Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পচা পানি এখন মশার খামার

৩০০ ফুট সড়কের পাশে লেক

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নিয়মিত পরিষ্কার না করায় রাজধানীর নিচু জমি, ঝিল, জলাশয় ও লেকগুলো হয়ে উঠেছে কচুরিপানা ও আবর্জনার ভাগাড়। দিন দিন ময়লা আবর্জনা ফেলে আসাধু চক্র সরকারি এ জলাশয়গুলো দখল করে নিচ্ছে। এসব নিচু জমি, ঝিল, জলাশয় ও লেকগুলোর কচুরিপানা ও নোংরা আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা। এগুলোকে মশার আদর্শ প্রজননস্থল বলে মনে করছেন কীটতত্ত¡বিদরা। প্রতি বছরই রাজধানীর বিভিন্ন খাল, লেক ও জলাশয়ের ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে থাকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। পাশাপাশি চালানো হয় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি। এ বছর সিটি কর্পোরেশনের এমন কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। দুই সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে নেয়া হয়নি বিশেষ কোনো পরিচ্ছন্নতা অভিযানও। বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীতে দেখা দিয়েছে মশার অসহনীয় দৌরাত্ম্য, যার ফলে রাজধানীবাসী পড়েছে ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়ার মহামারীতে।

রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়কের পাশে লেকের পানিতে বহুদিন ধরে স্তূপ হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। লেকের পানিতে মরা হাস, মুরগিসহ বিভিন্ন পশু-পাখি ভাসতে দেখা গেছে। পানিতে ভাসছে গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা। এ ছাড়াও কোথাও কোথাও কচুরিপানাসহ বিভিন্ন লতা-পাতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে লেকের বিভিন্ন অংশ। এসব ময়লা-আবর্জনা পচে লেকের পানি কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। পচা পানির দুর্গন্ধের কারণে নাকে-মুখে রুমাল চেপে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে পথচারীদের । কুড়িল থেকে বালু নদ পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার বিস্তৃত এ লেকটির পচা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। একদিকে পচা পানির দুর্গন্ধ অন্য দিকে মশার দুর্বিষহ যন্ত্রণা। এর মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

গতকাল সরেজমিন কুড়িল থেকে বালু নদের সেতু পর্যন্ত ৩০০ ফুট সড়ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লেকের পানিতে পুরাতন লেপ-তোষক ভাসছে। যে যেমন ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। লেকের কালো পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ভাসছে। সড়কটি দিয়ে যাতায়াতের সময় একদিকে পচা পানির দুর্গন্ধ অন্যদিকে মশা নাকে-মুখে ঢুকে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই কাপড় দিয়ে নাক-মুখ চেপে সড়ক পার হতে হচ্ছে। মস্তুল এলাকায় চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন কয়েকজন বাসিন্দা। তারা বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এ লেকটি খনন করা হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে এটি এখন আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেন, খননের পর থেকে এ পর্যন্ত লেকের পানিতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি। এই ময়লা-আবর্জনা পচে এখন লেকের পানিই পচে গেছে। ময়লা-আবর্জনা আর পচা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলায় কোথাও একটু শান্তিতে বসতে পারি না। তারা বলেন, এই চায়ের দোকানে একটু আরাম করে চা খাব কিংবা আড্ডা দেবো মশার যন্ত্রণায় তাও সম্ভব নয়। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কিংবা রাজউকের কোনো উদ্যোগও নেই। এই মশার যন্ত্রণা থেকে আমরা কবে রেহাই পাব তা আল্লাহই ভালো জানেন।

৩০০ ফুট সড়ক এলাকার বাসিন্দা ইমদাদুল আলম বলেন, ৩০০ ফুট সড়কের পাশের এই লেকটি যখন খনন করা হচ্ছিল তখন আমরা ভেবেছিলাম এটি আমাদের জন্য কল্যাণ হবে। কিন্তু এখন তো দেখছি এটি এখন আমাদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়াও খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ারসাহারা এলাকার বিভিন্ন খাল, বিল ও ডোবাও ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। এ ময়লা-আবর্জনা ও পচা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এই এলাকায় মশার ওষুধ কবে ছিটানো হয়েছে তা আমরা বলতে পরব না। এছাড়া মশার উৎপত্তিস্থলে হাত দেয়া হয় না বলেও জানান খিলক্ষেতের হাজীপাড়ার বাসিন্দা কুদরত আলী। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে দেখি ধোঁয়া দিয়ে যায়। এ এলাকায় অনেক ডোবা-নালা রয়েছে। কিন্তু এই ডোবা-নালার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে কোনো সময় দেখিনি।

১০০ ফুট খালের পচা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। মশার উপদ্রব কিছুটা বেশি বলে জানান ডিএনসিসির ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিন্নাত আলী। তিনি বলেন, ১০০ ফুট খালের পানিপ্রবাহ থমকে আছে। জমে থাকা পানিতে ডিম দিচ্ছে মশা। এ কারণে খালটি মশার একটা বড় প্রজননকেন্দ্র হয়ে গেছে। লোকবলের ঘাটতি থাকলেও এসব প্রজননকেন্দ্র ধ্বংসের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এই কাউন্সিলর।

এছাড়া রাজধানীর কল্যাণপুর, মিরপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, ভাটারা, বাড্ডা, বনশ্রী, গোড়ান, খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদাপাড়া, শনির আখড়া, দোলাইরপাড়, মোহাম্মদপুর, আদাবর এলাকার জলাশয়গুলো ‘মশার খামার’ বলছেন স্থানীয়রা। মশার প্রজনন চলছে উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি লেক এবং হাতিরঝিলেও। ঢাকার ২৬টি খালের অবস্থাও বেহাল। ময়লা-আবর্জনা জমে যাওয়ায় এসব খালের পানিতে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য খোলা, ভাঙাচোরা নর্দমাগুলোতে হরদম মশার বংশ বৃদ্ধি চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ