Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্দেহে আরো অর্ধশত চালান

মাছ-মুরগির খাবারের নামে : ক্ষতিকর শূকরের বর্জ্য

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মাছ-মুরগির খাবারের নামে আনা আরও অর্ধশত চালান সন্দেহের তালিকায় রেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এসব চালানেও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হারাম বস্তু শূকরের বর্জ্য থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তা নিশ্চিত হতে কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারসহ তিনটি পরীক্ষাগারে এসব পণ্যের নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে। অর্ধশত চালানে কয়েক হাজার টন পণ্য রয়েছে।

পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পর গত ২৪ জুলাই তিনটি চালানে আসা ৮৫ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক হাজার ৪০৯ টন ফিশ ফিড জব্দ করা হয়। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা এ তিনটি চালানে পাওয়া যায় শূকরের বর্জ্য মিশ্রিত মাছের খাবার। প্রাণি খাদ্যের নামে দেশে শূকরের বর্জ্য নিয়ে আসার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। জানা যায়, নানা ফাঁক-ফোকরে দীর্ঘদিন থেকে শূকরের বর্জ্য আমদানি করছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। ইতোমধ্যে অনেক চালান খালাসও হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, উন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শূকর ও গবাদিপশুর বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আর তা করতে গিয়ে অনেক সময় অ্যানথ্রাক্স, মেডকাউসহ বিভিন্ন মারাত্মক মহামারি আক্রান্ত শূকর ও গবাদিপশুকে মেরে ক্রাশ করা হয়। এরপর এসব বর্জ্য সার ও পশুখাদ্য হিসেবে অনুন্নত দেশে রফতানি করা হয়। দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আমদানিকারকেরা মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে এসব পণ্য নিয়ে আসে। ফলে এসব বর্জ্যে ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক ক্লোরামফেনিকল ও নাইট্রোফিউরান, ক্রোমিয়াম, টেনারি উপজাত ও মেলামাইনের মিশ্রণ থাকার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব খাবার খেলে মুরগির বাচ্চা দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে। এটি অস্বাভাবিকভাবে মাছের বৃদ্ধিতে কাজ করে। এসব মাছ এবং মুরগি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার দ্রুত বাড়ছে। মৎস্য বিভাগের হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন হয় বছরে ১১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। মোট খাবারের প্রয়োজন হয় প্রায় ১৭ লাখ টন। এর বিশাল একটি অংশ আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান ড. শেখ আহমাদ আল নাহিদ বলেন, সব মিট অ্যান্ড বোন মিল ক্ষতিকারক না। মানুষের পুষ্টির জন্য যেমন প্রাণিজ প্রোটিন এবং উদ্ভিজ প্রোটিন দুটোই দরকার ঠিক মাছ-মুরগির জন্যও দুই ধরনের প্রোটিন জরুরি। তবে প্রাণিজ প্রোটিনের নামে আমদানি করা পণ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক জীবাণু যেমন- সীসা, অ্যান্টিবায়োটিক, মেডকাউ জীবাণু আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে এসব খাবারে পরিপুষ্ট মাছ-মুরগি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে দেশে শূকরের বর্জ্য মিশ্রিত পণ্য আমদানি হচ্ছিল। জানা যায়, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দেশের প্রখ্যাত একদল মুফতি শূকরের বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি লেখেন। মূলত ওই চিঠির সূত্র ধরেই শূকরের বর্জ্যযুক্ত প্রাণিখাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। এ প্রেক্ষিতে গেল ডিসেম্বর মাসে এক পত্রে প্রাণির খাদ্যে শূকরের বর্জ্য আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে।

কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম জানিয়েছেন, ওই চিঠি পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি চালান পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমদানি পণ্যে শূকরের বর্জ্য আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। একইসাথে নাইট্রোফিউরান, ক্রোমিয়ামসহ ক্ষতিকারক কিছু আছে কিনা তাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার জন্য কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারই যথেষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও স্বচ্ছতার জন্য আইসিডিডিআর.বি ও চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটির পোল্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার কামনাশীষ বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর প্রতিটি আমদানি চালান পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত তিনটি চালান ছাড়া অন্য কোন চালানে শূকরের বর্জ্য কিংবা ক্ষতিকর কোন বস্তু পাওয়া যায়নি। আমদানিকৃত ফিশ ফিড জব্দ করে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। একইসাথে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে আইনানুগ সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে তিনটি চালানে বিপুল পরিমাণ পণ্যের মধ্যে শূকরের বর্জ্য পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্টরা। খালাসের অপেক্ষায় থাকা প্রায় সবকটি চালান পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার উপ-কমিশনার অনুপম চাকমা বলেন, খালাসের অপেক্ষায় থাকা ছোট বড় অর্ধশত চালান আমরা পরীক্ষা করছি।



 

Show all comments
  • MD Aros Mia ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    এমনিতেই মুরগী মানুষ খায়না আরো যদি জনগণ এই গুলো শুনে জানে। অবস্থা আরো খারাপ হবে। সব কম্পানি ত আর এই গুলো ব্যবহার করেনা। কিন্তু বদনাম ত সবার।
    Total Reply(0) Reply
  • Imran H Mondal ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    দুঃখজনক
    Total Reply(0) Reply
  • Bashir Ahmed ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    মামুন ভাই মনে হয় মুরগীর দাম আরো কমবে, কারন এই সব লিখা দেখে মুরগীর প্রতি মানুষের অনিহা আসতে পারে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Kutub Uddin Jisun ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    আজ এর সাথে জড়িত জারা তারা সবাই শিক্ষিত মানুষ তারা যেনে বুঝে সকল মানুষের খাদ্য এরকম কাজ কিভাবে করতে পারে। এরা শিক্ষিত মানুষ নামের কলঙ্ক। টাকার প্রতি এত লোড। ১৮ কোটি মানুষের চিন্তা করল না। আইনের শাসন নাই ,কি হবে দুই দিন পেপার লেখা আসবে তার পর যে লাউ সেই কদু।অশিক্ষিতরাই ভাল তারা কাউকে ঠগাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Kutub Uddin Jisun ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    এ-ই সব হ্মতিকর ফিসমিল আমদানিকারকরা বাংলাদেশের কলঙ্ক।এদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দিন।ক্রসফায়ারের আওতায় আনা হওক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ