পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামীকাল কোরবানির ঈদ। রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে চলছে শেষ সময়ের বেচাকেনা। প্রতিটি হাটেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। হাটে হাটে গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও উট কেনাবেচার ধুম পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকভর্তি কোরবানির পশুর স্রোত নেমেছে প্রতিটি হাটেই। একই সঙ্গে বেড়েছে মলম, অজ্ঞান ও ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম্য। তবে মনিটরিং সেল, পুলিশ, র্যাব ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রয়েছে তৎপর। ধরাও পড়ছে অপরাধীরা।
এ ছাড়াও দুই সিটি কর্পোরেশনের দেয়া ইজারা শর্ত মানছে না হাট ইজারদাররা। ইজারাদাররা সংশ্লিষ্ট হাট এলাকার রাস্তাঘাটসহ অলিগলি সব দখল করে নিয়েছে। হাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটির দনিয়া ও মেরাদিয়া হাট ইজারাদারের বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এ দুই হাট তার নির্ধারিত এলাকা অতিক্রম করে আশপাশের এলাকার ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বাড়ির বারান্দা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। গোপীবাগ ও কমলাপুর হাট এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর কোরবানি উপলক্ষে এখানে পশুর হাটের ইজারা দিয়ে থাকে। যে কারণে এই এলাকার প্রধান রাস্তাসহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ছোট-বড় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ বিষয়ে সরকার-বিরোধী দল কেউই স্থানীয়দের কথা শুনছে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতাদের সমাগমে জমে উঠলেও বিক্রেতাদের মুখে তেমনি হাসি ফোটেনি। বিক্রেতারা মনে করছেন, গরু আগে থেকেই বিক্রি হলে কম হোক বেশি হোক কিছুটা লাভের আশা থাকে। তবে শেষ সময়ে কেনা দামও পাওয়া যায় না।
রাজধানীর ১০০ ফিট পশুর হাটে ১২টি গরু এনেছেন কুষ্টিয়ার বিক্রেতা নাজমুল হোসেন। শুক্রবার পর্যন্ত তার ৪টি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যারা এসেছে সবারই কম-বেশি দু-একটি করে বিক্রি হয়েছে। বগুড়া থেকে এ হাটে ২৭টি গরু এনেছেন বেপারি আসাদুল মিয়া। বিক্রি করেছেন ১১টি। সবগুলো বিক্রি শেষ হওয়ার আশা থাকলেও ১৬টি গরু বিক্রি বাকি রয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটিও বিক্রি করতে পারেননি বলে কিছুটা হতাশা বোধ করেন তিনি। তার আরও চার সঙ্গীর অনেকগুলো গরু বিক্রি বাকি রয়ে গেছে। বিক্রি শেষ হলে বাড়ি চলে যাবেন বলে জানান আসাদুল।
তবে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা বেশি দাম চাচ্ছেন এবং গরু ছাড়তে চাচ্ছেন না। একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান বাজারে ভুসির দাম, খৈলের দাম, চালের কুড়া, চালভাঙা বা খড় সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় গরুর দামও বেশি। এ ছাড়া রয়েছে পরিবহন খরচ ও শ্রমিক খরচ। যে কারণে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এ হাটে বিভিন্ন সাইজের গরুর পাশাপাশি বেপারিরা বিভিন্ন সাইজের ছাগলও বিক্রি করছেন। তবে গরুর চাইতে ছাগল বিক্রি কিছুটা বেশি হচ্ছে বলে জানান বেপারিরা। একাধিক বিক্রেতা জানান, ছাগলের দাম কম হওয়ায় শহরের অনেক মানুষ কোরবানির জন্য ছাগল কিনছে। বিভিন্ন সাইজের ছাগল ৬ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। তবে দামাদামি করে অনেককে কিনতে দেখা গেছে।
হাট কমিটির সদস্য ইয়াছিন আরাফাত বলেন, মূলত আশপাশের এলাকার মানুষ কোরবানির পশু কিনতে এ হাটে এসে থাকেন। কোরবানির পশু দেখে যাচ্ছেন অনেকে। তারা বিকেলে পরিবার নিয়ে এসে কিনবেন। এ কারণে ছুটির দিন হলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি কিছুটা কম। তবে বিকেল থেকে আশানুরূপ বিক্রি শুরু হবে বলে জানান তিনি।
গাবতলী হাটে দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েই চলছে। কেউ কিনছেন, কেউ দরদাম করছেন, আর বনিবনা না হলে অন্য গরু দেখছেন। পছন্দ হলে টাকা দিয়ে গরুর দড়ি হাতে নিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন।
এবারের ঈদে বেশির ভাগ বড় হাটগুলোতেই পর্যাপ্ত পশুর সরবরাহ রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইতোমধ্যে ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রচুর গরু এসেছে। এ কারণে আমদানিকৃত পশুর দামের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না তারা। ফলে দেশের কৃষক-খামারিরা ভালো দাম পাননি, যা তাদের হতাশ করেছে। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, দাম কম পেয়েছি তবে লোকসান হয়নি।
গাবতলী পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি গরু এনেছেন খামারি রমিজ উদ্দিন। তিনি গাবতলীতে গরু নিয়ে এসেছেন গত সোমবার। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই দুই দিনে ৬টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিটি গরুতে গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ করেছেন তিনি। এখন তার কাছে অবিক্রীত গরু আছে ৯টি। প্রতিটি গরুর দাম এক লাখ টাকার উপরে। তিনি বলেন, আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না। গত বছর ১০টি গরু হাটে এনেছিলাম। সে বছর ১০টি গরুতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। এবার তার অর্ধেকও হবে না বলে মনে হচ্ছে।
অন্য এক খামারি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি ২২টি গরু নিয়ে গাবতলী এসেছি। মাঝারি আকারের গরুগুলো ৮০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ৮০ হাজারের গরু সাড়ে তিন মণ এবং ৯০ হাজারের গরুর চার মণ গোশত হবে। ক্রেতারা দরদাম বেশি করছেন। তারা গতবারের সঙ্গে তুলনা করছেন। এবার গরুর প্রতিটি খাবারের দাম বেড়ে দিগুণ হয়েছে। ক্রেতারা এটা বুঝতেই চাচ্ছেন না।
মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলীতে গরু কিনতে আসা মোহাম্মদ আফজালুর রহমান খান বলেন, গরুর দাম এবার অনেক বেশি মনে হচ্ছে। ভেবেছিলাম ৮০ হাজার টাকার মধ্যে একটি গরু কিনব। কিন্তু দেখলাম গত বছর যে গরু ৮০ হাজার টাকা ছিল, সেটা এবার এক লাখ টাকার ওপরে দাম চাওয়া হচ্ছে।
বনশ্রীর মেরাদিয়া ও আফতাব নগর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো হাটজুড়ে সারিবদ্ধভাবে কোরবানির পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। এবার গরুর দাম সর্বনিম্ন ৩৫-৪৫ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকানো হয়েছে। তবে ৩৫ হাজার টাকার গরু দেখতে অনেকটা বাছুরের মতো। তার চেয়ে একটু বড় হলেই দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে।
পছন্দসই গরুর দাম প্রকারভেদে ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকার ওপরে। তবে যে যেমন পারছেন দাম হাঁকাচ্ছেন। আবার আরেকটু উন্নতমানের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
গোপীবাগ ও কমলাপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, যেদিকে চোখ যায় শুধু গরু আর গরু। আগে রাস্তার দু’পাশে এক সারি করে রাখা হলেও এখন তিন সারি রাখা হয়েছে। মূল হাটে গরু আর রাখার জায়গা নেই। এখনো ট্রাকের পর ট্রাক গরু আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে। এর সবই দেশি গরু। বেলা ১১টার দিকে দেখা যায় গরু নামাতে হাটের মধ্যে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে।
রাজধানীর গাবতলী, খিলক্ষেত, গোপীবাগ, মেরাদিয়া বাজার, হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ, জুরাইন শ্মশানঘাট ও ধুপখোলা মাঠসহ কয়েকটি হাট ঘুরে ও খবর নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। মালিবাগ থেকে গোপীবাগ ও কমলাপুর অস্থায়ী গরুর হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি ৮০ হাজার টাকা বাজেট নিয়ে গরু কিনতে এসেছি। এখনও পছন্দ হয়নি। তবে এ হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। তাই পছন্দমতো যার যেমন ইচ্ছা গরু কিনতে পারছে। তিনি বলেন, এবারের কোরবানির হাটে গরুর দামও আমাদের হাতের নাগালে আছে। মুগদাপাড়া থেকে কমলাপুর হাটে কোরবনির পশু কিনতে আসা একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, এবারের কোরবানির হাটে যথেষ্ট পরিমাণ কোরবানির পশু এসেছে। দামও ক্রেতার হাতের নাগালে আছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি। এ দামে কিনতে পেরে আমি খুশি।
ফরিদপুর থেকে আসা গাবতলী হাটে গরু ব্যবসায়ী বেকন মিয়া জানান, তিনি ৩০টি গরু এনেছিলেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২২টি বিক্রি হয়। পাবনা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী মারুফ আহমেদ বলেন, তার ২৫টি গরুর মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয় ১৮টি। বেলা ২টার দিকে ওই হাটে কথা হয় খুরশিদ ওবায়দুল্লা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, বেলা ১১টায় এসেছি। কিন্তু পছন্দের সঙ্গে দাম মিলাতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। হাটে উট দেখার মানুষই বেশি। গাবতলী হাটে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা উটের আশপাশে ক্রেতার চেয়ে দর্শকের ভিড় দেখা গেল। কেউ কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন বা ভিডিও করছেন। একেকটি উটের দাম হাঁকা হয় আট থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। উট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমদাদুল হক বলেন, উট কেনার মানুষ কম, দেখার মানুষ বেশি। ১০টি উট এনে গতকাল পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকায় চারটি বিক্রি করেছি। সব উট বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মানিকনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল বাতেন এক দিনের ব্যবধানে মেরাদিয়া পশুর হাট থেকে দু’টি গরু কিনেছেন। গতকাল একটি গরু কেনেন হাসিলসহ ৮৫ হাজার টাকায়, এক দিন আগে একটি কিনেছিলেন ৬০ হাজার টাকায়। ছোটটির দামে সন্তুষ্টি থাকলেও বড় গরুটির দাম ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা হলে ঠিক ছিল বলে মনে করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।