Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনের আশ্বাস মনে করে কাঁদছেন বাবা ও ভাই

নুর হোসেন ইমন : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০২ এএম

জন্মগ্রহণ করেছিলেন দরিদ্র পরিবারে, দেখেছেন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। চলে এসেছিলেন কৃষক বাবা ও ভাইকে দেয়া আশ্বাস পূরণের শেষ ধাপে। দারিদ্রত্য ও দুঃখ কষ্ট যে ছেলেটিকে হার মানাতে পারেনি ১০দিন লড়াই করে সে হার না মানা ছেলেটিকে হার মানতে হয় ডেঙ্গুর কাছে।

বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ফিরোজ কবির স্বাধীনে কথা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতলে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এরআগে নিজের আবাসিক ঠিকানা ঢাবির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের ৪১৪ নাম্বার কক্ষে গত ১৮ জুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিনি। এর পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে তার পরিবার এসে তাকে দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফের ঢামেকে নিয়ে আসেন তার বড় ভাই। এর পর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্বাধীনকে। সেখানে ২২ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়।

ঢাবি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটে নবম হয়ে ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন তিনি। মেধাবী স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই শুরু করেন কৃষক বাবা ও ভাইকে দেয়া স্বপ্ন পূরণের সংগ্রাম। ইচ্ছা ছিলো পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরিতে ঢুকে সংসারের হাল ধরবেন।

স্বাধীনের গ্রামের বাড়ী ঠাকুরগাঁও জেলায়। গ্রামে বড় ভাই ও বাবা কৃষিকাজ করেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তার বড় ভাইকে বলেছিল, ‘ধানের দাম কম ভাই। তোমারে ক্ষেতে যাইতে দেব না। আমি ৭০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করব। তোমাদের ভালো রাখব।’ তাইতো মৃত্যুর পর হাসপাতালের করিডরে আহাজারি করে বড় ভাই বলছিলেন, ভাই তোর কিছু করা লাগবে না। তুই আয়। আমি মাকে কী কমু। সহপাঠীরা জানান, সদা হাস্যোজ্জ্বল ছিল স্বাধীন। তার চোখে ছিল পরিবারের উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন।

এদিকে ফিরোজ কবির স্বাধীনের মৃত্যুর জন্য ঢাবি প্রশাসনকে দুষছেন তার সহপাঠীরা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মশা নিধনে প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে স্বাধীনের সহপাঠীসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেন। তাদের দাবি, ‘মৃত্যুবরণের পর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে ক্যাম্পাসে আনতে দেওয়া হয়নি।

স্বাধীনের নিজ বিভাগ ফাইন্যান্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহবুবুর রহমান মাহির বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও নিশ্চুপতার ফল। এটি প্রতিরোধে আরও আগে থেকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন নেয়নি। ঢাবি প্রশাসন ফিরোজ কবীরের মৃত্যুর দায়ভার কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেনা।’ তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ও কুচক্রী মহলের ইশারায় ফিরোজের মরদেহ ক্যাম্পাসে আনতে দেওয়া হয়নি। ডেঙ্গুমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষকদেরও সংহতি জানাতে দেখা যায়। সহপাঠীদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. একে এম গোলাম রাব্বানী শিক্ষার্থী মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক উল্লেখ করে সহপাঠীদের অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ