পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট, শেরপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যাকবলিত ৬০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছেন। আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে নদীর ভাঙন। এদিকে সরকারিভাবে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা তুলনামূলক কম।
বন্যাদুর্গত ২৮ জেলায় বানভাসি মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। চলতি মাসে আবারো বন্যা হতে পারে। দেশের ভেতরে এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাসে এ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনা অববাহিকায় আবারো বন্যার আশঙ্কা থাকলেও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকাও ঝুঁকিতে আছে।
গত জুলাইয়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনা অববাহিকায় প্রায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়ে গেছে। দেশের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব-দক্ষিণের জনপদে এ বন্যার ক্ষত এখনো রয়ে গেছে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় সাধারণত আগস্টে বন্যা দেখা দেয়ায় এখানেও ঝুঁকি রয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের বন্যায় দেশের ২৮ জেলায় ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে, বজ্রপাত ও অন্যান্য কারণে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দুর্গত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, আগস্ট মাসে আরো একটি বন্যা দেখা দিতে পারে। সে জন্য সরকার আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
২০১৭ সালেও জুলাই-আগস্ট দুই দফা বন্যার কবলে পড়ে দেশ। জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে মৌসুমের প্রথম বন্যায় অন্তত ১৩ জেলার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়। দ্বিতীয় দফার বন্যায় ৩২ জেলায় পৌনে ১ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন অন্তত ১৪০ জনের মৃত্যু হয়। এ বন্যার বিস্তার কম হলেও প্রাণহানির দিক থেকে তা ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে যায়। পানি নেমে গেলেও সেই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তিন মাস পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ বলছে, ১৯৮৮, ১৯৯৮,২০০৪ ও ২০১৪ সালের বন্যা বাংলাদেশের বড় বন্যা হিসেবে পরিচিত। ওই বছরগুলোতে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি এসেছিল ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কিউসেক। কিন্তু এ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে ৭০ হাজার কিউসেক পানি এসেছে। অথচ বন্যায় আক্রান্ত এলাকা ও পানির উচ্চতা ১৯৮৮ সালের চেয়ে এবার বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, বন্যায় বানভাসি অভাবী মানুষের জন্য ডিসিদের কাছে অনেক বরাদ্দ দেয়া আছে। শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ত্রাণ বিতরণ করতে পারবে। ঈদের বিষয়টি আলাদা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া ইনকিলাবকে জানান, চলতি মাসে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট, শেরপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চাঁদপুর জেলায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুরের চর রলাকাটার আব্দুস সালাম (৫০), স্ত্রী সবজান বেগম (৪০), ছেলে আবু হাসান (২২) ও আবু সাঈদ (১৬) মিলে কিছু টিন, কাঠ ও খড়ের বেড়া আর সামান্য কিছু আসবাব নৌকায় নিয়ে নতুন চরে যাচ্ছিলেন। বাড়ি বলতে তাদের এখন এসব। বৃষ্টি পড়ছিল কখনো মুষলধারায়, কখনো হালকা। ঘণ্টাখানেক পর কড়া রোদ। এসব উপেক্ষা করে তারা চর ছাড়ছিলেন দ্রুত। আব্দুস সালাম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপচরে ১৭৫টি পরিবার বসবাস করত। গত ২০১৭ সালের বন্যায় বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি অব্যাহত ভাঙনের কবলে ৭৫টি পরিবার এ চর ছেড়ে চলে যায়। এরপর গত বছর ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র চলে যায় আরও ৫০টি পরিবার। অবশিষ্ট ছিল ৫০টি। এবারের ভয়াবহ বন্যায় তাদের বাড়িঘর তলিয়ে ছিল ২৫ দিন। শুধু তাই নয়, পানির তীব্র স্রোত দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে প্রতিটি বাড়িঘর। সে সময় পার্শ্ববর্তী ভগবতী চরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের উঁচু জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর চরে ফিরে এসে ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো কোনো রকমে খাড়া করে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছিলেন তারা। কিন্তু বিধি বাম। বানের পানি সরে যাওয়ার পর নদীর পানি যত কমছে, ভাঙনের তীব্রতা তত বাড়ছে। ফলে নতুন করে বিধ্বস্ত ঘরগুলো ঠিক করার আগেই মাত্র এক সপ্তাহে ১২৫টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
জামালপুর-সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ-মাহমুদপুর, ইসলামপুর-গুঠাইল, দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ী, সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি, বকশীগঞ্জ-জামালপুরসহ অনেক এলাকায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় তাদের বাড়িঘর তলিয়ে ছিল ২৫ দিন। শুধু তাই নয়, পানির তীব্র স্রোত দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে প্রতিটি বাড়িঘর। সে সময় পার্শ্ববর্তী ভগবতী চরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের উঁচু জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর চরে ফিরে এসে ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো কোনোরকমে খাড়া করে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছিলেন তারা। ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জ সদরের সঙ্গে বেশির ভাগ ইউপির যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো নাজুক।
সরিষাবাড়ী এলাকার আব্দুল আলিম জানান, শ্রমের ওপর নির্ভর করে তিনি সংসার চালান। জমিজমা বলতে কিছু নেই। বাড়িভিটার ছয় শতাংশ জমি ছিল সম্বল। তাও নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এবার ঈদ কিভাবে করবে তার জানা নেই।
মেলান্দহ এলাকার স্থানীয় আব্দুল গফুর জানান, বন্যায় আমার সব বিলীন হয়েছে। আমি ও আমার পরিবার মানুষের জমিতে আছি। ঈদ কী করব তা বলতে পারছি না। প্রতি বছর আমি একাই কোরবানি দিতাম, এবার পারছি না।
কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানালেন, তার ইউনিয়নে ১৪টি দ্বীপচরসহ ৩২টি গ্রাম রয়েছে। সব গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে ছয় হাজারের বেশি পরিবার বানভাসি হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন বলেন, ‹বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সরকারের ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ফলে কোনো প্রকার মানবিক বিপর্যয় ঘটেনি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরি সঠিকভাবে প্রদানের জন্য তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ কাজ শেষে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরির টাকা ও ঢেউটিন বিতরণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।