Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বসেরায় আরো এগিয়ে

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কন্টেইনার সমুদ্র বন্দরের বিশ্বসেরার কাতারে আরো ছয় ধাপ এগিয়ে গেলো চট্টগ্রাম বন্দর। এর মধ্যদিয়ে ‘সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার’ ও ‘দেশের অর্থনীতির হৃৎপিন্ড’ হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্বজুড়ে সুনাম বৃদ্ধি পেলো। দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রবৃদ্ধির সূচক প্রতিফলিত হচ্ছে।
পোর্ট-শিপিং সার্কেলে জানা গেছে, আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যাগত তথ্য, দক্ষতা-সক্ষমতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সূচক বা মাপকাঠিতে বিশ্বের সেরা বিবেচনায় তালিকাভূক্ত হয় একশ’টি বন্দর। ‘ওয়ান হানড্রেড পোর্টস-২০১৯’ শীর্ষক এ তালিকা প্রতিবছরের মতো এবারও প্রকাশ করে শিপিং বিশ্বের খ্যাতনামা গণমাধ্যম ‘লয়েডস লিস্ট’। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পোর্ট-শিপিং সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি বিশদ জানতে পারেন।

‘লয়েডস লিস্ট’-এর এবারের বিশ্বের সেরা কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে পারদর্শী একশ’টি বন্দরের মাঝে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ছয় ধাপ এগিয়ে গেছে। উন্নীত হয়েছে ৬৪তম অবস্থানে। গতবছর ২০১৮ সালে লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দর ছিল ৭০তম। ২০০৮ সালে অবস্থান ছিল ৯৫তম।
লয়েডস লিস্টের হিসাবে গত ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ টিইইউএস (২০ ফুট সাইজের ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। আগের বছর ২০১৭ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয় ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ টিইইউএস (অবস্থান ৭০তম)। এবার প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, দেশের জন্য এটি একটি বড় সুখবর। এ সাফল্যের কৃতিত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের একার নয়। বন্দরের সাথে যারা বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত আছেন তাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। লয়েডস লিস্টে বিশ্বসেরা একশ’ বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর আরও ছয় ধাপ এগিয়ে ৬৪তম অবস্থানে উন্নীত হলো। এরজন্য বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই অভিনন্দন প্রাপ্য।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, দক্ষতা, সক্ষমতা, গতিশীলতায় চট্টগ্রাম বন্দর আরও এগিয়ে যাবে। এই লক্ষ্যে বন্দরের অবকাঠামো ও যান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বসেরা একশ’ বন্দরের তালিকায় ৫০-এর ঘরে উন্নীত হবে চট্টগ্রাম বন্দর। এটাই আমাদের টার্গেট। বন্দরের সামগ্রিক উন্নয়নে আমরা বদ্ধপরিকর।
এদিকে ‘ওয়ান হানড্রেড পোর্টস-২০১৯’ শীর্ষক লয়েডস লিস্টে সবার শীর্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে চীনের সাংহাই সমুদ্রবন্দর। ২০১৮ সালেও সাংহাই ছিল শীর্ষতম। এরপরের দ্বিতীয় অবস্থান বজায় রেখেছে সিঙ্গাপুর সমুদ্রবন্দর। দুবাই বন্দর রয়েছে দশম অবস্থান নিয়ে। আর তালিকায় সবার পেছনে (১০০তম) অবস্থানে আছে তাইওয়ানের তাইপে বন্দর। বিশ্বের সেরা চীনের সাংহাই সমুদ্রবন্দর ২০১৮ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে ৪ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার ২শ’ টিইইউএস। ২০১৭ সালের হিসাবে ৪ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার টিইইউএস।

‘ওয়ান হানড্রেড পোর্টস-২০১৯’ শীর্ষক লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমান ও পারদর্শিতা বিবেচনায় লয়েডস লিস্টে বিশ্বসেরা একশ’ বন্দরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর আরও ছয় ধাপ এগিয়ে ৬৪তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। এ সাফল্যের পেছনে চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক, স্টেক হোল্ডার তথা বন্দর ব্যবহারকারীসহ সবার অবদান রয়েছে।

বন্দরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা ও সক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বন্দরে ইতোমধ্যে দশটি কী গ্যানট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হয়েছে। এরফলে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং গতিশীল হয়েছে। জাহাজের গড় অবস্থানকাল হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া আরো অত্যাধুনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম ক্রয় ও সংযোজন, নতুন ইয়ার্ড এবং পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের কোলে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এশিয়ার অন্যতম সুবিধাজনক ও নিরাপদ পোতাশ্রয়কে ঘিরে হাজার বছর আগে গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। আজ শিপিং বিশ্বে সুপরিচিত নাম চট্টগ্রাম। এ সমুদ্রবন্দর অনেকাংশেই কন্টেইনার-শিপিং বাণিজ্যে নির্ভরশীল। অথচ শুধু ৬টি মাত্র আমদানি কন্টেইনার দিয়েই যাত্রা শুরু। সেই ৪৩ বছর পূর্বে ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে একটি সাধারণ জাহাজযোগে আনা হয় এ ক’টি মাত্র কন্টেইনার। চার দশকের ব্যবধানে এখন বার্ষিক প্রায় ৩০ লাখ টিইইউএস আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে।

প্রধান এ সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-করসহ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ রাজস্ব আয় আসছে। বর্তমানে ৪৯ হাজার কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা রয়েছে বন্দরের ইয়ার্ডসমূহে। সারাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রবাহের শতকরা ৮৭ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা মূল্যের হরেক ধরনের নিত্য ও ভোগ্য পণ্যসহ শিল্পের কাঁচামাল, সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী ওঠানামা, ট্রানজিট মজুদ, খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন কার্যক্রম চলছে। বন্দরকে কেন্দ্র করে বন্দরের বাইরে গড়ে উঠেছে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) তথা অফডক খাতের বিরাট কর্মকান্ড। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এভাবেই যাচ্ছে এগিয়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ