Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

নেই ভারী বর্ষণের আভাস

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিপদসীমার উপরে ও নিচে থাকা দেশের নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। প্রধান নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় উত্তর-পূর্ব ভারতে এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশের অংশে অন্তত এ সপ্তাহে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস নেই। গতকাল রোববারসহ গত ৫ দিনে নদ-নদী অঞ্চলে হালকা বর্ষণ ছাড়া তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদী এলাকা থেকে বানের পানি নেমে যাচ্ছে। এরফলে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

অন্যদিকে গত ১০ জুলাই থেকে এ যাবৎ ২৮টি জেলার গ্রাম-জনপদ, শহর-গঞ্জে সর্বনাশা এ বন্যা আর নদীভাঙনে সড়ক, রেলপথ, রাস্তাঘাট, বাঁধ, বসতঘর, হাট-বাজার, শিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ফল-ফসল, ক্ষেত-খামারের ক্ষয়ক্ষতি অপূরণীয়। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বানের পানি হ্রাস পেতে থাকলেও এ মুহূর্তে খাবার, আশ্রয় তথা বিধ্বস্ত বসতঘর মেরামত, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসাসহ নানামুখী সঙ্কটে পড়ে লাখ লাখ বন্যার্ত মানুষ দিশেহারা। ত্রাণের আশায় প্রহর গুণছে, অথচ ত্রাণ সাহায্য যতটুকু মিলছে তা বন্যার্তদের অভাব-অনটনের তুলনায় খুবই নগণ্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৯টি নদ-নদী ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছিল। এরমধ্যে মাত্র একটি স্থানে পানি কিছুটা বৃদ্ধির দিকে থাকলেও ১২টি পয়েন্টে পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। আগের দিন (শনিবার) ১১ নদ-নদী ১৮ পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।
গতকাল দেশের নদ-নদীসমূহের ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৩০ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৬৩টিতে হ্রাস পায়। গত শনিবার ৩২টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৯টিতে হ্রাস পায়। শুক্রবার ৩৬টিতে পানি বৃদ্ধি ও ৫৪ পয়েন্টে স্থানে হ্রাস পায়। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশের নদ-নদী এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত হয়নি।
নদ-নদী প্রবাহের পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের বিভিন্ন অংশে বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধান নদীগুলোর বিপদসীমায় প্রবাহের গতকাল সর্বশেষ অবস্থানে জানা যায়, উত্তর জনপদের কুড়িগ্রামে ধরলা নদী এবং গাইবান্ধা জেলায় ঘাগট নদীর পানি অবশেষে বিপদসীমার নিচে নেমেছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের আরও হ্রাস পেয়ে চিলমারীতে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর রয়েছে। যমুনা নদের পানি এখন বিপদসীমার ওপর রয়েছে শুধু বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ি স্টেশনে। বইছে ১৭ থেকে ২৫ সে.মি. ঊর্ধ্বে।

মধ্যাঞ্চলে ধলেশ্বরী নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে টাঙ্গাইলের এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার ৩০ সে.মি. ঊর্ধ্বে, আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে ১৪ সে.মি. ওপরে এবং সিংরায় গুর নদীর পানি কিছুটা বেড়ে ১৬ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে এবং কোথাও হ্রাস কোথাও সামান্য বৃদ্ধির দিকে।

গঙ্গা নদীর পানি কিছুটা বাড়তির দিকে। তবে বিপদসীমার অনেক নিচে রয়েছে। পদ্মার ভাটিতে গোয়ালন্দ ও সুরেশ্বরে বিপদসীমার ৩ সে.মি. ঊর্ধ্বে রয়েছে। সুরমা নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। শুধু কানাইঘাটে বিপদসীমার ১৯ সে.মি. ওপর বইছে। কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার ২২, ২৭ ও ২৯ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিতাস নদীর পানি বি.বাড়ীয়ায় কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২১ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।

আবহাওয়া বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বন্যার পানি দ্রুত নামছে। অবশিষ্ট স্থানগুলোতে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যাবে। আগামী কয়েক দিনে উজানে ও দেশের ভেতরে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা নেই। উজানে ও দেশে বৃষ্টির মাত্রা কমে যাবার ফলে প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি দ্রুত কমছে। এ সপ্তাহে দেশে এবং উজানভাগের দিকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে নদ-নদীগুলোতে পানি হ্রাস আগামী দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এই দুই সপ্তাহে দেশে বড় বন্যার ঝুঁকি নেই। বর্তমানে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা ও সুরমা নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। ভারী বর্ষণ না হলে এসব নদ-নদীর পানি দ্রুত নেমে যাবে।

আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস মতে আগামী ১০ দিন বাংলাদেশের নদ-নদী অববাহিকার উজানে ভারতীয় অংশে বিশেষ করে আসাম, মিজোরাম, মেঘালয় এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। ওইসব অঞ্চলে হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়ও হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। আগামী ১০ দিনে বড় ধরনের কোনো বন্যার পূর্বাভাস নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ