পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শুল্ককর পরিশোধ না করে জাল কাগজে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যের চালান খালাস করে নেয়ার ঘটনায় ‘সর্ষের ভেতরে ভূত’ দেখছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। আর এ ‘ভূত’ ধরতে মাঠেও নেমেছেন তারা। তাদের ধারণা, জালিয়াতির এ ঘটনায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাথে কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সব সীল-স্বাক্ষর জাল করে আমদানি চালানটি খালাস করে নেয়া হচ্ছিল। অথচ কোন পর্যায়ে বিষয়টি কারও চোখে ধরা না পড়ার ঘটনাকে রহস্যজনক বলেও মনে করা হচ্ছে। বন্দর, কাস্টমের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের কতিপয় প্রতিনিধিদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে তৎপর। এ চক্রের কারণেই নিখুঁতভাবে বিশাল পণ্য চালানটি খালাস হয়ে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে কারা তাদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি।
সীল-স্বাক্ষর জাল করে কোনপ্রকার শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই সাত কন্টেইনার ভর্তি বিশাল চালানটি খালাস করে নেয়ার পথে সোমবার রাতে আটক করে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা। তার আগে দুই ট্রাক পণ্য চলে যায় আমদানিকারকের ঠিকানায়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসে তোলপাড় শুরু হয়। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে মিথ্যা ঘোষণা এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। আর এর সাথে কাস্টম হাউসের কতিপয় কর্মকর্তার সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এ প্রেক্ষিতে শুল্ককর পরিশোধ ছাড়া বন্দর থেকে বিশাল চালান রাতের আঁধারে খালাস করে নেয়ার ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়েও তোলপাড় শুরু হয়। দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব ফাঁকি রোধে এমন ঘটনা প্রতিরোধে হার্ডলাইনে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এদিকে চাঞ্চল্যকার এ জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে গতকাল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম। কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার (জেটি) সাধন কুমার কুন্ডকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আটক পণ্য চালানের ইনভেন্ট্রি সম্পন্নকরণ ছাড়াও কমিটিকে উক্ত পণ্য চালান খালাসে সংগঠিত অনিয়মের সাথে কে বা কারা কিভাবে জড়িত তা উদঘাটন করতে বলা হয়।
এছাড়া অনিয়ম সংগঠনের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা চিহ্নিত করতে বলা হয়। একইসাথে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিক এক ব্যক্তি কিনা তা উদঘাটন করে এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করতেও তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আমদানিকারক ডাবল-এ ট্রেড কমিউনিকেশন ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আদিব ইন্টারন্যাশনালের মালিক একজন। দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও এক- নগরীর হালিশহর, ১৫৪৭ নয়াবাজার। তাদের যোগসাজশে শুল্কফাঁকি দিয়ে একসঙ্গে সাত কন্টেইনার পণ্য বন্দর থেকে পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল। ঘটনার পর থেকে হাওয়া হয়ে গেছেন আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লোকজন। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক কাউসার আলীকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা। তাদের অফিসের সব টেলিফোনও বন্ধ।
তদন্ত কমিটির প্রধান সাধন কুমার কুন্ড দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছি দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একজন। তারা একইসাথে দুটি অপরাধ করেছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনেছে। আবার শুল্ককর পরিশোধ না করেই চালান খালাস করার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ শুল্কের জিপসাম ঘোষণা দিয়ে ১৫০ শতাংশ শুল্কের টাইলস নিয়ে আসায় কমপক্ষে সোয়া কোটি টাকা শুল্কফাঁকির চেষ্টা করেছে।
শুল্ক পরিশোধ না করে পণ্য নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তাদের গাফিলতি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বন্দরের ১২টি গেটের প্রতিটিতে কাস্টমের অফিসে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে (অটোমেটেড সিস্টেম অপর কাস্টমস ডাটা) লগইন করে রাজস্ব বা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা জানতে পারেন, কাস্টমসে রাজস্ব পরিশোধ হয়েছে কিনা।
তা নিশ্চিত হয়ে তারা স্বাক্ষর করে মালামাল খালাসে রিলিজ অর্ডার দেন। সে রিলিজ অর্ডারে ম্যানুয়ালি স্বাক্ষর যাচাই করে দেখে রেজিস্ট্রার খাতায় নিবন্ধন করা হয়। এরপর জেটি সরকারের স্বাক্ষর শেষে পণ্য নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলে। এত ঘাট পেরিয়ে কিভাবে পণ্য চলে গেল তা তদন্ত করবে কমিটি।
সে জাহাজে মিললো ১৭ ধরনের পণ্য
বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির মিথ্যা ঘোষণায় আনা মাস্টার কার্টনে ১৭ রকমের ঘোষণা বহিভর্‚ত পণ্য পাওয়া গেছে। এ তালিকা চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর কি পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করছে কাস্টম হাউসের রাজস্ব বিভাগ। এরপর শুল্ককরসহ সংশ্লিষ্ট ধারায় জরিমানা নির্ধারণ করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে তা পরিশোধ করতে বলা হবে।
আগেই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চায়না-বাংলাদেশ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। পায়রা বন্দরের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণা দিয়ে চীন থেকে আনা আটটি পৃথক চালানে ৬৬৯ কার্টন পণ্য আনা হয়। টানা তিনদিন ইনভেন্ট্রি শেষে ১৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি কার্টনে পাওয়া পণ্যের তালিকা চ‚ড়ান্ত করে।
তালিকায় দেখা যায়, ৬৬৯ প্যাকেজের মধ্যে ২৭টিতে ঘোষণা বহিভর্‚ত পণ্য পাওয়া যায়। এ পণ্যের ওজন ৫৮ হাজার ৩৩১ কেজি। এরমধ্যে রয়েছে চাইনিজ বিয়ার ১৪ হাজার ৪০০ ক্যান, চাইনিজ ওয়াইন এক হাজার ৯৬ বোতল, সিগারেট ১০০ কার্টন, টাইলস ৩৭ হাজার কেজি। ১০ টন খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে- চাল চার হাজার ৭০ কেজি, সস ১৫ হাজার ৩৫ কেজি, নুডুলস এক হাজার ৪৪ কেজি, সয়া সস ৮৯৪ কেজি, আচার ৭১৭ কেজি, ভিনেগার ৬০০ কেজি, সুপ ২৩৩ কেজি, চিনি ৩৬৮ কেজি, পিগ ক্যান্ডি ৩৬ কেজি। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে- রোলার ব্রাশ ২৮ হাজার ৮০০ পিস, সেফটি গ্লাস এক হাজার ৫৫২ পিস ও রাবার হোস পাইপ ৭২০ কেজি। চালানের ৬৭২ প্যাকেজে যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।