Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আঁশে হাঁসফাঁস

মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা : ফলন আশানুরূপ হলেও পচনে সমস্যা

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সরকারি উদ্যোগে সাড়া দিয়ে সোনালী আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর চেষ্টায় মোটেও কমতি নেই পাটচাষিদের। চলতি মৌসুমে সারাদেশে পাট আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে আশানুরূপ। কিন্তু নদী নালা খাল বিলে পানির অভাবে পাট পচনে দেখা দিয়েছে সমস্যা। বৃষ্টিতে ডোবা নালায় পানি কিছুটা জমলেও তাতে পাট পচন সম্ভব হচ্ছে না।

পানির অভাবে পাট পচন নিয়ে প্রায় সবখানেই কমবেশী সমস্যা। অনেক কষ্ট করে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে নানা সমস্যা মোকাবেলা করে পাট উৎপাদন করে বাজারে উঠালেই চোখে পানি আসে চাষিদের। এই সমস্যা সমাধানে নেই কোনো উদ্যোগ। পাটের মূল্য নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় চাষিরা। নড়াইলের কালিয়ার পাটচাষি আব্দুর রহমান ও অনিল বিশ্বাস এই তথ্য দিয়ে জানালেন, আপনারা সাংবাদিক লেখালেখি করেন তাহলে আগেভাগেই সরকার পদক্ষেপ নেবে। চাষিরা বাঁচবে। দেশও ফিরে পাবে সোনালী আঁশের ঐতিহ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মীর নূরুল আলম বললেন, এবার পাটের উৎপাদন হয়েছে আশানুরূপ। একই অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইং এর পরিচালক ড. আব্দুল মুঈদ জানান, ইতোমধ্যে সারাদেশে ৮৫ শতাংশ পাট কর্তন হয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৬ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আবাদ হয় ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩শ’ ৬৪ হেক্টর জমিতে। ফলন খুব ভালো হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন আর বেলে ১০ দশমিক ৯৫ উৎপাদন হয়েছে। এই হিসাবে মেট্রিক টনে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১শ’ ৯৫ এবং ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৬শ’ ৪৪ বেল পাট উৎপাদন হচ্ছে সারাদেশে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ পরিচালক মিজানুর রহমান এই তথ্য দিয়ে জানান, পাটের মূল্য আমাদের দেখার বিষয় নয়। এর জন্য পাট অধিদপ্তর আছে। পাট অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে তাদের বক্তব্য, দেখছি বিষয়টি।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পাট পচনে খুব সমস্যা হচ্ছে। ফলন ভালো হলেও পচন ঠিকমতো না হলে আঁশের রং উন্নতমানের হয় না। এবার তোষা-৮ নতুন জাতটিতে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে পাটের বাজার দর হচ্ছে প্রতিমণ ১২ থেকে ১৩শ’ টাকা। তার মতে, ২ হাজার টাকার উপরে মূল্য হলে চাষিদের লোকসান হয়।

পাটচাষিদের কথা, আমরা প্রতিবারই নতুন করে স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কখনো কখনো স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে পাটের ফলনে প্রচন্ড খুশী চাষিরা। আবাদ ও উৎপাদনে কোন সমস্যা হয়নি। তবে পাট পচানোর সমস্যা। বাজারে পাট উঠেতে শুরু করেছে। মাঠের হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে বাজারে। যা খরচ হয়েছে তা উঠছে না। বরং অনেকক্ষেত্রে লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে স্বর্ণযুগ ফেরানোর স্বপ্ন পুরণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে সোনালী আঁশে চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ।

সূত্রমতে, একসময় পাটের বদলে কচু আবাদ করতেন চাষিরা। সরকারি উদ্যোগে কয়েকবছর হলো চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েন। কয়েকটি মৌসুমে মূল্য ভালো পেলেও গত মৌসুম থেকে আবার সেই আগের অবস্থা শুরু হয়েছে। চাষিরা মোটেও খুশি হতে পারছেন না। শুধুমাত্র পাটের বাজার তদারকির অভাবে ও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে গেছে।

সূত্র জানায় একবিঘা জমিতে চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১২হাজার টাকা। একবিঘায় পাট হয় সাধারণত ১০ থেকে ১২মণ। বর্তমান মূল্য প্রতিমণ ১হাজার ২শ’টাকা থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা। তাতে লোকসান হয়। ফলে এখন থেকেই পাটের মূল্য প্রাপ্তির ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন পাটচাষিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ