পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অসহ্য গরম আর ঘামে কাহিল দশা। নানান ভোগান্তির কথাবার্তার সাথে সবারই চোখে-মুখে বিস্ময় আর বিরক্তি, এ কেমন ‘বর্ষা ঋতু’! গতকাল ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকলেও গা-জ্বলাপোড়া করা বাস্তব তাপানুভূতি (ফীলস লাইক) ৪৬ ডিগ্রির ঘরে। যশোরে ৪৭ ডিগ্রি। এমনকি সন্ধ্যা ৭টায়ও ঢাকায় বাস্বত তাপদাহ ছিল ৪২ ডিগ্রি। গতকাল ঢাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বিচ্ছিন্ন জায়গায় সাময়িক যে ‘বৃষ্টিপাত’ হয় যা মাত্র এক মিলিমিটার। দেড় কোটি মানুষের আবাসস্থল রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে একটি তপ্ত গ্যাস চেম্বারে।
শুধুই ঢাকা নয়। সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও ভোলা অঞ্চল এবং রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফেনীতে ৩৭ ডিগ্রি সে.। দেশের অধিকাংশ জেলায় দিনের তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঢাকায় ২৯ ডিগ্রির কাছাকাছি। যা মৌসুমের বর্তমান সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে পারদ স্থানভেদে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঁচুতে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটি, যশোর, শ্রীমঙ্গলে ইলশেগুঁড়ি (৫ থেকে ৬ মি.মি.) বৃষ্টি হয়। তাও ক্ষণিকের জন্য।
অথচ ভরা বর্ষার শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এ সময় ঘনঘোর মেঘলা আকাশতলে দিনে-রাতে অঝোরে বর্ষণ হওয়াই তো খুব স্বাভাবিক। এর বদলে দিনমান কড়া সূর্যের তেজে বাতাসে যেন আগুনের হল্কা। গরমের যাতনা চৈত্র-বৈশাখ মাসকেও হার মানাচ্ছে। এখানে-সেখানে সাময়িক ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে আরও উসকে উঠছে ভ্যাপসা গরম। অসময়েই খরা-অনাবৃষ্টির চক্করে পড়েছে সারাদেশ। পূর্বাভাস মতে এ অবস্থা চলতে পারে সপ্তাহজুড়ে। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে বর্ষার মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হলে আসছে সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের মাত্রা ধীরে ধীরে কিংবা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
আগামী সপ্তাহে যদি বর্ষার মৌসুমী বায়ু জোরদার হয় তাহলে দেশজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল আযহার সপ্তাহে দেশে বর্ষার ‘স্বাভাবিক’ এমনকি অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে। যা বন্যার কারণও হতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের পরিমান অস্বাভাবিক বেশি থাকায় তীব্র গরমের সাথে মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হচ্ছে। এতে করে মানুষ গরমে-ঘামে হাঁপাচ্ছে। দ্রুত কাহিল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গতকাল দিনের বেলায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার হার ছিল ৯৪ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া এলোমেলো আচরণ করছে।
এ অবস্থায় দেশের অনেক স্থানেই ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যাথা, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যাও। হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক, চিকিৎসকের চেম্বারে রোগীর ভিড় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এহেন বৈরী আবহাওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ ঘন ঘন বিশুদ্ধ পানি ও পানীয় পান, ধুলোবালি, ধোঁয়া ও তীব্র রোদ এড়িয়ে চলা এবং জ্বরের মাত্রা বেশি হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অসহ্য গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎবিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের কারণে সর্বত্র বেড়ে গেছে জনদুর্ভোগ। অকালে তাপদাহের কারণে বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক, নিম্নআয়ের দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষজন, শিশু-বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঘরে বাইরে সর্বত্রই হাঁসফাঁস অবস্থা।
এদিকে চলতি বছরের প্রায় গোড়াতেই বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে আবহাওয়া-জলবায়ুর খেয়ালী বা বৈরী আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খরা-অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ, বন্যা, হঠাৎ বৃষ্টি, বজ্রপাতের আধিক্য, শীতের কম অনুভূতি, খুব সীমিত জায়গায় অল্পক্ষণ ধরে অতিবৃষ্টি, বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য ইত্যাদি চরমভাবাপন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। গত মে, জুন ও জুলাই পর পর তিন মাসে দেশে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দেখা গেছে। মে ও জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে দেশে গড় বৃষ্টি হয় প্রায় ৩২ শতাংশ কম। অথচ গেল জুলাই মাসে দেশে গড় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি ছিল।
বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি-প্রকৃতির ক্ষেত্রেও তীব্রতা বা চরম ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ১ আগস্ট আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ) মাসে সারাদেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শূণ্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সে. বেশিই ছিল। জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) মাসেও দেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১.৮ ডিগ্রি ও ০.৬ ডিগ্রি সে. ঊর্ধ্বে ছিল। যা দেশে আবহাওয়া-প্রকৃতি ক্রমেই তপ্ত হওয়ার প্রবণতা বা সূচক বহন করছে।
আবহাওয়া-জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এবং এর আশপাশ অঞ্চলের দেশসমূহের আবহাওয়ায় এ বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে ‘এল নিনো’ অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়ায় ‘নিরপেক্ষ’ অর্থাৎ ‘চরম ভাবাপন্ন নয়’ এমন একটি স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে আসে ‘এল নিনো’। যা বৃষ্টিপাতের আবহ রোধ করে। যা ঘূর্ণিঝড়, খরা-অনাবৃষ্টি, তাপদাহ, বন্যা, বজ্রঝড়, হঠাৎ বৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি ফল-ফসলের আবাদ-উৎপাদন এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। মানবসম্পদের সার্বিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।
‘অসময়ে’ শ্রাবণে তাপপ্রবাহ
আবহাওয়া বিভাগ গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারী থেকে জোরালো অবস্থায় রয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়া সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান জানান, বর্ষার মৌসুমী বায়ু প্রবল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চারনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।