পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকার মধ্যেই গতকাল শুক্রবার আরো একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এ নিয়ে এ অঞ্চলে ডেঙ্গতে আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু ঘটল। বরগুনা থেকে বরিশালে আনার পথে গতকাল এই রোগীর মৃত্যু ঘটে।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারে পৌঁছেছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ১৬৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে আরো ৮৪ জন। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে এখন প্রায় ৩শ’ মতো ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে গড়ে ৪ জন করে ভর্তি হচ্ছে।
এদিকে আসন্ন ঈদ উল আযহার পড়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতিদিন ছেড়ে আসা নৌযান ও বাসগুলোতে করে এডিস মশা দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের। পাশাপাশি আসন্ন ঈদ উল আযহার আগে যে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ফিরছে, তাদের অনেকেই ডেঙ্গুর জীবানু নিয়ে এ অঞ্চলে এসে রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে বলেও শঙ্কিত চিকিৎসবৃন্দ।
আর সে ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ চিকিৎসা প্রশাসনের নেই বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহালমহল। নতুন-পুরনো রোগী নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসা প্রশাসন। এখনো আক্রান্তদের ৯৫ভাগই ঢাকা থেকে ফিরে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গু সনাক্তে কিট সঙ্কটের মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ৫শ কিট পৌঁছলেও তা শেষ হয়ে যাবে দু-একদিনের মধ্যে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় পণ্যাগার থেকে ‘আর কোন কিট সরবরাহ সম্ভব নয়’ জানিয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করতেও বলা হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত দরে এ ধরনের কিট সরবরাহ করতে অসম্মতি জানিয়েছে ঐসব কোম্পানিগুলো।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয় গত ১ জুলাই থেকে দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ১ হাজার ২০৪ জন। তবে জুলাই থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবাহ রূপ নিয়েছে। এ সময়ে ২৬ রোগী বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকেও ভর্তি হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও চিকিৎসা নিয়েছেন আরো কয়েক হাজার রোগী।
শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা চলছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অমানবিক অবস্থায়। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ চলছে গত কয়েক মাস ধরে। ফলে হাসপাতাল ভবনের তৃতীয় তলায় দুটি ব্লকের মাঝের খোলা করিডোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। যেখানে কোন ফ্যান ও শৌচাগার পর্যন্ত নেই। আবার করিডোরের কিনারার দিকে খোলা জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজছে রোগীরা। রাতের বেলার ঠান্ডায় রোগীদের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত একটি মানসম্মতস্থানে ডেঙ্গু ওয়ার্ডটি স্থানন্তর করতে’। এমনকি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর বেশীরভাগের জন্যই কোনো মশারির ব্যবস্থাও করতে পারেননি কতৃপক্ষ। এসব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে না পাবার অভিযোগও রোগীদের। হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র কিছু প্যারাসিটামল ও ওমিপ্রাজল বিনামূল্যে দেয়া হলেও গ্লকোজ স্যালাইনও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে তারমধ্যে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’জন ছাড়াও বরগুনা সদর হাসপাতালে ১ জন ও শুক্রবার সেখান থেকে বরিশালে স্থানন্তরের পথে আরো একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়া গৌরনদীর একটি ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষা করে বের হবার সময় আরো এক মহিলা রোগীর মৃত্যু ঘটে। এরা সকলেই ঢাকা থেকে আগত।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন জেলার হাসপাতালগুলোর জন্য মাত্র ১২০টি ‘এনএস-ওয়ান’ কিট বরাদ্দ দেয়ার কথা জানিয়ে তা বণ্টন করে দেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে ৩০টি টিম মশা নিধনে ঔষধ স্প্রে করছে জানালেও বাস্তবতার সাথে তার ফারাক অনেক। নগরীর সদর রোড ও পাশের বিশেষ কিছু এলাকার বাইরে মশক নিধনে তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না বলে নগরবাসীর অভিযোগ। এছাড়া মশার প্রজনন প্রতিরোধে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেন, খাল, ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করার কথাও জানান ডা. রবিউল। তার মতে, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যহত রাখতে ১২০ জন কর্মী প্রতিদিন ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করছে। পাশাপাশি ড্রেন, খাল পরিষ্কারের জন্য নিয়োজিত আছে ৮০ জন কর্মী। তবে গোটা নগরীর ড্রেন ও মরা খালগুলো এখনো মশার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।