Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফিরতি পথেও বিড়ম্বনা

কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল চট্টগ্রাম নগরীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। খুলছে কলকারখানা, ধীরে ধীরে বাড়ছে কর্মব্যস্ততা। আগামীকাল রোববার নাগাদ চিরচেনা রূপে ফিরবে বন্দর নগরী। তবে ফিরতি পথেও নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাস, ট্রেনের টিকিট সঙ্কটের সাথে আছে সড়ক মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা। নগরীতে নেমেই ঘরে ফিরতে গণপরিবহনের সঙ্কট। এতো ঝক্কি-ঝামেলার পরেও স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারায় খুশি সবাই।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। এর বিরাট একটি অংশ ঈদের ছুটিতে গেছেন আপন ঠিকানায়। যারা রুটি-রুজির জন্য এই নগরে বসবাস করেন তাদের অনেকে গ্রামে গেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামে যাদের আদি বাড়ি তাদের বিরাট অংশও গ্রামে যান ঈদ করতে। দেশের সব চেয়ে বড় ইপিজেড-চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেডসহ চট্টগ্রামের কয়েকশ শিল্প কারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বিরাট অংশ ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন।
ঈদের ছুটি শেষ হলেও চট্টগ্রামের সর্বত্রই এখনও উৎসবের আমেজ। রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা। বন্ধ মার্কেট বিপণি কেন্দ্র থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় নেই ভারী যানবাহনের জটলা। পতেঙ্গা এলাকার বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালগুলোতেও নেই তেমন ব্যস্ততা। বন্দরমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহন চলছে হাতে গোনা। বেশিরভাগ পরিবহন সংস্থায় শেষ হয়নি ঈদের ছুটি। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জে নেই চিরচেনা সেই ব্যস্ততা। কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাটেও পণ্য খালাসে ধীরগতি। নৌপথে কোস্টার জাহাজে পণ্য পরিবহনও শুরু হয়নি পুরোদমে।
আপনজনের সাথে ঈদ উদযাপনে যারা বাড়ি গেছেন তারা ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ঈদের ছুটির পর দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির কারণে অনেকে সময় নিয়ে ফিরছেন। আজ শনিবারের মধ্যে অনেকে নগরীতে ফিরে আসবেন। কারণ কাল থেকে বেশির ভাগ কলকারখানার ছুটি শেষ হয়ে যাবে। খুলবে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক বীমাও কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠবে। ঈদ যাত্রায় সড়ক, মহাসড়কে যানজট এড়াতে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঈদের কয়েকদিন আগেই কলকারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। আবার ফিরতি পথেও বিড়ম্বনা কমাতে বেশির ভাগ কারখানা ঈদের সরকারি ছুটির সাথে আরও কয়েকদিন যোগ করে ছুটি ঘোষণা করে। ফলে ঈদ শেষ হলেও শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে আরও কয়েক দিন সময় হাতে থাকে।
কর্মস্থলে ফেরা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফিরতি পথে তাদের নানা দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে দূরপাল্লার যাত্রীদের কাছ থেকে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আছে বাসের সঙ্কটও। এই কারণে কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিছুটা স্বস্থি থাকলেও বেশির ভাগ সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানজট আছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সড়কে হাট-বাজার সেখানে অসহনীয় যানজট হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানজট হচ্ছে। সড়কের উপর হাট-বাজার আর হালকা যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে করে বাসে দেড়শ কিলোমিটার সড়ক পার হতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড়ের কারণেও এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কেও। বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুরসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস সঙ্কটের অজুহাতে দূরপাল্লার যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম এসে ফিরে যেতে হয় খালি বাস নিয়ে। এই অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন সংস্থাগুলো। আবার সড়কে যানজটের কারণেও তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ট্রেনেও অনেকে চট্টগ্রাম ফিরছেন। ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সময় মতো গন্তব্যে আসা যাচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা।
এদিকে নগরীতে নেমেই বাসা-বাড়িতে ফিরতে গণপরিবহন সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ঈদের ছুটির কারণে নগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা কম। বিশেষ করে অটোরিকশা ও রিকশার সংখ্যা কমে গেছে। এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদ বকশিসের নামে বাসসহ বেশির ভাগ গণপরিবহন এখনও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনেও চলছে ভাড়া নৈরাজ্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ