Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শরীয়তপুরে এগিয়ে চলছে পদ্মার ভাঙনরোধ প্রকল্প

ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভয়াবহ ভাঙন থেকে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরার বিশাল জনপদ রক্ষায় ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি এগিয়ে চলছে। চলতি বর্ষা মৌশুমে এখনো নতুন করে কোন ভাঙন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত ৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ লাখ ১০ হাজার জিও ব্যাগ ছাড়াও বিভিন্ন সাইজের ৩২ লাখ ৪৭ হাজার সিসি ব্লক ফেলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একইসাথে দেশের সর্ববৃহৎ ৩৪ ইঞ্চি ডায়ার ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের মাধ্যমে পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন করে ভাঙন রোধে কাজ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী’র অধিভ‚ক্ত খুলনা শিপইয়ার্ড নড়িয়া-জাজিরা ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০২১-এর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা ও তত্ত্বাবধানে শরীয়তপুরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করার কথা জানিয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। তবে স¤প্রতিক বন্যা ও প্রবল স্রোত-এর সাথে পদ্মা দুই কূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্লক তৈরিরসহ ড্রেজিং কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হলেও পদ্মার তীরে চলছে কর্মযজ্ঞ ব্যাপক। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পুরো প্রকল্পটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবিত ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত বছর জানুয়ারির প্রথমভাগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক’এর অনুমোদন লাভ করে। এরপরেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কিছুটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং প্রকল্প-প্রস্তাবনাটি মন্ত্রী পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানো হয়। একনেক-এর অনুমোদনের সাড়ে নয় মাস পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ক্রয় কমিটির অনুমোদন লাভ করে। এরপর একমাস ১০ দিন পরে খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক দিয়ে স্রোত থেকে ভাঙন রোধসহ নদী তীর রক্ষা এবং একই উদ্দেশ্যে আরো পৌনে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকায় ৪০ লাখ জিও ব্যাগের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ ফেলার কাজ শেষ করেছে শিপইয়ার্ড নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ করছে ২০টি বার্জ ও ২২টি বোট। জিও ব্যাগ ফেলার অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ। এছাড়াও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার সিসি ব্লকের মধ্যে ইতোমধ্যে সোয়া লাখ ব্লক তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মার অব্যাহত স্রোতসহ পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সিসি ব্লক তৈরি কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভাঙন রোধে সমুদয় জিও ব্যাগ ফেলার কাজটি সম্পন্ন করার পাশাপাশি পানি সরে যাবার সাথেই সিসি ব্লক তৈরির কাজেও গতি আসবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।

পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় পৌনে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ৩৪ ইঞ্চি ডায়ার একটি ড্রেজার ছাড়াও মাঝারি সাইজের আরো ৮টি ড্রেজার ভাঙন কবলিত এলাকার বিপরিতে অবস্থান করছে। ঘণ্টায় প্রায় ৫-৭ নিটক্যাল মাইল বেগে পদ্মার স্রোতে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রাখা দুরুহ হয়ে পড়েছে। ফলে এপর্যন্ত ৭ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণের কথা বলা হলেও প্রি-ওয়ার্ক সার্ভে অনুযায়ী ১ কোটি ৫৪ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করার হিসেব করা হয়েছে। পদ্মার স্রোত হ্রাসসহ পানি বিপদ সীমার নিচে নামার সাথেই ব্যাপকভাবে ড্রেজিং শুরুর কথা জানিয়েছেন খুলনা শিপইয়ার্ডের জিএম-ডিএন্ডপি ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ আল ফারুক-বিএন। আগামী মার্চের মধ্যেই প্রি-ওয়ার্ক সার্ভে অনুযায়ী ড্রেজিং-এর সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে কতৃপক্ষ আশাবাদী ।

২০২১-এর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শরীয়তপুরের ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২০-এর জুনের মধ্যে ২৩ লাখ ২৭ হাজার ও ২০২১-এর এপ্রিলের মধ্যে ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ব্লক ফেলার কাজ শেষ করতে হবে। সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ