Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্যরকম রাজধানী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

পরিবার-পরিজন সঙ্গে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী। ফলে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় এখন মানুষের উপস্থিতি কম। বেসরকারি কর্মজীবীদের মধ্যে এখনও যারা শহরে অবস্থান করছেন, তাদের অনেকেই আজকের মধ্যে গ্রামের পথে রওনা করবেন। গতকাল শনিবার ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষের গন্তব্য ছিল ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং কমলাপুর-বিমানবন্দর রেলস্টেশন। আরামবাগ থেকে যশোর-খুলনার উদ্দেশে কিছুক্ষণ পরপর ছেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। এমনই এক বাসের যাত্রী মকবুল হোসেন। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। পরিবহনে ওঠার আগে তিনি বলেন, আজও আমাদের অফিস করতে হয়েছে। ঈদের পর ছুটি কাটাব বলে ঈদের আগে ছুটি নেইনি। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। তবে ঈদের সময়ের দুর্ঘটনা নিয়ে শঙ্কিত। এবার আমরা যেন এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।

ক্রমেই ঢাকা ফাঁকা হতে থাকলেও বসুন্ধরা, মৌচাক, পল্টন, বেইলি রোডসহ মার্কেট-প্রধান কয়েকটি এলাকায় মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ঈদের আগের শেষ সময়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত তারা। মোহসিনা নামে একজন ক্রেতা জানান, রাতের গাড়িতে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। তাই শেষ সময়ে সন্তানদের বাকি কেনাকাটা শেষ করছেন।

ঘরে ফেরা মানুষের চোখেমুখে দেখা গেছে আনন্দের ছাপ। রাসেল নামে একজন বলেন, ঢাকাতে ডেঙ্গু আতঙ্ক। গায়ে কিছুটা জ্বর বোধ করছি। কিন্তু ডেঙ্গু ধরা পড়েনি। তাই টিকিট কাটা থাকলেও সঠিক তারিখে বাড়ি ফেরা হয়নি। তবু আজ জ্বর নিয়েই ফিরছি। ঈদে বাড়ি ফেরার ঝক্কিঝামেলা তো আছেই। তবু বাড়ি ফেরার আনন্দই আলাদা।

দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা রাজধানীর দৃশ্যপটও আমূলে পাল্টে যেতে শুরু করে। শহরের যেসব ব্যস্ততম সড়কে ট্রাফিক পুলিশকে ঘাম ঝরাতে হয়, সেসব সড়ক অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে। ফলে খুব বেশি প্রয়োজন পড়ছে না ট্রাফিক পুলিশের। দুপুরে ব্যস্ততম গুলিস্তানে দেখা গেল ঘরমুখী মানুষের ভিড়। ফুটপাথের হকারের সংখ্যা কমে গেছে। বাসের সংখ্যা কম। ট্রাফিক পুলিশের ব্যস্ততা নেই। শহরতলির বাসগুলোতে যাত্রী তোলার জন্য হাঁকডাক করছে হেলপাররা। যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিটি বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। উপায় নেই, বাড়তি ভাড়া জেনেই রওনা করছে যাত্রীরা।

এদিকে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতেও সময় লাগছে কম। শাহবাগ থেকে মগবাজার আসার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একজন বলেন, আগে যেখানে শাহবাগ থেকে মগবাজার আসতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দরকার হতো, সেখানে আজ মাত্র ১১ মিনিটে পৌঁছলাম। রাস্তায় রিকশার সংখ্যা কম জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, রিকশা কম থাকলে যে সময় কম লাগে, তার প্রমাণ এখন মিলছে। সারোয়ার নামে এক প্রকৌশলী উত্তরা থেকে মতিঝিল এসেছেন মাত্র আধা ঘণ্টায়। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে রাজধানী শহর এ রকমই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আর যানজট থাকলে তো কথাই নেই।

রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ভোর থেকে যাত্রীরা টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো বাসই সময়মতো ছাড়েনি। সে কারণে টার্মিনালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। কমলাপুর স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়। তবে স্টেশনের বাইরে উল্টো চিত্র। রিকশা আর দু-একটা সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া কোনো যানবাহনই নেই। ট্রেনে যারা ঢাকা আসছেন, তারা ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের বাইরে এসে দেখছেন এক অন্যরকম ঢাকা। যে ঢাকা সহসা চোখে পড়ে না।
গত শুক্রবার ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই। বাকিরাও আজ নিজ নিজ বাড়ি ফিরছেন। তাই জনসমুদ্রের ঢাকা শহর এখন ফাঁকা নগরীতে পরিণত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ