পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘কুঁড়েঘর’ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ নামেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। সেই বাংলাদেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই। গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, ন্যাপ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন জানান, গত ১৪ আগস্ট তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূঁইয়া স্কুলশিক্ষক ছিলেন। মায়ের নাম আফজারুন্নেছা। মোজাফফর আহমদ হোসেনতলা স্কুল, জাফরগঞ্জ রাজ ইনস্টিটিউশন, দেবিদ্বার রেয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে পড়ালেখা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইউনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। দীর্ঘদিন তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি ১৯৩৭ সালে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে তিনি পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্তে¡ও পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। তিনি আত্মগোপনে থেকে আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করেন। ৮ বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মূল নেতৃত্বের একজন ছিলেন তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ওই সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব ১৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গঠনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। অধ্যাপক মোজাফফর ১৯৭৯ সালে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ, সিপিবি ও প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হন। তিনি কুঁড়েঘর মোজাফফর নামে দেশবাসীর কাছে পরিচিত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে তিনি কারারুদ্ধ হন। ২০১৫ সালে তাকে রাষ্ট্রের সর্বচ্চো পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদান করা হয়। তিনি সে পুরস্কার সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন। তিনি সেই সময় বলেছিলেন, ‘পুরস্কারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। দেশের জন্য যুদ্ধ করে পুরস্কার নেয়া কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ নয়।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।