পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রেমিটেন্সে। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছর। একই সঙ্গে রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৬ দিনেই ১৩০ কোটি ২১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক গত বছরের পুরো জুলাই মাসের প্রায় সমান। গত বছরের জুলাই মাসে ১৩১ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। রেমিটেন্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ায় প্রবাসীরা বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রণোদনা দেওয়ার খবরে ইতিবাচ প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্সে। অর্থবছরের শুরু থেকেই বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন। অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখবেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তুতির অভাবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া এখনও শুরু করা যায়নি। যখনই শুরু করা হোক না কেনো ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকেই দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন প্রবাসীরা। গত সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এটা আমরা বাজেটে পাস করেছি। কিন্ত সিস্টেম এখনো ডেভেলপ করতে পারিনি। প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সিস্টেম আপডেট করতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। সামনে ঈদ, অনেকেই ধারণা করছেন, এখন দেশে কেউ রেমিটেন্স পাঠালে তারা প্রণোদনা পাবে না। এটা কিন্তু ঠিক না। যেহেতু বাজেটে পাস হয়েছে সেহেতু এখন রেমিটেন্স পাঠালেও দুই শতাংশ প্রণোদনা, ছয় মাস পরে হলেও পাবে। এখন পাঠালেও পাবে, পরে পাঠালেও পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত রেমিটেন্সের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ১ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১৩০ কোটি ২১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩১ কোটি ২২ লাখ ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে দুই কোটি ডলার।
৪০ বেসরকারি ব্যাংক এসেছে ৯৬ কোটি ছয় লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯২ লাখ ডলার। নতুন বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে দুই টাকা প্রণাদনা পাবেন।
বাজেটে এ জন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রেমিটেন্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেওয়া হচ্ছে। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই অংক আগের বছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে নয় দশমিক ছয় শতাংশ এবং অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি।
২০১৪-১৫ অর্বছরে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৩৬ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি জুলাই মাসের আরও ৫ দিনের অর্থ যোগ হলে এই মাসে রেমিটেন্স ১৫০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিটেন্সে আসে; যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।
স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিটেন্স বাড়ছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ৩০ জুন ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৭৭ পয়সা।
রিজার্ভ ৩২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার: রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গতকাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নীচে মে আসে। রেমিটেন্স বাড়ায় তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।