Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চৌদ্দ পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন নিষিদ্ধ

প্রতিবেদনে সিসা ও ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক থাকার তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

চৌদ্দ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, বিক্রয় এবং বিপণন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চার প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল রোববার এ আদেশ দেন। রিটের পরবর্তী শুনানি ২৫ আগস্ট।

আদালত থেকে বেরিয়ে রিটকারীর আইনজীবী অনিক আর হক জানান, পাস্তুরিত তরল দুধে সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়ায় ১৪ কোম্পানির দুধ উৎপাদন ও বিক্রি ৫ সপ্তাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এসব দুধ উৎপাদন এবং বাজারজাতের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), লাইভ স্টক অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সাভার), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) গবেষণা করে এই মর্মে প্রতিবেদন দেয় যে, ১৪ কোম্পানির দুধে সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান রয়েছে। গত ১৪ জুলাই বিএসটিআই অনুমোদিত বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত (প্যাকেটজাত) সব দুধের নমুনা সংগ্রহ করে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট, ফরমালিন, ব্যাকটেরিয়া, কলিফর্ম, অ্যাসিডিটি, স্টাইফলোকাস্টেস ও ফরমালিন আছে কি না তা চার প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএসটিআইকে বাজার থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করতে বলেন আদালত। ওই নমুনা চার প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ১৪ দুধের মধ্যে রয়েছে মিল্ক ভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ঈগলু, ঈগলু চকোলেট, ঈগলু ম্যাঙ্গো, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং, প্রাণ মিল্ক, আইরান, পিউরা ও সেফ ব্র্যান্ড।

ব্যারিস্টার অনিক আর হক আরো জানান, দুধ পরীক্ষার জন্য বিএসটিআইতে ৯টি প্যারামিটার রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে প্যারামিটার রয়েছে ১৯টি। আমরা আদালতে বিভিন্ন দেশের দুধের মান নির্ধারণের উদাহরণ তুলে ধরেছি। তারা দুধ পরীক্ষায় ৩০ ধরনের প্যারামিটার ব্যবহার করে।

হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে দুধের মান পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই একটি কমিটি করে। কিন্তু জানুয়ারিতে গঠিত ওই কমিটি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই সব বিষয়ে আদালত আমাদের শুনানি গ্রহণ করেন। পরে পাস্তুরিত দুধের পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে। গতকাল শুনানিকালে আদালত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুধ উৎপাদন, বাজারজাত ও বিপণন সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে (পিএলটি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুরের তিনটি বাজার থেকে অপাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল জানায়, বিএসটিআইর মানদন্ডে এসব দুধের সবগুলোই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআরবি) গবেষণার একটি প্রতিবেদনও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধই অনিরাপদ। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ২০১৮ সালের ২০ মে রিট করেন অ্যাডভোকেট তানভির আহমেদ। তার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক। বিএসটিআইর আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম শুনানি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ