পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল সংলগ্ন এলাকা গোপীবাগ, টিকাটুলী, আর কে মিশন রোড ও কেএম দাস লেনের সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে ইত্তেফাক মোড় থেকে গোপীবাগ হয়ে মানিক নগরের সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এই সড়ক দিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলার কারণে এই সড়কটি বন্ধ রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি গত দুইমাস বন্ধ থাকার কারণে গোপীবাগ, স্বামীবাগ, মানিকনগর ও মুগদা এলাকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। এই এলাকায় রয়েছেÑ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পায়ে হেঁটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা যাতায়াত করতে হচ্ছে। গত দুই মাসে চলমান এই কাজের মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। ধীরগতিতে চলা বাকি কাজ শেষ হতে আর কতদিন সময় লাগবে এ তথ্য কারও জানা নেই।
প্রতি বছর ৩১ মে’র মধ্যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে থাকলেও এ ক্ষেত্রে তার কোন প্রকার তোয়াক্কাই করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ সড়কটি দিয়ে নিত্য চলাচলকারী মানিকনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, আমি এমন ধরণের উন্নয়ন কাজ এর আগে আর কখনো দেখিনি। উন্নয়নের নামে একটা সড়ক একেবারে বন্ধ করে দিয়ে এলাকাবাসীকে বিপদে ফেলা ছাড়া আর কি হতে পারে। তিনি বলেন, এই সড়কটিতে উন্নয়ন কর্মকাÐের নামে গত এক বছরে অন্তত চারবার খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। এই যে দেখেন, এবারও যে সড়কটি কাটলো একেবারে নতুনের ভাবখানাও এখনো কাটেনি। এটা কোন ধরণের উন্নয়ন কাজ আপনারাই বলুন।
সড়কের পাশের দরগা মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হলেন, আমজাদ হোসেন নামের একজন মুসল্লি। তিনি বলেন, একটি সড়ক বছরে কয়বার কাটা যায় এই সড়কটি না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না। এ সড়কটির কারণে একজন মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছে না। এই এলাকতে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের বসবাস। তাদের কত ধরণের আচার অনুষ্ঠান রয়েছে। তার কিছুই করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আরকে মিশনের সামনের এই সড়কটি বন্ধ। আবার মধুমিতা সিনেমা হলের পিছনের সড়কটিও গত ২/৩ মাস ধরে কেটে রেখে দিয়েছে। চলাচলের জন্য একটি সড়কও খোলা রাখেনি। তাহলে মানুষ কোন রাস্তায় চলাচল করবে বলুন। জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে এটা আবার কেমন উন্নয়ন কাজ হলো। আমার জানা নেই।
ওই এলাকার একজন গৃহিণী মারুফা বেগম বলেন, প্রতিদিন ছেলেকে নিয়ে এই সড়কটি দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। স্কুলের সময় হলে ভয়ে শরীর ঠাÐা হয়ে যায়, এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা তো নয় যেন জমের সাথে যুদ্ধ করা। এইভাবে যে আর কত কাল এই যুদ্ধ করতে হবে কে জানে।
একদিকে এই এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা যেমন বেহাল অন্যদিকে স্যুয়ারেজ লাইনগুলোও ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোনো কোনো রাস্তায় মলমূত্র ছড়িয়ে পড়ে। আছে পানিবদ্ধতার সমস্যা। এই এলাকার দিনের পর দিন যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনার স্ত‚প। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আরকে মিশন রোডে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে বছরের পর বছর ধরে ময়লা-আর্বজনা রাখা হচ্ছে। কলেজটির খানিকটা সামনেই রস্তার দু’পাশে কামরুন নেসা ও শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয়। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নাক চেপে চলাচল করতে হয় পথচারীদের। কলেজটির এক শিক্ষক জানান, এটা অমানবিক, বছরের পর বছর কলেজটির সামনে এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাছাড়া বিভিন্ন রোগেও তারা ভোগে। বহুবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।
গোপীবাগ বড় মসজিদের সামনে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটুপানি জমে, এ স্থানটি সারা বছরই ভাঙাচোরা থাকে। ফলে প্রায়ই রিকশা, ভ্যান, টেম্পু উল্টে লোকজন আহত হন। কাদায় পথচারীদের পিছলে পড়তেও দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা। টিটিপাড়া রেলগেট থেকে মানিকনগর মেইন সড়ক পর্যন্ত পুরো রাস্তাটি এবড়োখেবড়ো। কিছুদিন আগে রাস্তা কেটে স্যুয়ারেজের পাইপ বসানো হয়েছে, কিন্তু মেরামত আগের মতো হয়নি। ফলে রাস্তার মধ্যভাগ দেবে গেছে, যেখানে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁড়াখুঁড়ির এমন চিত্র শুধু আরকে মিশনের সামনের সড়কেরই নয়। এই চিত্র এখন রাজধানীর প্রায় সড়কেরই। এর মধ্যে দুয়েকটি দিয়ে কোনো রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা, পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এতে বুঝার উপায় থাকে না কোথায় খানাখন্দক আর কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ, মেট্রোরেলের কাজ, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। এমনকি এক প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পরদিন আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খুঁড়ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমন সমন্বয়হীনতায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা বা দুর্বলতার জন্যই নগরীর এই বেহাল দশা।
এর মধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে রাজধানীর সড়কগুলোর আবস্থা আরও বেশি বেহাল। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোশেনের বাসাবো, মাদারটেক, নন্দিপাড়া, বনশ্রী, মুগদাপাড়া, মায়া কানন ও মানিকনগরের অধিকাংশ সড়কে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে এ সমস্ত এলাকার মূল সড়কসহ মহল্লার ভাঙাচোরা সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কাঁদা-মাটি মিলে একাকার। রোদ উঠলে বাতাসে উড়ে ধুলাবালি। মাদারটেক টেম্পোস্ট্যান্ড, দক্ষিণ ও পশ্চিম মাদারটেক, পশ্চিম বাসাবো, পদ্মকানন, এলাহীবাগে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে দক্ষিণ মাদারটেক থেকে টেম্পোস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। যে কারণে এ সড়কে লেগে থাকে তীব্র যানজট। বৃষ্টিতে ওই এলাকার সড়গুলো এখন ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। সড়কে কাদা পানিতে একাকার অবস্থা। অফিস আদালতগামী ও শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ সড়কে ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়ক ও অলি-গলিতে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এছাড়ও ভাঙাচুরা রাস্তা মেরামতের কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। যে কারণে রাজধানীর প্রায় সবগুলো রাস্তাই এখন খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়েছে। প্রতি বছর ৩১ মে’র মধ্যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে থাকলেও তা কেউ মানেনি। এ বছরও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই বিভিন্ন সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের নিয়মিত রাস্তা কাটার কাজ ধরেছে।
এদিকে অতিগুরুত্বপূর্ণ কোন কারণ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমোদন না দেয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এছাড়া সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ২৮দিনের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করে পুনরায় রাস্তা মেরামত করেদেয়ার কথা থাকলেও উন্নয়ন কাজ শেষে মাসের পর মাস রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রেকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন ইত্তেফাক মোড় থেকে আরকে মিশনের সামনের সড়কে ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। ঈদের ছুটির কারণে এই কাজটি একটু ডিলে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি যত দ্রæত সম্ভব এই কাজটি যেন শেষ করা হয়।
ডিএসসিসি’র ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ মোহাম্মদ সুলতান মিয়া এলাকার রাস্তাগুলো পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হচ্ছে জানিয়ে বলেন, আরকে মিশনের সামনের সড়ক ও মধুমিতা সিনেমা হলের পিছনের সড়কে গত দুই মাসের অধিক সময় সড়ক উন্নয়ন ও স্যুয়ারেজের কাজ চলার কারণে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন আমাকে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করে কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করার অনুরোধ করেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।