Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমঝোতায় সম্মেলনের তোড়জোড়

চট্টগ্রাম মহানগর আ.লীগে গ্রুপ-উপগ্রুপ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ২৯ আগস্ট, ২০১৯

সমঝোতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় চলছে। দলের অভ্যন্তরে সমঝোতা ও আপোষ রফার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সম্মেলনের সিডিউল আপাতত স্থগিত হয়ে গেছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক তারিখে সম্মেলনের ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে দলের কেন্দ্র থেকে।

সম্মেলন অনেকটা অকস্মাৎ স্থগিত হওয়ায় নগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যায়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় পর্যায়ে সম্মেলনের আগে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগর ওয়ার্ড পর্যায়ে উক্ত সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগের পুরনো কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাছাড়া ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পদ-পদবির পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছেছে অনেক ধরনের অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ। এ অবস্থায় ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত করে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে রয়েছে দুইটি গ্রুপ। ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপ’ বনাম ‘আ জ ম নাছির গ্রুপ’র মধ্যকার প্রকাশ্যে এবং নেপথ্যে আন্তঃকোন্দল দলের দীর্ঘদিনের সমস্যা। যা এ যাবৎ দফায় দফায় চেষ্টা চালানোর পরেও মিটমাট করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে দুই গ্রুপের স্নায়ুযুদ্ধ দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাছাড়া আসন্ন ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে।

এ দুই গ্রুপ ছাড়াও মহানগরে দলের ভেতরে রয়েছে আরও তিনটি উপগ্রুপ। যা ‘আবদুচ ছালাম গ্রুপ’ (মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান), ‘আফছারুল আমীন গ্রুপ’ (নগর সহ-সভাপতি) এবং সাবেক মন্ত্রী ‘নুরুল ইসলাম বিএসসি গ্রুপ’। তাদের এলাকায় নিজস্ব প্রভাব বলয় গড়ে উঠেছে দলের বিভিন্ন স্তরে এবং অঙ্গ সংগঠনসমূহের মধ্যেও।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের সূচি ঘোষণা করে তাতে প্রথম দিন নগরীর ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড দিয়ে শুরুর কথা ছিল। সেভাবে প্রস্তুতি কার্যক্রমও এগিয়ে চলে। নগরীর বহু পুরনো কমিটি দিয়ে চলা ১৮টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে আগে সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত রেখে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের নির্দেশনা আসে। দলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথেও কথা বলেন।

দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর থেকে সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণার পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সম্মেলন আয়োজন ঘিরে প্রকাশ্যে ও আড়ালে জোরালোভাবে চলে দলীয় পদ-পদবি পাওয়া নিয়ে তদবির। তৃণমূলে কলহ-কোন্দলও বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো কোনো নেতার পাল্লা ভারী করার অপচেষ্টাসহ নানাবিধ অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীরাই পৌঁছাতে থাকেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।

‘আ জ ম নাছির গ্রুপের’ বিরুদ্ধে ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের’ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তাদের অনুসারীদের সরিয়ে দিয়ে একতরফা সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা চলছে। আবার ‘আ জ ম নাছির গ্রুপের’ অনুসারীরা তুলে ধরেন পাল্টা অভিযোগ। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে সম্মেলনকে ঘিরে মূল দল ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে পুরনো কোন্দল ও বিরোধ আরও বেড়ে যায়। এতে করে দলের অবস্থান যাতে দুর্বল না হয় এ উদ্দেশে কেন্দ্র কর্তৃক ২ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় সম্মেলন স্থগিত রাখা হয়েছে।

নগরের ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন ঘিরে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের ভাবনা কী- এ বিষয়ে কথা বলে বেশ কয়েকজন কর্মী তাদের মতামতে জানান, দলের বর্তমান সুসময়ে ও অতীত দুঃসময়ে সক্রিয়, ত্যাগী নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে। কমিটিতে যাতে তারাই স্থান পায় এ বিষয়টি নিশ্চিত থাকা চাই। সরকার এবং দলকে একাকার করে ফেললে সংগঠন সচল থাকবে না।

তাছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ে অঙ্গ সংগঠনসমূহের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগসন্ধানীদের চিহ্নিত করতে হবে। সমঝোতা এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে শিগগিরই চট্টগ্রাম নগর ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দেন তারা।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। এরজন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের তৃণমূল নেতাকর্মীরা এলাকাওয়ারী আগের তুলনায় তৎপর। বিশেষ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৃণমূল কর্মীদের কাছে ঘন ঘন ধরনা দিচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের কদর বেড়ে যাচ্ছে। বিগত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দীন বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমকে হারিয়ে জয়ী হন। এর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৭ বছর মেয়র পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ