পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রংপুরের মুহিন ইসলামের জন্মদিন ছিল গত শনিবার। এই জন্মদিন ঘিরে মুহিনের যেন আগ্রহের শেষ নেই। বাবা ময়নুল ইসলামের পুরো ঘর মুখর হয়ে উঠেছিলো ছোট্ট মুহিনের আবদার মেশানো কথায়। বাবা, আমার জন্মদিনে নতুন জামা কিনে দিবা না? কেকটা যেন বড় হয়। জন্মদিনে নানি-মামারা আসবে না? কাকে কাকে দাওয়াত দিবা? আমার বন্ধুদের সবাইকে আসতে বলব কিন্তু। বেশি করে বেলুন কিনে আনবা। সপ্তাহখানেক ধরে সে বারবার এসব কথা বাবা-মাকে বলছিল।
মুহিনের অষ্টম জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য বাবা-মায়েরও ছিল সাধ্যানুযায়ী প্রস্তুতি। সকাল থেকেই শুরু হয় আয়োজন। বিকেল গড়াতেই আত্মীয়স্বজনে বাড়ি ভরপুর। গোশত, পোলাও, পিঠা ও পায়েসের আয়োজন করা হয়েছে। মুহিনের জন্য নতুন জামা কিনে এনেছেন বাবা। সবকিছু দেখে মুহিনের সে কী আনন্দ চারদিকে ছোটাছুটি।
মুহিনের মা ব্যস্ত রান্নাবান্না ও আত্মীয়স্বজন সামলাতে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাজার থেকে ইংরেজিতে ‘হ্যাপি বার্থডে মুহিন’ লেখা একটা কেক নিয়ে আসেন বাবা। কেক কাটার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু মুহিন নেই, ঘরে-বাইরে কোথাও না। বাবা-মা প্রতিবেশীদের এ-বাড়ি ও-বাড়ি খুঁজে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে আগত আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরাও মুহিনকে খুঁজতে বের হন। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে ছেলেধরা মুহিনকে নিয়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রতিবেশীদের কেউ একজন বলেন সন্ধ্যায় তিনি মুহিনকে বাড়ির পাশে থাকা গভীর গর্তের দিকে যেতে দেখেছেন। এ কথা শুনে সবাই ছুটলেন সেই গর্তের দিকে। গলাপানির ওই গর্তে নেমে খুঁজে পাওয়া যায় মুহিনকে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে দ্রæত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের প্রামাণিকপাড়া গ্রামে। মুহিন জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা ময়নুল ইসলাম পেশায় কৃষক। মা মণি বেগম গৃহিণী। দুই ছেলের মধ্যে মুহিন বড়।
গতকাল রোববার সকাল আটটায় ওই গ্রামে ঢুকেই শোকার্ত পরিবেশ টের পাওয়া গেল। বাড়ির বারান্দায় মুহিনের ছোট্ট নিথর দেহ সাদা কাপড়ে মোড়ানো। মানুষে গিজগিজ করছে গোটা বাড়ি। কাঁদতে কাঁদতে মা মণি বেগমের চোখের পানি যেন ফুরিয়ে গেছে। বিড়বিড় করে বারবার বলছিলেন, আমার বাবা (মুহিন) কোথায়? ও তো খায়নি। ডাকো। তাড়াতাড়ি কেকটা কাটো। বাবা ময়নুল ইসলাম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন সবার মুখের দিকে। এত মানুষের ভিড়ে হয়ত খুঁজে ফিরছিলেন মুহিনের মায়াবী মুখটি। রোববার বেলা ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে মুহিনকে দাফন করা হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানান, মুহিনদের বাড়ি থেকে ১০০ গজের মধ্যে বাচ্চু মিয়ার আবাদি জমি। এই জমির দুই শতকের মাটি খুঁড়ে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় ওই গর্তে পানি জমেছে গলাসমান। প্রতিবেশীদের ধারণা, গর্তের কাছ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা ফসকে মুহিন পড়ে ডুবে যায়।
জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিপদ রায় বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুহিনের রোল নম্বর ছিল ৪। গতকাল সে স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। মুহিনের অকালে চলে যাওয়ার ঘটনাটি আমরা শিক্ষকেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।