পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্ধু’ শব্দটি ছোট, কিন্তু এর গভীরতা অনেক। বন্ধুত্বের ব্যাপ্তি সীমাহীন। বন্ধুত্ব হলো একটি মজার সম্পর্ক। অন্য সব সম্পর্কের মতো বন্ধুত্বে কোনো বস্তুগত দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে। বাকি অনেক সম্পর্কের মতো বন্ধুত্বে কোনো আইনি বা পারিবারিক বাধ্যবাধকতাও নেই। আর তাই বন্ধুরা কেউ কারো কাছাকাছি যেতে একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করতে কোনো বাঁধা মানে না। মানেনি কখনো। কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘যদি থাকে বন্ধুর মন গাং পাড় হইতে কতক্ষণ’। প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’- এমনটাই বলেছেন বিখ্যাত দার্শনিক এমারসন। আর উইড্রো উইলসনের মতে, বন্ধুত্ব একমাত্র সিমেন্ট যা সবসময় পৃথিবীকে একত্রে রাখতে পারবে। সেটা বারবার প্রমাণ হয়েছে।
ঠিক যেমন সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের এসএসসি ২০০৭ ও এইচএসসি ২০০৯ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একাধিক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানই প্রমাণ করেছে। শিক্ষাজীবনের এই দুই অধ্যায় শেষ করার দীর্ঘকাল অতিক্রমের পরও ব্যাচটির শিক্ষার্থীরা একে অপরের কাছাকাছি হতে পেরেছেন। একসময়ের ১৬ কিংবা ১৮ বছর বয়সী তরুণরা এখন পড়াশোনা শেষে ব্যস্ত কর্মজীবনে। তবুও যেখানেই বন্ধুদের পাচ্ছেন, মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে সেই স্থানটি। তবে দীর্ঘদিন যোগাযোগ থেকে দূরে থাকা বন্ধুগুলো এক ছাদের নিচে আসতে পেরেছেন কেবলই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে। “বন্ধুর সাথে বন্ধুর পথ পাড়ি দেব হোক শপথ" এমন স্লোগানে ফেসবুকে নিপা নাদিরার হাত ধরে সমগ্র বাংলাদেশের এসএসসি ২০০৭ ও এইচএসসি ২০০৯ এর বন্ধুদের নিয়ে সৃষ্টি হয়।
গ্রুপ তৈরির সময়ে নিপা নাদিরা হয়তো অবচেতন মনেই তৈরি করেছিলের। তিনি হয়তো এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না তার তৈরি করা গ্রুপটি এখন সমগ্র দেশব্যাপি বন্ধুত্বের জয়গানে মুখরিত একটুকরো মানচিত্র। তৈরি করার পর তাকে এডমিন ও মডারেটর হিসেবে সহযোগিতা করেছেন এডভোকেট শরিফুল ইসলাম মিয়া, আশরাফুল, এমএসআই সাইমুম, সজিব ভ‚ঁইয়াসহ আরো অনেকে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই গ্রুপের রসদ ছড়িয়ে গেছে দেশ হতে দেশান্তরে। এখন সমগ্র বিশ্বে চড়িয়ে থাকা বন্ধুরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে গ্রুপে ডুকে নতুন বন্ধুর পোস্ট পড়তে শুরু করে।
এ পর্যন্ত গ্রুপটিতে ৬৪ হাজারেরও বেশি সদস্য। যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৭ ও ২০০৯ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্ব শেষ করেছেন। গ্রুপ খোলার শুরু থেকেই সবাই যে যার পরিচয় তুলে ধরেছেন। এক পর্যায়ে অচেনারাও চিরচেনায় পরিণত হয়েছেন। অনেকেই আবার একই স্কুলে পড়–য়া বাল্যবন্ধুকে খুঁজে পেয়েছেন এই গ্রুপের মাধ্যমে। শুধু দেশে নয়; এই গুপের সদস্যরা এখন "গেøাবাল ভিলেজ" ধারনার সাথে পরিচিত। সুদূর নিউইয়র্কে, সউদীর রিয়াদে বসে তারা বুনছেন বন্ধুত্বে সুতো। এখন আর কেউ প্রবাসে নিজেকে একা মনে করছেন না। গ্রুপের কল্যাণে খুঁজে নিচ্ছে নিজের বসবাসরত এলাকার বন্ধুকে। আবার কেউ খুঁজেও পেয়েছেন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে ।
সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে" এমন কাব্যিক স্তাবকের বাস্তবিক প্রনোয়খ্যান দেখা যাচ্ছে এই গ্রুপে। কি নেই এখানে? ইউএস আর্মি, নাসার সদস্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথমশ্রেণির চাকুরিজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী। এই গ্রুপটিতে ডুকলেই মনে হয় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সোনার বাংলার প্রতিটি গ্রামই যেন বন্ধুত্বে ঠাসা।
এই ব্যাচের সদস্য শুধু ফেসবুকেই তাদের বন্ধুত্ব সীমাবদ্ধ রাখেননি। দেশের যে প্রান্তে যে যেভাবে পেরেছেন কোনো না কোনোভাবে একত্রিত হয়েছেন। কেউ জেলা পর্যায়ে, কেউ বিভাগীয় পর্যায়ে আবার কেউ বা ছোট্ট পরিসরে কোনো একটি অঞ্চলে ভাগ হয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের মেলবন্ধন অটুট করছেন। শুধু কি তাই, বন্ধুত্বের টানে এক জেলার আমন্ত্রণে ছুটে যাচ্ছেন অন্য জেলায়।
বিশেষ করে ঈদেই এই আয়োজন বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সদ্য কোরবানির ঈদে সেই চিত্র পাল্টেছে ভিন্নরূপে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম নোয়াখালি, চাঁদপুর, সিলেট, লক্ষীপুরসহ দেশের বেশকিছু জায়গায় ‘মিট আপ’ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন ০৭/০৯-এর শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ গতকাল রাজধানী ঢাকায় "পুস্পদাম রেস্টুরেন্ট, অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বন্ধুদের মিলন মেলা। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন শতাধিক সদস্য। কেউবা বিদেশে বসে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়েছেন এই অনুষ্ঠানে। আর যারা আসতে পারননি তারা নিরবে সয়েছেন অনুপস্থিতির বেদনা। আড্ডা, হইহুল্লোড়, ছোটবেলার স্মৃতি চারণ ও খাওয়া, দাওয়ায় গান নাচ -বাজনায়, মুখর ছিল কালকের অনুষ্ঠান। আর সেলফিতে একে অপরকে ফ্রেমবন্দি করতে ভোলেননি মোটেও। অনুষ্ঠান শেষে সকলকে ধন্যবাদ ভবিষ্যতে বড় রকমের পুনর্মিলনী করার আশা ব্যক্ত করেন আয়োজকরা সোহানসহ অন্যরা।
ব্যাচের একজন সদস্য মোর্তুজা মিশু। পেশায় ব্যাংকার। গ্রুপটি সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এই ব্যাচের বন্ধু আমিনুলের রোগমুক্তির সহযোগিতায় মুগ্ধ হয়েছি। বলে রাখা ভালো, আমিনুলের রক্তে হোয়াইট সেল উৎপাদন হচ্ছে না। ঈদুল আজহায় এই গ্রুপ থেক সকলের সহোযোগিতায় আমিনুলের ঈদ খরচ দেওয়া হয়েছে। সবাই সংকল্পবদ্ধ যে, আমিনুলের চিকিৎসার সমগ্র খরচ বন্ধুদের সহযোগিতায় এই গ্রুপ থেকেই যোগান দেওয়া হবে৷ এমনই অসংখ্য সহযোগিতা মুগ্ধ হয়েছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এস এম পথিকের সহযোগিতার কথা। তার সহোযোগিতায় ইতোমধ্যে আরএমজি সেক্টরে চাকরি পেয়েছে এই গ্রুপের কয়েক জন বেকার। তাচাড়া তিনি ভবিষ্যতে তার এই সহযোগিতা চলমান রাখার আশা ব্যাক্ত করেন। আর্থিক, আইনি সহযোগিতারসহ এই গ্রুপটি এখন সহোযোগিতা ও ভালোবাসায় শিক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম।
ব্যাচে অন্য এক সদস্য মানস বড়–য়া জানান, সম্প্রতি ডেঙ্গুর মহামারিতে হাসপাতালে সহোযোযোগিতা থেকে শুরু করে রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে এই গ্রুপ থেকেই। তাাছাড়া যে যেখানে বিপদে পড়ছে সে সেখানে বসে একটা পোস্ট দেওয়া মাত্রই পেয়ে যাচ্ছে কোন না কোন বন্ধুর সহযোগিতা। যারা অনলাইনেই ই-কমার্স ব্যবসা করছেন তাদের কাস্টমার এখন তারই বন্ধু বা বান্ধবী। দেশের যে কোন প্রান্তে বিপদে পড়লেই সবাই পুলিশে নিয়োজিত বন্ধুর সহোযোগিতায় আমি মুগ্ধ ।
আরো কয়েক জনের সাথে কথা বলে যানা যায় এই গ্রুপ নিয়ে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা। তারা চাচ্ছেন ভবিষ্যতে এই গ্রুপের সকলের অংশগ্রহণ গড়ে তুলবে একটি দাতব্য ট্রাস্ট। এই গ্রুপ থেকে যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহায়তা করা হবে। এমনকি তারা এই গ্রুপের কল্যাণে বন্ধুদের নিয়ে গড়তে চান হাসপাতালসহ নানা সহায়তামমূলক সংস্থা। সর্বোপুরি, বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তারা দেশের উপকারে আসতে চান এবং হয়ে উঠতে চান এই ধরনের ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপগুলোর রোলমডেল। তারা সবাই কে দেখাতে চান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ইতিবাচকভাবেও কাজে লাগানো যায়। জয়হোক বন্ধুত্বের। ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে যাক এসএসসি ২০০৭ এন্ড এইচএসসি ২০০৯ বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।