Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডুববে খাতুনগঞ্জ-আগ্রাবাদ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

শ্রাবণের অবশিষ্ট দিনগুলোতে এবং আসছে ভাদ্র মাসের গোড়াতে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকলে বর্ষণ ও জোয়ার মিলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যাপক এলাকা আবারো তলিয়ে যেতে পারে। দেশের ঐতিহ্যবাহী সওদাগরী পাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জ এবং আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হালিশহর ডুবে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। গত ৩ ও ৪ আগস্ট চট্টগ্রামে কোনো বৃষ্টিপাত না হলেও প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে পর পর দুই দিন প্লাবিত হয় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরের বিস্তীর্ণ এলাকা।

সামনে বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল আযহার বন্ধের দিনগুলোতে মুষলধারে বৃষ্টিপাত এবং একই সময় ভরা জোয়ার হলে কী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে তা নিয়ে এ মুহূর্তে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ব্যবসায়ী মহল। ইতোপূর্বেও প্রবল বর্ষণ আর জোয়ারে বসতঘর, দোকানপাট, গুদাম, পাইকারদের আড়ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা ছাড়াও ওইসব এলাকায় হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, সড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলি পর্যন্ত হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। লাখ লাখ মানুষকে নানামুখী দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পানিতে ভিজে বিনষ্ট হয় নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মালামাল।

এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আওতায় চৌকস ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের (৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রকশন ব্রিগেড) সাহায্যে ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ চাক্তাই খাল, চশমা খালসহ বিভিন্ন খাল, ড্রেনেজ সিস্টেমের ব্যাপক অংশ ইতোমধ্যে অপদখলমুক্ত করা হয়েছে। একে একে নগরীর অন্যান্য খাল-ছরা উদ্ধার ও সংস্কার করা হবে। গত ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ম্যাজিস্ট্রেট সহযোগে সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় নগরীর বির্জা খালের ওপর গড়ে ওঠা তিনটি পাঁচ তলা ভবনের অবৈধ অংশসহ গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ৪০টি স্থাপনা। এসব স্থাপনা উচ্ছেদের পর খালটির দুই কিলোমিটার জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩৬টি খাল-ছরায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ, উদ্ধার ও খাল পুনঃখনন কার্যক্রমকে ঘিরে নাগরিক মহলে এবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর খাল পুনরুদ্ধার ও পানিবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সিডিএ’র ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুল আলোচিত মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীকে। বিগত ৯ এপ্রিল’১৮ইং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সিডিএর মধ্যকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর নগরীর খালগুলো উদ্ধার, বর্জ্য-আবর্জনা পরিষ্কার, উভয় পাশে রিটেইনিং ওয়াল, রাস্তা নির্মাণ ও নিচু ব্রিজগুলো ভেঙে উঁচু করার কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। মেগাপ্রকল্পের আওতায় ২০২০ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনশ’ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণ, ৩৬টি খাল-ছরা খনন, খালের পাশে ১৭৬ কিলোমিটার প্রতিরোধক দেয়াল, ৮৫ কিলোমিটার সড়ক, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে এসব কার্যক্রম পরস্পর নির্ভরশীল এবং চলমান প্রক্রিয়া।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতার গুরুতর সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে খাল-ছরা, নালা-নর্দমাগুলো অবৈধ দখল ও ভরাটকে দায়ী করে আসছেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ ও নাগরিকমহল। এরজন্য ব্যাপক উদ্ধার কার্যক্রম এবং সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। সরকার ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি মেগাপ্রকল্প সিডিএ’র জন্য অনুমোদন করে। কিন্তু সিডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বঘোষিত ‘কর্মবীর’ আবদুচ ছালামের কথিত ‘উন্নয়নে’র নামে সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত নগরায়ন, একের পর এক চরম অদূরদর্শী কর্মকান্ডের পরিণতিতে চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা বৃদ্ধির কারণে উক্ত মেগাপ্রকল্প এককভাবে সিডিএ’কে দেয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক এবং বিরোধিতা ওঠে। অবশেষে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে সেনাবাহিনীর ওপর।

পানিবদ্ধতার শঙ্কা এবং প্রত্যাশা
সিডিএর পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান ছালামের অদূরদর্শিতা, সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে নগরীর খাল, ড্রেনেজ সিস্টেম অবৈধ দখলমুক্ত করে সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হয় বিলম্বে। ভরা বর্ষায় মাত্র এক মাস আগে এ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অতিদ্রুত এর সুফল আশা করা যাচ্ছে না। এদিকে চলতি সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। সমুদ্র এখনও অশান্ত। তাছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক বর্ষার মৌসুমী লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে অতিবৃষ্টির সাথে প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারে তলিয়ে যেতে পারে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, রাজাখালী, বাকলিয়া এবং আগ্রাবাদ, হালিশহর, কাট্টলী, পতেঙ্গাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এসব এলাকার মানুষের মাঝে পানিবদ্ধতা ভীতি ভর করেছে।

ঈদের ছুটিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হলে এ সময় গুদাম-আড়ত, দোকানপাট, কারখানা থেকে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও উপায় থাকবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকগণ। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গতবছর জুনে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ছালাম চাক্তাই খালের শেষ প্রান্তে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় জোয়ারের পানি প্রতিরোধক সুইচ গেটের নির্মাণ কাজ ‘উদ্বোধন’ করেই ‘দায়িত্ব’ সারেন। অথচ গত এক বছরেরও বেশি সময়ে কাজের ১০ ভাগও হয়নি।

এদিকে নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সহায়তায় নগরীর খালগুলোর উদ্ধার ও সংস্কার কার্যক্রমের সুফল নগরবাসী পাবেন। আমরা আশাবাদী। কেননা চাক্তাই খালসহ নগরের খাল-ছরাগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ড্রেনেজ সিস্টেম পুনরুদ্ধার ও সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হলে পানিবদ্ধতা সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে। তিনি বলেন, মেগাপ্রকল্পের একেকটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। তারা ধাপে ধাপে কাজ করে অগ্রসর হচ্ছেন। সবগুলো কাজ শেষ হলেই নগরীর পানিবদ্ধতা সঙ্কট কেটে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ