পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। রিজিয়া রহমানের একমাত্র ছেলে আবদুর রহমান জানান, নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন তার মা। রক্তের সংক্রমণের কারণে ঈদের পরদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়। এই কথাসাহিত্যিকের ইন্তেকালের খবরে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, তার ইন্তেকাল এদেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য খ্যাতনামা এ ঔপন্যাসিককে এদেশের মানুষ দীর্ঘকাল স্মরণ রাখবে।
১৯৩৯ সালে কলকাতার ভবানীপুরে রিজিয়া রহমানের জন্ম। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি এপার বাংলায় চলে আসেন। ষাটের দশক থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার মূল পরিচিতি ঔপন্যাসিক হিসেবে। চিকিৎসক বাবা আবুল খায়ের মোহম্মদ সিদ্দিকের বদলির চাকরির সুবাদে রিজিয়ার শৈশব কেটেছে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে। পরিবারে ছিল একটি সাংস্কৃতিক আবহ। আবুল খায়ের এ¯্রাজ আর বাঁশি বাজাতেন। মা মরিয়ম বেগমও গান ভালোবাসতেন। বাড়িতে ছিল ঘরভর্তি বই।
ফরিদপুরে যখন প্রাথমিকের ছাত্রী তখন থেকেই কবিতা লিখতেন রিজিয়া। সত্যযুগ পত্রিকায় ছোটদের বিভাগে তার সেই কবিতা ছাপা হয়েছিল। একই পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল তার প্রথম গল্প। পরে দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ললনা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তার ঘর ভাঙা ঘর উপন্যাসটি। বাবার ইন্তেকালের পর নানার বাড়িতে রিজিয়ার লেখাপড়া নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। মাধ্যমিকের পরপরই বিয়ে হয়ে যায়, ভ‚তত্ত¡বিদ স্বামী মোহাম্মদ মীজানুর রহমানের সঙ্গে। চলে যান পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে। পরে দেশে ফিরে ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক আর ডিগ্রি পাস করেন রিজিয়া রহমান। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে করেন মাস্টার্স।
শৈশব থেকে জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা আর নানা জায়গায় দেখা নিম্নবর্গের মানুষের জীবনের গল্প উঠে এসেছে রিজিয়া রহমানের লেখায়। বস্তিবাসীর ক্লেদাক্ত জীবন আর যৌনপল্লীর যন্ত্রণাকাতর প্রাত্যহিকতা যেমন তার উপন্যাসে এসেছে, তেমনি চট্টগ্রামে পর্তুগিজ জলদস্যুদের উৎপাত আর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বীরত্বও তার লেখায় প্রেরণা জুগিয়েছে। বং থেকে বাংলা উপন্যাসে রিজিয়া লিখেছেন বাঙালির জাতি গঠন ও ভাষার বিবর্তনের গল্প। তার শিলায় শিলায় আগুন বলেছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের নিপীড়িত মানুষের স্বাধীনতার চেতনার কথা। আর একাল চিরকাল ধারণ করেছে সাঁওতাল জীবনের আনন্দ, বেদনা, শোষণ, বঞ্চনার কথামালা।
সহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান রিজিয়া রহমান। আর সরকার চলতি বছর তাকে একুশে পদকে ভ‚ষিত করে। অগ্নিস্বাক্ষর, ঘর ভাঙা ঘর, উত্তর পুরুষ, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা, অরণ্যের কাছে, শিলায় শিলায় আগুন, অলিখিত উপাখ্যান, ধবল জ্যোৎস্না, সূর্য সবুজ রক্ত, একাল চিরকাল, হে মানব মানবী, হারুন ফেরেনি, উৎসে ফেরা তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
রিজিয়া রহমান বেশ কিছুদিন একটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের কার্য পরিচালক এবং জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সব কিছুর পর লেখাই ছিল তার মূল কাজ। ছেলে আবদুর রহমান জানান, উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে বাসার কাছের মসজিদে গতকাল শুক্রবার আসরের পর রিজিয়া রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মিরপুর কবরস্থানে ভাইয়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।