পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত সেই শিশুদের মুখে হাসি। খুশি তাদের পিতা-মাতাসহ স্বজনেরা। একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে বদলি করে দেওয়ায় সঙ্কটাপন্ন এসব শিশুদের অভিভাবকেরা চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। সেই অন্ধকার এখন নেই। তাদের সন্তানদের পাশেই থাকছেন প্রফেসর ডা. একেএম রেজাউল করিম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি তাকে জানানো হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে এ খবর পেয়ে দারুণ খুশি শিশু রোগী ও তাদের স্বজনেরা। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের অধীনে শতাধিক শিশু চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে ভর্তি আছে সঙ্কটাপন্ন ২০ জন। বাকিরা আউটডোরে ফলোআপ চিকিৎসা নিচ্ছে। শিশু ক্যান্সার রোগীদের স্বজনেরা বলেন, বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমরা খুশি। এখন আমাদের সন্তানদের চিকিৎসা নিয়ে আর কোন চিন্তা করতে হবে না। কয়েকজন অভিভাবক এজন্য দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ইনকিলাব আমাদের পাশে ছিলো।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিয়ে ফেইসবুকে একটি মন্তব্যের জেরে গত ২৬ জুন এ চিকিৎসককে রাঙ্গামাটিতে বদলি করা হয়। দেশে শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের তিন জনের একজন ডা. রেজাউল করিম। আর যেখানে তাকে বদলি করা হয় সেখানে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। তার এ বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাস্তায় নামেন ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মা-বাবা ও স্বজনেরা। নগরীতে বেশ কয়েক দফা মানবন্ধন করেন তারা। চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএর পক্ষ থেকেও বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
ওই চিকিৎসকে বদলির পর দৈনিক ইনকিলাবে ‘ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের কী হবে’, ‘সন্তানদের বাঁচতে দিন’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদনসহ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানা গেছে, প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসককে স্বপদে বহাল রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনার পেয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ওই চিকিৎসকরে বদলির আদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেন। মৌখিকভাবে তাকে আগের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে বলা হয় জনস্বার্থে জারি করা আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
প্রফেসর ডা. রেজাউল করিম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তাকে রাঙ্গামাটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আদেশের কপি বৃহস্পতিবার রাতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য বদলির বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। সরকার আমার আবেদনে সাড়া দিয়েছে। তিনি এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দৈনিক ইনকিলাবসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে শিশু ক্যান্সার রোগীদের সেবা করছি, কর্মজীবনের বাকি সময়টুকুও তাদের পাশে থাকতে চাই।
প্রফেসর ডা. রেজাউল করিমের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানিয়ে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক পেশাজীবী নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, অনেক দিন পরে হলেও তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। চট্টগ্রামের ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুরা এখন চিকিৎসা সেবা পাবে। একমাত্র শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকে বদলি করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, দৈনিক ইনকিলাবসহ বিশ্বের নামকরা অনেক মিডিয়া তা তুলে ধরেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে এবং তাকে বহাল রেখেছে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বিগত ২০১৩ সালে ক্যান্সার বিভাগটি চালু হয়। শিশুদের ক্যান্সার রোগের বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রেজাউল করিমকে নিয়েই মূলত এ বিশেষায়িত বিভাগটির যাত্রা শুরু। বিভাগটি চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ৭শ’ বেশি ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। চট্টগ্রামে বিভাগের বিভিন্ন জেলার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসব রোগীর অভিভাবকদের বেশির ভাগই হতদরিদ্র। ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন সংস্থা ও দানশীল ব্যক্তিরা শিশুদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করেন। বিভাগের প্রধান ডা. রেজাউল করিমসহ চিকিৎসক ও সেবিকারা পরম মমতায় ফুটফুটে শিশুদের সারিয়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বুকের মানিক সুস্থ হয়ে উঠবে- এমন প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন দুরারোগ্য ব্যাধী আক্রান্ত শিশুদের স্বজনেরাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।