পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ ও ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। গতকাল রোববার বাদ যোহর কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ কার্যালয় মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এ্যাপোলো হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।
জানাজা শেষে মোজাফফর আহমদকে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম, দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা। জানাজার পূর্বে সৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল হান্নান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি প্রিন্সিপাল এম হুমায়ুন মাহমুদ, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফি রতন, ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী ফারুক, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ছোট ভাই খোরশেদ আহমদ প্রমুখ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী জয়নুল আবেদীন, ভাইস চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম ওমানী, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির জেলা সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, উপজেলা ন্যাপের সভাপতি বাবু অনিল চক্রবর্তী, উপজেলা বিএনপির সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা ন্যাপের সম্পাদক মমিনুর রহমান বুলবুল।
এর আগে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। গত শনিবার দুপুরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও উপমহাদেশে বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর আহমদের লাশে শেষ শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। এর আগে কুঁড়েঘর প্রতীক খ্যাত মোজাফফর আহমদের প্রথম জানাজা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোজাফফর আহমদকে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয়। এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জানাজা শেষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শ্রদ্ধা জানায়। দুপুরে শহীদ মিনারে নেওয়ার আগে ধানমন্ডিতে পার্টি অফিসের সামনে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শনিবার বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার লাশ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এলাহাবাদে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মোজাফফর আহমদের তৃতীয় জানাজা এবং মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কুমিল্লাবাসী।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের সম্ভ্রান্ত ভ‚ইয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা স্কুল শিক্ষক কেয়াম উদ্দিন ভ‚ইয়া, মা আফজারুন্নেছা। তিনি দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে মেট্টিক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইউনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা ছাড়াও বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন।
চল্লিশের দশকে যারা ছাত্রাবস্থায় বামপন্থায় দীক্ষা নিয়েছিলেন, মোজাফফর আহমদ তাদের একজন। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনকালে তার আজিমপুর কলোনির ৮/আই, নাম্বারের বাসায় নিয়মিত বৈঠক করতেন তৎকালিন কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ, যাদের মধ্যে নেপাল নাগ, খোকা রায়, অনিল মুখার্জি, সত্যেন সেন অন্যতম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ভ‚মিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
কুঁড়েঘর প্রতীক খ্যাত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-এ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারণে গ্রেফতার হন। ১৯৭১‘র স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান নেতৃত্বের অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ওই সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৯ সালে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ, সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী বয়োজৈষ্ঠ্য বাম নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বার্ধ্যক্যের কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকটাই অবসরে ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা শারিরীক সমস্যা বাসা বেধে ছিলো তার দেহে। বারিধারার পার্ক রোডের মেয়ের বাড়িতে স্ত্রী ও কন্যার পরিচর্চায় ছিলেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।