Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

চট্টগ্রামে চালক হেলপারদের কাছে জিম্মি যাত্রীরা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

টেম্পুতে উঠে বসতেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে শিশু হেলপারের ঘোষণা ‘ভাড়া উঠানামা ১৫ টাকা।’ যাত্রীদের প্রশ্ন, পাঁচ টাকা অতিরিক্ত কেন। হেলপারের সাফ জবাব- যারা ১৫ টাকায় যাবেন না তারা নেমে যান। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর রুটের ওই টেম্পু হেলপারের মতো নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটে চালক, হেলপাররাই ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন তারা।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর সরকারিভাবে গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে চালক, হেলপাররাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেই চলেছেন। চট্টগ্রাম নগরী এবং মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটে প্রতিনিয়তই গণপরিবহন ভাড়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডা, হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে সকালে অফিস শুরু আর বিকেলে ছুটির পর ভাড়া নৈরাজ্য চরমে উঠে। নির্ধারিত রুটের বদলে স্বল্প দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি আদায় করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ নগরীতে গণপরিবহনের সঙ্কট দীর্ঘদিনের। সঙ্কটকে পুঁজি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরা পরিবহন শ্রমিকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি। ভাড়া নৈরাজ্যের লাগাম টানতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঝেমধ্যে অভিযানে নামছে। জরিমানা করা হচ্ছে চালক, হেলপারকে। তবে এরপরও নৈরাজ্য থামছে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের শ্রমিক ও কর্মজীবীরা। আয়ের বিরাট অংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে রাস্তায়।

মহানগরীর ৬০ লাখ বাসিন্দার বিরাট অংশ গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। দুটি ইপিজেড ও শিল্পাঞ্চলের কয়েক লাখ শ্রমিক সরকারি-বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, মাদরাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী মানুষের একমাত্র ভরসা গণপরিবহন। নগরীর ১৫টি রুটে যত সংখ্যক গণপরিবহন থাকার কথা তা নেই। ইপিজেডগুলোর জন্য আলাদা বাস থাকার কথা থাকলেও তা নেই।

অফিস শুরু ও ছুটির সময় নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের বিরাট অংশ শ্রমিক পরিবহনে রিজার্ভ ভাড়ায় চলে যায়। ফলে এ সময় গণপরিবহন সঙ্কট আরও তীব্র হয়। আর এ সুযোগে গলাকাটা ভাড়া আদায় করে বাস, টেম্পুর চালক ও সহকারীরা। চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত বাস ভাড়া ৯ টাকা। অথচ অফিস ছুটির পর ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ বাদামতল পর্যন্ত উঠানামা ১৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে। অন্যান্য রুটেও এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। যাত্রীর চাপ বাড়ার সাথে সাথে গণপরিবহনের ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে তাদের রুটও (গন্তব্য) তখন ছোট হয়ে আসে।

নিত্যনতুন অজুহাতে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে কাটগড় মোড় পর্যন্ত বাস ভাড়া পাঁচ টাকা। রাস্তায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। তাই ভাঙা রাস্তার অজুহাতে ভাড়া দ্বিগুণ করে ১০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ইপিজেড থেকে অলঙ্কার, অলঙ্কার থেকে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বহদ্দারহাট থেকে নিউমার্কেট ও কালুরঘাট রুটেও ভাঙা রাস্তার অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্ণফুলী সেতুর উত্তরপ্রান্ত থেকে ছেড়ে যাওয়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে প্রতিনিয়তই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিআরটিএর ভ্রাম্যমান আদালত কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে চালক ও সহকারীদের জরিমানাও করেছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরপরই বেড়ে গেছে অটোরিকশার ভাড়া। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মিটারে আদায়ের অনেক চেষ্টা হয়েছে। তবে বাগে আনা যায়নি বেপরোয়া অটোরিকশা চালকদের। ইচ্ছেমতো চলছে ভাড়া আদায়। নগরীতে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ২৬ হাজার অটোরিকশা চলছে। গ্যাস ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

একই অজুহাতে নগরীতে চলাচলরত কাউন্টার সার্ভিস মেট্রো প্রভাতিও ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৪০ পয়সা করে বাড়ানো হচ্ছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। অন্যান্য গণপরিবহনের তুলনায় মেট্রো প্রভাতির বাস ভাড়া এমনিতেই দ্বিগুণের বেশি। কিলোমিটারে ৪০ পয়সা বাড়ানো হলে ভাড়া আরও অনেক বেড়ে যাবে। ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে বিআরটিএর কাছে কোন প্রস্তাব দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা নিজেরাই বাড়িয়ে নিচ্ছি। ২০১৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৬০ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করে আসছে মেট্রো প্রভাতি। বর্তমানে তাদের ৫৫টি বাস চলছে।

মেট্রো প্রভাতির ভাড়া বাড়ানো হলেও অন্য বাসের ভাড়া বাড়ছে না বলে জানান তিনি। তবে তিনি স্বীকার করেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর চালক, হেলপাররাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বাবুলও গণপরিবহনের ভাড়া বাড়েনি বলে দাবি করেন। কোন চালক বা সহকারী বেশি ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন তিনি। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) হারুনুর রশীদ হাজারী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া ভাড়া বাড়ানোর এখতিয়ার কারও নেই। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ