Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গঙ্গা চুক্তিতে নদী সুরক্ষার বিধান রাখা হয়নি

পিএইচডি অভিসন্দর্ভ বক্তৃতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১১:৫৯ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গা চুক্তিতে নদীর সুরক্ষার জন্য কোনো বিধান রাখা হয়নি। এর পাশাপাশি উজানে এর ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। এই চুক্তির বাস্তবায়ন নির্ভর করে ফারাক্কায় প্রবাহ স্থিতিশীল রাখার উপরে, কিন্তু ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের আশ্বাসের কথা থাকলেও কার্যকর কোনো বিধান নেই।

গতকাল জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে অনুষ্ঠিত ‘নদী, পরিবেশ, আইন ও রাষ্ট্র’ শীর্ষক ৫ম অপ্রকাশিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ বক্তৃতায় এসব মন্তব্য করেন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, চুক্তিতে বলা হয়েছে, ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৫০,০০০ কিউসেকের কম হলে দুই দেশ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এরকম পরিস্থিতিতে দুদেশ সমঝোতায় পৌঁছতে দেরি হলে ১৯৮৩ সালের মত বাংলাদেশকেই বেশি দুর্ভোগে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকা-ভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ ও প্রতিবেশগত দিক এবং আন্তর্জাতিক নদী আইনের বিধিবিধানসমূহ অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

ড. আসিফ নজরুল ১৯৯৯ সালে ইকুইটেবল শেয়ারিং অব দি ওয়াটার অব দ্য গাঙ্গেজ, অ্যাপ্লিকেবল প্রসিডিউরাল প্রিন্সিপালস অ্যান্ড রুলস অব ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড দেয়ার অ্যাডেকুয়েসি’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ জমা দিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (সোয়াস) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই অভিসন্দর্ভের উপর ভিত্তি করে গতকালের বক্তৃতা রচিত হয়েছে।

ড. নজরুল বলেন, ভাটির দেশ বাংলাদেশের ৫৪টি নদী ভারত থেকে প্রবাহিত হয়। চার দশকের দর-কষাকষির পরও দুই দেশ শুধুমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বন্টন বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে। কয়েকটি স্বল্পমেয়াদী চুক্তির পর ১৯৯৬ সালে দুই দেশ পরবর্তী ত্রিশ বছরের জন্য গঙ্গার পানি চুক্তিতে আবন্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে ফারাক্কায় গঙ্গার পানির প্রবাহ অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। তবে চুক্তিতে ফারাক্কায় পানি প্রবাহ পরিমাপের ক্ষেত্রে ১৯৪৯-৮৮ সাল পর্যন্ত ৪০ বছরের ১০ দিন-ভিত্তিক গড় প্রবাহের উপর নির্ভর করা হয়েছে যা কখনো ফারাক্কার আসল গঙ্গায় পানি প্রবাহের বাস্তব চিত্র হতে পারে না। চুক্তিতে নদীর সুরক্ষার জন্য কোনো বিধান রাখ হয়নি এবং উজানে এর ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। এই চুক্তির বাস্তবায়ন নির্ভর করে ফারাক্কায় প্রবাহ স্থিতিশীল রাখার উপরে, কিন্তু ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের আশ্বাসের কথা থাকলেও কার্যকর কোনো বিধান নেই।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদী গঙ্গার পানি ন্যায্য বন্টনের কথা থাকলেও এই চুক্তিতে ভাটির দেশ বাংলাদেশের পানিসম্পদ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র এবং সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। তিনি চুক্তিতে গঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ; সুনির্দিষ্ট সময়কাঠামো নির্ধারণ এবং তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা গ্রহণের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া সুদৃঢকরণ; প্রয়োজনীয় ও সময়ানুগ সমন্বয়ের জন্য চুক্তি পুনর্বিবেচনার বাধ্যতামূলক বিধান রাখা এবং সর্বোপরি অববাহিকাভিত্তিক সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ