫) ৯ শতাংশ সময় ব্যয়, নবম সংসদে (২০০৯ -২০১৩) ৮ শতাংশ ও দশম সংসদে ১২ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। অষ্টম সংসদে এমপিদের গড় উপস্থিতি ৫৫ শতাংশ ও নবম সংসদে ৬৩ শতাংশ ছিল।

সংবিধান অনুযায়ী ন্যূনতম ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না থাকলে সংসদের কোরাম হয় না। কোরাম না থাকলে বৈঠক স্থগিত বা মুলতবি করতে হয়। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশম সংসদে এমপিদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী, ১৩ শতাংশ আইনজীবী, ৭ শতাংশ রাজনীতিক এবং অন্যান্য ২১ শতাংশ (শিক্ষক/চিকিৎসক/অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্ত/গৃহিণী/পরামর্শক ইত্যাদি) ছিলেন।

প্রতিবেদনে সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার জন্য ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে টিআইবি। এর মধ্যে রয়েছে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদ সদস্য আচরণ আইন-প্রণয়ন, বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ইত্যাদি

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, টিআইবির উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ