পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডেঙ্গু, বন্যা, গুজব মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে জনগণকে সচেতন করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় টেলি-কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডন থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু, বন্যা, গুজব, পাস্তুরিত দুধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে এই সভার আয়োার আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মোবাইল ফোনে কল করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে টেলি-কনফারেন্সে মাইকের সংযোগ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু আস্তে আস্তে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা থেকে ঈদে যারা বাড়িতে যাচ্ছে তাদের মাধ্যমে এ রোগ অন্য এলাকায় আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে ডেঙ্গু রোগী থেকে এডিস মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবার প্রতি আবেদন, যার যার নিজের ঘরবাড়ি ও কর্মস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। তাছাড়া কোথাও যেন বৃষ্টির পানি জমতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, ঘরবাড়ি, অফিস, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোথাও যেন ফুলদানি, ফুলের টব, পরিত্যক্ত ভাঙা হাঁড়িপাতিল ও খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে জামা-কাপড়ের মধ্যেও যেন মশা দাঁড়াতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া ডোবা নালায় যেন এডিস মশা বিস্তার লাভ করতে না পারে, সে ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে করণীয় যা যা আছে, তার প্রত্যেকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকেও পরিচ্ছন্নতা কাজে নামার আহ্বান জানান দলটির সভাপতি।
পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগার গুজব ও গণপিটুনি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে বলবো গুজবে কান দেবেন না। কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশের হাতে তুলে দিন। গুজব ও গণপিটুনির নামে মানুষ হত্যা জঘন্য অপরাধ ও পাপের কাজ। মিডিয়ার যারা আছেন তাদের বলবো, অহেতুক ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়। বর্তমানে বেশ কয়েকটি জেলায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তা মোবাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য দায়িত্বশীলরা কাজ করছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বন্যাকবলিতদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে ও নদীগুলোতে পানি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার নদীগুলো ড্রেজিংয়ের কাজ করছে। নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারলে নদীভাঙন ও বন্যা প্রবণতা কমবে এবং শুষ্ক মৌসুমেও পানির ঘাটতি কমবে।
বাজারে পাস্তুরিত দুধের সংকটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না হঠাৎ করে একজন প্রফেসর সাহেব কী পরীক্ষা চালালেন, আর এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে আদালতে রিট হলো। একে একে সব কোম্পানির দুধ উৎপাদন বন্ধ। এর ফলে দুধের ঘাটতিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আবার যারা খামার করছে তারাই বা কীভাবে জীবনযাপন করবে, আর গরুকেই বা কী খাওয়াবে। আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধের ব্যাপারে কোনও পরীক্ষা হয় না। তাই গুঁড়ো দুধ আমদানিকারকদের কোনও কারসাজি এখানে আছে কি-না সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গবাদি পশুকে রোগমুক্ত রাখতে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। সেক্ষেত্রে দুধে কিছুটা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি থাকতে পারে। তবে দুধের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা।
আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা দীর্ঘায়িত এই রোহিঙ্গা সমস্যাকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে চায়।
লন্ডনের স্থানীয় সময় গত সোমবার সন্ধ্যায় লর্ড আহমেদ অব উইম্বলডন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান আমাদের জন্য এক বিরাট বোঝা। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এটির সমাধান করতে চাই। প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে একথা জানান।
লর্ড আহমেদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লন্ডন থেকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, লর্ড আহমেদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে তার দেশের সকল প্রকার সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন এবং এ বিষয়টি নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবগত রয়েছেন বলেও জানান।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং লর্ড আহমেদ উভয়ই একমত পোষণ করে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং সন্ত্রাসবাদকে ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। প্রধানমন্ত্রী এবং লর্ড আহমেদ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন।
জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশক্বে
কমনওয়েলথের ‘ব্ল চার্টার’ বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে কমনওয়েলথে নেতৃত্ব প্রদানের আহবান জানিয়েছেন এর মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি। প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি গত সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাতে এই আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম কমনওয়েলথ মহাসচিবের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে জানান- কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন, কমনওয়েলথ ব্ল চার্টার এবং জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়া উচিত। কমনওয়েলথ ‘ব্ল চার্টার’ মহাসাগর সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই মহাসাগর উন্নয়নের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের পারষ্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি অঙ্গীকারনামা।
প্রেস সচিব লন্ডন থেকে জানান, প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন এবং বলেছেন, তার সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে প্যাট্রিসিয়া তথ্য প্রযুক্তি খাতে এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের চমকপ্রদ সাফল্যের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এ বছর কেনিয়ার নাইরোবীতে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ নারী সম্মেলনেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্যাট্রিসিয়া আরো বলেন, বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের উন্নত সংস্করণ থেকে বিভিন্ন কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রগুলোও শিক্ষা লাভ করতে পারে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ’র ৫৩টি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রের মধ্যে ৪৯টি নিয়ে একটি ‘কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া’ বা উপমহাদেশীয় অবাধ বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান এবং লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।