Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাল কাগজে পণ্য খালাস

চট্টগ্রাম বন্দরে তল্লাশি হবে ৭ কন্টেইনার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির নামে মিথ্যা ঘোষণায় জাহাজভর্তি মদ-বিয়ারসহ ঘোষণা বহিভর্‚ত পণ্যের ইনভেন্ট্রি শেষ না হতেই জালকাগজে ভর করে পণ্য খালাসের ঘটনা ঘটলো চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের সীল-স্বাক্ষর জাল করে কোন প্রকার শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই বিশাল চালানটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

জিপসামের (ফলস সিলিং) নামে চীন থেকে আনা সাত কন্টেইনার ফিনিশড টাইলসের এ চালানটি আটক করেছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এ চালানের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা চলছিল বলে জানিয়েছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। রাতের আঁধারে চালান খালাস করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমদানি কন্টেইনারগুলোতে ঘোষণা বহিভর্‚ত অন্যান্য পণ্য থাকারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তবে কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার সীল-স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিশাল পণ্যের চালান খালাস করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্কফাঁকি দিতে বেপরোয়া চক্রটি সব ধরনের অপকৌশলই গ্রহণ করছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আকবর হোসেন বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ না করেই পণ্য বের করে নেয়ার ঘটনায় আটক চালানটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শুল্ককর ও রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

সোমবার রাতে কন্টেইনার থেকে খালাস করে ট্রাক বোঝাই করে পণ্য পাচারের সময় বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা একটি ট্রাককে চ্যালেঞ্জ করলে এ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এ সময় পণ্যবোঝাই দুটি ট্রাক আটক করা হয়। তার আগেই আরও দুটি ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দর ত্যাগ করে। খবর পেয়ে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা ওই দুটি ট্রাকসহ সাতটি কন্টেইনার আটক করেন। বন্দর থেকে বের হয়ে যাওয়া দুটি ট্রাকও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়।

কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, চীন থেকে আসা এমভি এমসিসি হিন্দাও নামের একটি জাহাজে ৭ কন্টেইনার বোঝাই পণ্য আমদানি করে নগরীর হালিশহরের নয়াবাজার এলাকার ডাবল এ ট্রেড কমিউনিকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। একই ঠিকানার সিএন্ডএফ এজেন্ট আদিব ইন্টারন্যাশনাল চালানগুলো খালাসের দায়িত্ব পালন করে। ঘোষণা দেয়া হয় চীন থেকে ৭ কন্টেইনার ভর্তি বাড়ি ঘর এবং অফিসের ডেকোরেশনের কাজে ব্যবহৃত সিলিং আনা হয়েছে। চালানটি খালাস করার জন্য কাগজপত্র নিয়ে বন্দরের এনসিটি-১ নম্বর বার্থে যায় সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান আদিব ইন্টারন্যাশনালের জেটি সরকার। কাগজপত্র জমা দিয়ে একটি কন্টেইনার আনস্টাফিং করে দুই ট্রাক পণ্য বেরও করে নেয়া হয়। তৃতীয় ট্রাকটি গেটে পৌঁছলে কাগজপত্রগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ হয়। গেটে দায়িত্বরত সার্জেন কাগজপত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখতেই ওই এলাকা থেকে কেটে পড়েন আদিব ইন্টারন্যাশনালের জেটি সরকার।

বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের লোকজন ট্রাক দুইটি আটক করে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। কাগজপত্র দেখে সবাই নিশ্চিত হন জালিয়াতির মাধ্যমে সাত কন্টেইনার পণ্য খালাস করে নেয়া হচ্ছিল। এ ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিএন্ডএফ এজেন্ট উভয়ে জড়িত বলে জানান কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা এক এবং মালিকও একজন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আটক ট্রাক পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, শুধু কাগজপত্রই জাল নয়, একই সাথে মিথ্যা ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। সাইবার সিমেন্ট বোর্ড ঘোষণা দিয়ে আনা পণ্যগুলো আসলে উন্নতমানের টাইলস। দুটি পণ্যের মধ্যে শুল্কের তফাৎ অনেক বেশি। এদিকে এক টাকাও শুল্ক পরিশোধ না করে বিশাল একটি চালান নিয়ে যাওয়ার পথে তা আটক করায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের প্রশংসা করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ