পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিষ্ঠুর বাস্তবতা হার মানিয়েছে সিনেমার কাহিনীকেও। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে খবরের পাতায়। মৃত্যুর সঙ্গে ছাপা হচ্ছে শোকাহত পরিবারের আহাজারি। কিন্তু ডেঙ্গুতে প্রাণ ঝড়ে যাওয়ার পরও পরিবারের সদস্যরা বাঁচিয়ে রেখেছেন মঈনুল হককে (৪৮)। মৃত মঈনুলের মা হোসনে আরা হক নিজেও ডেঙ্গু আক্রান্ত। তবে রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় হাসপাতাল থেকে তিনি ফিরেছেন মেয়ে ফারজানা হকের বাড়িতে। শঙ্কামুক্ত নন তিনি। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পুত্র বিয়োগের শোক সহ্য করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তাই গত শুক্রবারে ৪৮ বছর বয়সী ছেলের মৃত্যু সংবাদ এখনও তার কাছে অজানা। এই মা জানেন, তার ছেলে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। পরিবারের সদস্যরাও বুকে পাথর চেপে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছেন। মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নিতে হচ্ছে মিথ্যার আশ্রয়। ট্রাজেডিভরা কাহিনী এখানেই শেষ নয়। মৃত মঈনুলের স্ত্রী সাবিনা শারমিনও লড়াই করছেন ডেঙ্গুর সঙ্গে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা শঙ্কটাপন্ন। তিনি বর্তমানে ভর্তি আছেন রাজধানীর শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
গত রোববার ফারজানার বাড়িতে গিয়ে তার মা হোসনে আরাকে দেখা গেল মশারির ভেতর শুয়ে থাকতে। শরীরটা তার ভালো নেই। মেয়ে ফারজানার সাততলার নতুন ফ্ল্যাটে এখনো লিফট লাগানো হয়নি। লিফট লাগানোর পর ফারজানা হকের ইচ্ছা ছিল মাকে নতুন ফ্ল্যাট দেখাতে নিয়ে আসবেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে হোসনে আরা ছেলের বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু এখন তাকে সেখানে নেয়া যাচ্ছে না। ফারজানা বললেন, মাকে বলেছি, ভাইয়া-ভাবি হাসপাতালে। সেখানে গেলে তোমাকে কে দেখবে? কিন্তু মায়ের মন, তাই একটু পরপর বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে হচ্ছে। ভাইয়া বেঁচে আছে, ভালো হয়ে যাবে, সে ধরনের অভিনয় করতে হচ্ছে। অভিনয় না করেও উপায় নেই, গত বছরেই ৫২ বছর বয়সী আরেক বড় ভাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন এই ছেলেও নেই। তা মা সহ্য করবেন কীভাবে?
ফারজানা হক জানিয়েছেন, তার পরিবারে মোট ছয়জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মা, ভাই মঈনুল হক, ভাবী ও তাদের একমাত্র কলেজপড়ুয়া ছেলে ছাড়াও তাদের পরিবারের বড় ভাবী-গত বছর মারা যাওয়া ভাই, ভাইয়ের মেয়ে সবাই আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে। মারা গেছেন একজন। এক ভাবী হাসপাতালে এখনো ভর্তি। বাকিরা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন বাড়িতে। এদের খরচের তালিকাটাও বেশ লম্বা। এক ভাইয়ের পেছনেই দুই দফায় খরচ করতে হয়েছে আট লাখ টাকা। ইতিমধ্যেই ১০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে পরিবারটির। এখনও তার এক ভাবী হাসপাতালে। তার বিল কেমন আসবে, সে ব্যাপারে ধারনা নেই তার।
ফারজানা হক জানিয়েছেন, তার তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই মারা গেছেন। আরেক ভাই থাকেন বাগেরহাট। মঈনুল ভাই মারা যাওয়ার পর বাগেরহাট থেকে এসে ওই ভাই ও পরিবারের দু’একজন লাশ গ্রামে গিয়ে দাফন করেছেন। এখন মা হোসনে আরা সারাক্ষণ শুধু একটা কথাই জানতে চান, ‘ওই ছেলে কোথায়? বাড়িতে কেন গিয়েছে?’
ভাইয়ের মৃত্যুর খবরেও পাথরের মতো কান্না চেপে রাখতে হচ্ছে ফারজানার। মায়ের সন্দেহ এড়াতেই থাকতে হচ্ছে হাসিমুখে। ফারজানা জানায়, আমরা ভাইয়ের জন্য একটু যে কাঁদব, তারও উপায় নেই। মায়ের কাছে প্রায় হাসিমুখেই থাকতে হচ্ছে। যাতে কোনো সন্দেহ না হয়।’
ফারাজানার বাবা মারা গেছে আরো আগেই। তিন বোনের মধ্যে এক বোন থাকে দেশের বাইরে, বাকি দু’জন থাকেন ঢাকায়ই। ফারজানা জানিয়েছেন, তারা তিন বোন। দুই বোন ঢাকায় থাকেন, আরেক বোন দেশের বাইরে। দেশের বাইরে যে বোন, সেই বোন ১২ বছর পরে প্রথম সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ তারও। তাই তার কাছ থেকেও অনেক তথ্য লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
ফারজানা জানালেন, দু’বার ডেঙ্গু আক্রমণ করে তার ভাই মঈনুল হককে। ভালো হয়ে একবার হাসপাতাল থেকে বাসায়ও ফিরেছিল। তারপর মা ও ভাবীর ডেঙ্গু ধরা পড়লে সেই ভাইই তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। কোরবানি ঈদের দিন ছেলের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েন। ঈদের বাজার করেন। ঈদের পরদিন সবাইকে বাসায় দাওয়াতও দেন।
তবে ফারজানা দাবি করেন, তার ভাই মারা যাওয়ার পেছনে গাফিলতি ছিল চিকিৎসকদের। মইনুল হকের ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর মাইল্ড স্ট্রোক হয়। মা ও ভাবির ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর মইনুল হক হাসপাতালে থাকতে চাইছিলেন না। ১৮ আগস্ট রাতে চিকিৎসকেরা তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেন। ডেঙ্গুর কারণে মইনুল হকের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বন্ধ ছিল। সে বিষয়ে চিকিৎসকেরা কিছুই বলে দেননি। পরে ১৯ আগস্ট আবার হাসপাতালে ভর্তি করার পর লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়। পরে ২৩ আগস্ট মারা গেলেন।
ডেঙ্গু ধ্বংস করে দিল ফারজানার সুখের পরিবারটি। এখন তিনি প্রতিটি মুহুর্তই কাটাচ্ছেন খুবই কষ্টে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ফারজানা জানান, আমাদের ওপর দিয়ে কী যে যাচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। একজন এক হাসপাতালে তো আরেকজনকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। একজনের রক্ত জোগাড় করতে করতে আরেকজনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভাই এক হাসপাতালে মারা গেলেন। আরেক হাসপাতালে তখন মায়ের ব্লিডিং শুরু হয়েছে। ভাইয়ের লাশের কাছে থাকব না মায়ের কাছে থাকব? কী যে অবস্থা গেছে আমাদের। বলতে গেলে পুরো পরিবারটি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর খরচের যে ধাক্কা তা তো আছেই। তারপরও ভাইটা যদি বেঁচে থাকত, আমাদের কষ্ট থাকত না। বাবা নেই। বড় ভাই মারা যাওয়ার পর মা ও এই ভাই আমাদের অভিভাবক ছিলেন। এখন তো সব শেষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।