পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর সকল অস্থায়ী পশুর হাট সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দখলে। সিন্ডিকেট তৈরি করে নামমাত্র মূল্যে ২৩টি হাটের মধ্যে ২১টি কোরবানির পশুর হাট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নিয়ে গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির দু’টি হাটের ভাগ্য এখনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর ঝুলে আছে। কাক্সিক্ষত দর না পওয়ায় এ হাট দুটোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডিএসসিসি। এ বছরও পছন্দের প্রার্থীকে হাট ইজারা দেয়ার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা কৌশল আবলম্বন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ হাটের টেন্ডার আহ্বান করা হলেও শেষ পর্যন্ত ১২টি হাট চূড়ান্ত করা গেছে। পর পর গত দুই বছর দক্ষিণ সিটির বেশির ভাগ হাট ইজারা দিতে পারেনি ডিএসসিসি। যে কারণে ২০১৭ সালে ৭টি ও ২০১৮ সালে ৯টি হাট খাস আদায়ের ভিত্তিতে ইজারা দিতে হয়েছিল। ওই দুই বছর কোরবানির অস্থায়ী হাট থেকে দক্ষিণ সিটি প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বছরও দক্ষিণ সিটির ১৪টি হাটের ইজারার নামে সরকারদলীয়দের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন টেন্ডার সিডিউল কেনা কয়েকজন হাট ইজারা প্রার্থী।
তাদের অভিযোগ, ডিএসসিসির খোদ মেয়র, প্রণিক ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ সরকারদলীয় কিছু নেতার যোগসাজশে টেন্ডার আহ্বান করা হাটগুলোর কাক্সিক্ষত দর পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে উল্লেখিত কর্মকর্তারা বৈধ হাট ইজারা দেয়ার চাইতে বেশি মনোযোগী ছিলেন অবৈধ হাট ইজারা দেয়ার কাজে। এ নিয়ে প্রায় ১০-১২ দিন ধরে ডিএসসিসির নগর ভবনের মেয়র সেল ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার দপ্তর ছিল সরগরম। যে কারণে এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শুধু কোনবানির হাট ইজারা থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে বসেছে।
বছর বছর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়ে না ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কোরবানির হাটের ইজারা মূল্য। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১১ সালে ঢাকা অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি হাটের ইজারা মূল্য ছিল সাত কোটি ৩২ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১ টাকা। তার পাঁচ বছর পরে এসে ২০১৬ সালে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ২২ হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ২৩টি হাটের ইজারা মূল্য ছিল ২৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর ২০১৮ সালে ২২টি হাটের ইজারা মূল্য ছিল মাত্র ১৭ কোটি টাকা। চলতি বছরে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন মোট ২৬ হাটের দরপত্র আহ্বান করে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় দুই কর্পোরেশনের ২১টি হাট ইজারা সম্পন্ন করা হয়। বিভিন্ন কারণে উত্তরের তিনটি হাটের ইজারা বাতিল করা হয় আর দক্ষিণের দুই হাটের ভাগ্য এখনো মন্ত্রণায়ের ওপর নির্ভর করছে। এ বছর ঢাকার দুই সিটির ২৩ হাট থেকে ২২ কোটি টাকার পাওয়া গেছে।
২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল, এই ৮ বছরে বেড়েছে ঢাকা শহরের মানুষের জীবনমান, বেড়েছে চাল, ডাল, তেল, তরি-তরকারিসহ সব কিছুর দাম। ২০১১ সালে অবিভক্ত ডিসিসির বাজেট ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা। তার ৯ বছর পরে এসে ২০১৯-২০ সালের অর্থবছরে শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শুধু বড় হচ্ছে না ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ইজারা মূল্যের অংক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকার অভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে। মাস শেষে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে অ্যাকাউন্ট সেকশন হিমশিম খাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে ঘুরতে হচ্ছে এই কর্পোরেশন থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের অবসর সুবিধা আদায় করে নিতে। টাকার অভাবে তাদেরকে যথাসময়ে অবসর সুবিধা দিতে পারছে না ডিএসসিসি। অন্য দিকে ঢাকার অভিজাত ও ধনী কর্পোরেশন হিসেবে পরিচিত উত্তর সিটি কর্পোরেশনও এবার বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে বলে জানা গেছে। টাকার অভাবে তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী ২৩টি হাটের প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দরদাতাদের হাটের ইজারা মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১৪টির মধ্যে ১২টি পশুর হাটের সর্বোচ্চ দর ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৯টি পশুর হাটের সর্বোচ্চ দর ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮৬ টাকা। এ বছর দুই সিটি কর্পোরেশনের ২৩টি পশুর হাট থেকে ইজারা পেয়েছে ২২ কোটি ২৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৭ টাকা।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেটের পশুর হাটের ইজারাদার আব্দুল লতিফ। গতবারও তিনি এই হাটের ইজারা পেয়েছিলেন। আব্দুল লতিফ বলেন, স্থানীয় লোকজন আমার নামে পশুর হাটের ইজারা নেয়। আমরা সবাই মিলেই হাটের ইজারা সংগ্রহ করে থাকি।
একই কথা বলেন পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন পশুর হাটের ইজারাদার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঈদ উদ্দিন চিশতী। তিনি বলেন, গত বছরের আগের বছর এ হাটের ইজারা পেয়েছিলেন তিনি। এবারো পেয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়েই হাটের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ইজারা হওয়া হাটগুলোর মধ্যে শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ গত বছর ইজারা নিয়েছিলেন ৮ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এবারো তিনি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় এ হাটটি ইজারা নিয়েছেন। এবার এ হাটে ২০ হাজার টাকা ইজারা বেড়েছে। হাজারীবাগ ঝিগাতলা পশুর হাট গত বছর ডিএসসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা তারিকুল ইসলাম সজীবের ভাই জাহিদুল কবির ১ কোটি ১৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন।
এবার এ হাটের মূল্য ১৭ লাখ টাকা কমিয়ে ৯৮ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। এটি পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের দিল জাহান ভ‚ঁইয়া। রহমতগঞ্জ মুসলিম সোসাইটির পক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতা হাজী শফি মাহমুদ গত বছর ১১ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকায় ইজারা নেন।
এবারো তিনি ১২ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকায় হাটের ইজারা পেয়েছেন। ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কামরাঙ্গীরচর চেয়ারম্যান বাড়ির হাটের ইজারা পেয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন সরকার।
গত বছরও তিনি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নেন। ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকায় পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পাশের হাটের ইজারা পেয়েছেন মঈন উদ্দিন চিশতী। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত বছর এ হাটটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছিলেন আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া শ্যামপুর বালুর মাঠ কদমতলীর হাট ৫০ লাখ ১১ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান কামাল। এই হাটের সরকারি মূল্য এখনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন হাট ১ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন শাহ আলম।
তারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। একই অবস্থা ৩২ নং ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন হাটের। ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় এ হাটের ইজারা পান মুরাদ হাসান। কমলাপুর স্টেডিয়াম-সংলগ্ন হাট ১ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন জাকির হোসেন। শনির আখড়া ও দনিয়া পশুর হাট ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছেন মোশারফ হোসেন। ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন ও আশপাশের খালি জায়গা পশুর হাট ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন শামসুজ্জোহা। ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউয়ার টেক পশুর হাটের ইজারা ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় নিয়েছেন ফরহাদ ভূঁইয়া। আফতাব নগর ইস্টার্ন হাউজিং হাট ৭০ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছেন নবী হোসেন। আর আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গায় হাটের ৬ লাখ টাকায় ইজারা পান আহসান উল্লাহ। যদিও এ হাটের সরকারি মূল্য মন্ত্রণালয় এখনো নির্ধারণ করে দেয়নি।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি হাটেরই ইজারাদাররা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত বছরের মতো এবারো একই কৌশল অবলম্বন করে তারা হাটগুলোর দখল নিয়েছেন।
এদিকে উত্তরের হাটগুলোর দখলেও রয়েছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের হাটটি ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন। ভাটারা থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন খন্দকার পেয়েছেন সাঈদনগর পশুর হাটের ইজারা। মোহাম্মদপুর হাট ইজারা পেয়েছেন যুবলীগ নেতা শাহ আলম হোসেন। ইস্টার্ন হাউজিং হাটের ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা আশরাফ উদ্দিন। আফতাবনগর হাট ইজারা পেয়েছেন ৪২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন।
মিরপুর ডিওএইচএসের সেতু প্রোপার্টি হাট ইজারা পেয়েছেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান ও তুরাগ থানা মোটর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মনির হোসেন। তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠের ইজারা পেয়েছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জালাল উদ্দিন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। জমা পড়া দরপত্র বিশ্লেষণ করে সব কিছু ঠিক থাকলে শীর্ষ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কে কোন দল করে, তা বিবেচ্য নয়। তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান নীতিমালার কারণে সিটি কর্পোরেশন চাইলেও কোনো হাটের ইজারা মূল্য বাড়াতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।