পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গোপসাগরের মৎস্য খনি উজাড় হতে চলেছে বঙ্গোপসাগর। এরজন্য সমুদ্র্র বিজ্ঞানী ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞগণ তিনটি বিষয়কে দায়ী করেছেন। এক. আবহাওয়া-জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া। দুই. রাসায়নিক, পলিথিন, প্লাস্টিক ও তেলজাতীয় বর্জ্য নিঃসরণের ফলে মারাত্মক দূষণ এবং এর কারণে স্বাভাবিক মাত্রায় অক্সিজেনের ঘাটতি এমনকি অক্সিজেন-শূণ্যতা। এবং তিন. নির্বিচারে পোনা ও মা-মাছ নিধন। এ অবস্থায় ‘নীল-অর্থনীতি’ বা ব্ল-ইকোনমির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্নপূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সূত্রে একথা জানা গেছে।
জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থার সহযোগিতায় গত বছরের আগস্ট মাসে বিশেষায়িত জাহাজ ‘আর ভি ড. ফ্রিডজেফ নেনসেন’ যোগে বিজ্ঞানীগণ বঙ্গোপসাগরে গবেষণা ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এতে সমুদ্রের দৃশ্যমান অবস্থা ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যার ভিত্তিতে প্রতিবেদন ও সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। এতে বঙ্গোপসাগরের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বেরিয়ে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর একশ’ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। এরমধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ৫ কোটি লোকের জীবন-জীবিকা বঙ্গোপসাগরের উপর নির্ভরশীল। অথচ বঙ্গোপসাগরে এখন মিলছে খুব কম হারে। দেশীয় ট্রলার নৌযান নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা অনেক সময়ই হতাশা নিয়েই ফিরছে। একেকবার ৭ থেকে ১০ দিনের ট্রিপে গিয়ে টার্গেটের চেয়ে অর্ধেকও মাছ মিলছে না। মাছ শিকারি ট্রলার নৌযানের জ্বালানি তেলের খরচ পুষিয়ে তোলা যাচ্ছে না। আগে ৩ থেকে ৫ দিনে পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ ধরা সম্ভব ছিল। সাগরে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে জেলেরা পেটের তাগিদে পোনা ও মা-মাছ নিধন করছে। আবার প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডের অনুপ্রবেশকারী ট্রলার নৌযানগুলো বাংলাদেশের সমুদ্র থেকে মাছ চুরি ও লোপাট করে নিচ্ছে।
সামুদ্রিক মাছের প্রধান অঞ্চল বৃহত্তর চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও নোয়াখালীসহ সর্বত্রই মাছের আকাল। ফিশারি ঘাট, মাছের আড়ত, মোকাম ও হাট-বাজারে সামুদ্রিক মাছের জোগান কম। অনেক সময়ই ফাঁকা। দাম আকাশছোঁয়া। হরেক জাতের সুস্বাদু সামুদ্রিক মাছ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। স্বাদ ভুলতে বসেছেন তারা। চিংড়ি-লবস্টার, ইলিশসহ লাক্ষ্যা, কোরাল, পোয়া, রূপচাদা, কালাচাঁদা, সুরমা, ছুরি, সুন্দরী, কাইক্কা, লইট্টা, মাইট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ আহরণ কমে যাচ্ছে। সমুদ্রে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার পথে।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র বিজ্ঞানীরা নীল অর্থনীতির ধারক বঙ্গোপসাগরকে ‘সমৃদ্ধ খনি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিলেন। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষিসংস্থার (এফএও) একাধিক জরিপে বঙ্গোপসাগরকে বলা হয় ‘মৎস্য খনি’। বঙ্গোপসাগরে আছে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং অর্থকরী ৪৭৬ প্রজাতির মাছ। প্রাণিজ প্রোটিনের বিরাট অংশের যোগান দিয়ে থাকে সামুদ্রিক মাছ। ব্যাপক মৎস্য সম্পদে বঙ্গোপসাগরের সমৃদ্ধ তিনটি মৎস্যচারণ এলাকা চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। যা ‘সাউথ প্যাসেচ’, ‘মিডলিং’ বা ‘মিডল গ্রাউন্ড’ এবং ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ হিসেবে পরিচিত। মাছের ঘনত্ব ও বিচরণ বেশি ছিল সেখানে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানিসীমায় মাছের বিচরণশীলতা, ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য মজুদ বা স্থিতি হ্রাস পেয়েছে এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা একমত। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত জানার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিবিড় অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রয়োজন।
সাগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অক্সিজেন-শূণ্যতা
বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে, বিশ্বব্যাপী সাগর-মহাসাগরের উত্তাপ ও অক্সিজেন-শূণ্যতা সমুদ্রসম্পদ বিশেষ করে মাছসহ জীববৈচিত্রের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বিরাট সঙ্কট তৈরি করছে। যার ধাক্কা এসে লেগেছে বঙ্গোপসাগর অবধি। বেশ আগেই মৎস্য-শূণ্য হয়ে গেছে থাই ও ফিলিপাইনের সমুদ্রভাগ। গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ বছর যাবৎ পৃথিবীর সমুদ্রসমূহ যে হারে উত্তাপ শুষে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল তার চেয়েও ৬০ শতাংশ বেশি তাপদাহ সাগরের পানিতে মিশে আছে। ‘নেচার জার্নালে’ প্রকাশিত সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন এবং তেল-গ্যাসীয় জ্বালানি নিঃসরণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানানো হয়। সমুদ্রের তাপমাত্রা শোষণের সাথে সাথে পৃথিবীর তাপমাত্রাও উঁচুতে উঠে যাচ্ছে। গত ২৫ বছরে সমুদ্রসমূহ যে হারে উত্তাপ শোষণ করেছে তা পৃথিবীজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তাপের ১৫০ গুণ। তাছাড়া শিল্প ও রাসায়নিক বর্জ্য, কৃষি-খামারে ব্যাবহৃত সার ও কীটনাশক দ্রব্য, তেল ইত্যাদি সাগরের পানিতে মিশে গিয়ে জমাট বাঁধছে। সেসব উপাদান সাগরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। সাগরে সৃষ্টি হচ্ছে অক্সিজেন ঘাটতি কিংবা জিরো জোন। প্রতিনিয়ত শত শত প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে কিংবা অন্যান্য সাগর-মহাসাগরে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে। মাছের প্রজনন ও বিচরণের পরিবেশ এবং খাদ্য সংস্থান প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
গবেষক দলের প্রধান নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লরে রেসপেনডির মতে, সাগরে অত্যধিক তাপমাত্রা শোষণের ফলে পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন বেশি হারে নির্গত হচ্ছে। এরফলে সামুদ্রিক প্রাণিজগত ও জীব-অনুজীবের সর্বনাশ ঘটছে। উত্তপ্ত হওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সাগরে মাত্রাতিরিক্ত হারে মাছ শিকার, পলিথিন, প্লাস্টিক ও তেলবর্জ্য দূষণের পরিণতিতে সাগর-মহাসাগর হুমকির মুখে। অর্থকরী মাছ বিরান হওয়ার পথে। বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ক্যারিন ক্যাম্পার বলেন, নির্বিচারে মাছ নিধনের ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র ভারসাম্য হারাচ্ছে। মাছ হারিয়ে ফেলছে অভয়াঞ্চল। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।