Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্রাট জাহাঙ্গীরের ইমামবাড়ি বিলুপ্তির পথে

ইসলাম প্রচারে করমুক্ত জমি প্রদান

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রায় ৫০০ বছরের পুরানো সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাড়াশ উপজেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ব শাহ ইমাম (রহ.) ইমামবাড়ী এখন বিলুপ্তির পথে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এর ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ইমামবাড়ীর অনেক জায়গা স্থানীয়রা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগে রয়েছে।

জানা গেছে তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বারুহাস গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৫শ’ বছরে পুরনো ইমামবাড়ির একটি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু গম্বুজের মতো ছোট একটি ঘর ঐতিহাসিক চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলেও বর্তমানে একটি গাছের নিচে পড়ে রয়েছে।

সম্রাট জাহাঙ্গীর সিংহাসন আরোহণের পর তিনি বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেন। সেই সময়ে চলনবিল এলাকায় ব্যাসপরগনা পরিদর্শনের সময় বারুহাস গ্রামে তিনি অবস্থান করেছিলেন। সেই স্থানে পানিতে ঘেরা একটি উন্মুক্ত ভিটায় জুব্বা-পাগড়ি পরা সঙ্গীদেরসহ শাহ ইমাম (রহ.)-কে লক্ষ্য করে সম্রাটের নৌযান সেখানে ভিড়ানো হয়। ইসলামের এই প্রচারককে সম্রাট সাদরে অভ্যর্থনা জানান।

সম্রাট জাহাঙ্গীর এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের অগ্রতিতে ইমাম সাহেবের ভূমিকা জানতে পেরে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শাহ ইমাম (রহ.) এর এবাদতের জন্য কয়েকটি পাকা ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করারও ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ইসলাম প্রচারের জন্য ৮০ একর জমি করমুক্ত হিসেবে দান করেন।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, শাহ ইমাম (রহ.) এর জন্মস্থান ইয়েমেনে। তিনি বাংলাদেশে আসার পর চলনবিলের নিভৃত পল্লী বারুহাস গ্রামে স্থায়ী হন। সেই সময়ে এ এলাকার অধিবাসীরা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তিনি তাদের মধ্যে ইসলামের বাণী ও আদর্শ প্রচার করে অনেককে ইসলাম গ্রহণ করান।

তিনি চলনবিলের উত্তর ও মধ্যম স্থানটিকে ইসলাম প্রচারের স্থান হিসেবে বেছে নেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের পাঠানো কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে মসজিদ নির্মাণের পর এখানেই তার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রস্থল ছিল। জীবনের শেষ পর্যন্ত শাহ ইমাম (রহ.) এখানেই বসবাস করছেন।
ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের পূর্ব-উত্তর পাশে তার মাজার ও কয়েজন শিষ্যের মাজার রয়েছে। বর্তমান শাহ ইমাম (রহ.) এর ইমামবাড়ি স্বেচ্ছায় দেখভাল করছেন বারুহাস গ্রামের এসএম গাজী হাসান ফরিদ। তিনি জানান, ৩০ শতক জায়গার ওপর পীর সাহেবের মাজার রয়েছে। সেখানে ছোট একটি মাজার ছাড়া সবগুলো স্থাপনাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া মাজারের সামনে সাড়ে আট বিঘা আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরটি ওই এলাকার কিছু লোক দখল করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগে একাধিকবার রিং করলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে এলাকাবাসী সম্রাট জাহাঙ্গীরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত শাহ ইমাম (রহ.) এর এই ইমাম বাড়িটির জায়গা উদ্ধার করে স্থাপনাগুলো পুনঃনির্মাণ করে ঐতিহাসিক ৫শ’ বছরের পুরনো ইসলামের প্রচারক শাহ ইমাম (রহ.) এর স্মৃতি সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ