পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ১৪ বছর আজ। আজকের এই দিনে দেশে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জেএমবির (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) জঙ্গিরা। ১৭ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে একযোগে রাজধানীসহ দেশের ৩০০টি স্থানে ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে চালানো এ সিরিজ বোমা হামলায় দু’জন নিহত হন ও আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। ৬৪ জেলার মধ্যে শুধু মুন্সীগঞ্জ জেলায় কোনো বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি সেদিন। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বেছে বেছে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, সিরিজ বোমা ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয় ১৬১টি। তদন্ত শেষে ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। অভিযোগপত্র দেয়া ১৪৩ মামলায় আসামি করা হয় এক হাজার ১৫৭ জনকে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৬৭ জনকে। ইতোমধ্যে রায় দেয়া হয়েছে ১০৬টি মামলার। বর্তমানে ৫৫টি মামলা বিচারাধীন আছে। রায় দেয়া ওইসব মামলায় ৩০৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে ২৭ জনকে। এর মধ্যে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও বাকি ২১ জন এখনো পলাতক। এসব মামলায় খালাস দেয়া হয়েছে ৩৪৯ জনকে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র্যাব জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। র্যাবের অভিযানেই জেএমবির প্রধান বা আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। তবে এ ব্যাপারে র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল খুলে জঙ্গিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত অপরাধ করার সময় বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে র্যাব গ্রেফতার করেছে। জঙ্গিদের কঠোর নজরদারি করতে র্যাব সদর দপ্তরসহ প্রতিটি ব্যাটালিয়ন সজাগ রয়েছে।
ঢাকা মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে তেজগাঁও ও বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা দু’টি মামলার রায় হয়ে গেছে। পুলিশ ৮টি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) জমা দিয়েছে। বাকি ৮টি মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ চলছে। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেন না। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এরকম নানা কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না। তবে এসব মামলায় বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারেন আদালত। আশা করি, এই বছরের মধ্যে এই ৮টি মামলার বিচারকার্য শেষ হতে পারে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের বোমা হামলার পর জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পায় পুলিশ। তাদের দমনে কাউন্টার টেররিজম এবং অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটসহ বিভিন্ন ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইউনিটের অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। পুরনো এবং নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ডদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী জেলে। পুলিশের তৎপরতার কারণে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ঢাকায় সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ মামলায় তিন জেএমবি সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- আবুল আল ফাত্তাহ ওরফে শাকিল, রেজাউল করিম ও তারেক ইকবাল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলায় এই রায় দেয়া হয়। এরপর ওই বছরের শেষ দিকে সিরিজ বোমা হামলা-সংক্রান্ত বিমানবন্দর থানার একটি মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আব্দুল্লাহ আবু।
২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাতশ’ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর এই মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।