Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নির্দেশ

জেলা ও উপজেলায় চিকিৎসকদের যেতে অনীহায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মোট ১২ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭৮ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের সময় বেশ কিছু নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য বিশ্রামাগার রাখতে হবে, সড়কে দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

একনেক সভায় কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল মানিকগঞ্জ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনার একপর্যায়ে ডাক্তারদের সম্পর্কে ক্ষোভ, দুঃখ, বিরক্তি ও অভিমান প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ডাক্তার আমরা দিই, কিন্তু ডাক্তার যেতে চান না। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন, ডাক্তাররা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে প্রাইভেট প্রাকটিস করলে তবুও হয়তো কিছুটা ভালো হতো। যখন চাকরি করেন এক জায়গায়, প্রাইভেট প্রাকটিস করেন আরেক জায়গায় বা পার্টটাইম পড়ান আরেক জায়গায়, তখন তারা হাসপাতালে থাকতে পারেন না। দুঃখের সঙ্গে, বিরক্তির সঙ্গে, ক্ষোভের সঙ্গে এবং অভিমানের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা। আলীকদম-জালানিপাড়া-করুকপাতা-পোয়ামহুরী সড়ক প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫০৯ কোটি টাকা। টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন এখন থেকে যত রাস্তা হবে সব রাস্তার পাশে ড্রাইভার ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। রাস্তার পাশে গাছ লাগাতে হবে। রাস্তায় ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টি রাখা, সড়কের শৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধারা তৈরি করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিক, চালক, হেলপারদের প্রতি মানবিক সুবিধা, সহযোগী হওয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।

ওভারলোডিংয়ের (মাত্রাতিরিক্ত চাপ) বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে গ্রোয়িং ইকোনমি, ওভারলোডিং হয়। ওভারলোডিং সম্পর্কে আমরা সচেতন। ওভারলোডিং কমানোর জেনারেল ইন্সট্রাকশন এসেছে যে, আপনারা যান, খোঁজখবর নেন। আমরা স্বীকার করি, গ্রোয়িং ইকোনমির এই পর্যায়ে ওভারলোডিং পুরোপুরি এভয়েড করতে পারব না। এগুলোকে সহ্য করে মনিটরিং করতে বলেছেন তিনি। নানা সংস্থা কাজ করছে। আপনারা একে অন্যের গায়ে ঠোকর মারবেন না- দেশে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার প্রতি এ আহ্বান রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি টাকা। পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা। কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, মানিকগঞ্জ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইস্টিটিউট, কাজিপুর সিরাজগঞ্জ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা অঙ্গ-দ্বিতীয় পর্যায় (আইএফএমসি-২) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি টাকা। বড়তাকিয়া থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৮৩ কোটি টাকা। খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ইসিবি চত্বর হতে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অন্য নির্দেশনাগুলো তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ড্রেন ওয়াটার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। নিজেরা করেন, বাড়ির আশপাশে খাল-বিল, পুকুর থাকে, সেগুলো পরিষ্কার করে তাতে পানি সংরক্ষণ করেন। কাজে লাগবে। বিশেষ করে আগুন লাগলে দমকল বাহিনী পানি পায় না। এটা খুব বেশি দরকার। এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী উত্তরা ঘনবসতি এলাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে স্থানীয় লোকদের ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। উন্নয়নের ভুক্তভোগী যেন সাধারণ মানুষ না হয় সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেক সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Sheikh Selimuzzaman ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৪০ এএম says : 0
    রিকশা বন্ধ করেন মেইন ঢাকা শহরে, এই রিকশাওয়ালাদের কারনেই ঢাকা শহরে এত জ্যাম। এরা কোন ট্রাফিক আইন মানেনা, উল্টা পথে চলবে, শুধু গরীব বলে এদের সব অপরাধ মাফ করার সুযোগ নাই। প্রত্যেক জায়গায় এই রিকশাওয়ালাদের অনিয়ম। এভাবে ফ্রি স্টাইলে চলতে থাকলে একদিন এই শহরে আর কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে তার গন্তব্যে যেতে পারবে না। স্থবির একটা শহরে পরিনত হবে এই শহর।
    Total Reply(0) Reply
  • Robert Hassan ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৪৪ এএম says : 0
    Government should remove unfit bus. Too many unfit buses on the street, city has large amount of buses than Rickshaw
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৪৫ এএম says : 0
    ডাক্তারদের ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Noor Nabi ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৪৫ এএম says : 0
    পৃথিবীর আজব দেশ।দেখার কেহ নাই!
    Total Reply(0) Reply
  • Jomadder Mizan ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৪৬ এএম says : 0
    দেশে দেখার কেউ নেই! মানুষের জীবনের কি কোনো মূল্য আছে! যে যার ইচ্ছে মত চলছে ...............
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul Islam ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৪৭ এএম says : 0
    আজও কি সড়কে থেমেছে মৃত্যুর মিছিল? প্রশাসন কি আজও পেরেছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে? সড়কে মৃত্যুুর কারণ প্রশাসনের নজরদারিতে গাফলতি এবং অদক্ষ চালক।আমি যখন দেখি প্রশাসন ৫০/১০০ টাকায় একজন লাইসেন্সহীন ও অদক্ষ চালক রোড পারমিট বিহীন গাড়ী পার পেয়ে যায় তখন সেখানে সড়ক দু্র্ঘটনা হবেই। আমারা এসব অনৈতিক ও প্রশাসনের অপকর্মের,এবং আজকের সড়ক দুর্ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫০ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীকে সড়ক ও ডাক্তারদের ব্যাপারে হার্ডলাইনে যেতে হবে বলে আমি মনে করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ