Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগের সম্মেলনে আসছে চমক

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নতুন মন্ত্রিসভার মত দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনেও চমক দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে দলের ভিতরের রাজনীতি। শুরু হয়েছে পদে আসার নানা সমীকরণ ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছিটকে পড়ার মেরুকরণ। কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ব্যাপক পরিবর্তন আসার গুঞ্জন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়বে এমন শঙ্কা সিনিয়র অনেক নেতাদের। এমনাবস্থায় কেন্দ্রীয় পদ পেতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাদের দৌড়ঝাপ বেড়েছে বহুগুণ। দলকে গতিশীল করতে তরুণ ডাইনামিক নেতৃত্ব নিয়ে আসবেন সভাপতি শেখ হাসিনা এমনটাই সবার মুখে মুখে।

এদিকে সম্মেলন ঠিক সময়ে হচ্ছে কিনা কিংবা কখন হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা থাকলেও সামান্য দেরীতেও হলেও সম্মেলন হবেই সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই নেতাদের মাঝে। প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় নিয়মিত দেখা সাক্ষাত করছেন পদ-প্রত্যাশীরা। এছাড়া বর্তমান কমিটির নেতারাও নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। নিজেদের নিয়মিত কাজের মধ্যেও বিশেষ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়ে আরো ভাল পদে যাওয়ার জন্য মেলে ধরছেন নিজেকে।
এদিকে দলের সম্মেলনকে ঘিরে এবার প্রস্তুতির কোন তাগাদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত সম্মেলনের আগে অনেকগুলো সম্মেলন প্রস্তুতি উপ-কমিটি করেছিল আওয়ামী লীগ। নিয়মিত সেই উপ-কমিটিগুলোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এবার সে বিষয়ে কোন লক্ষ্য নেই। সম্মেলন অক্টোবরে হবে বলা হলেও তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি এখনো।

সূত্র জানায়, প্রতিবারই দলে ২৫ শতাংশ নতুন নেতৃত্ব আসে। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাই বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। তাই ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা চেষ্টা করছেন দলের পদে আসতে। সাবেক অনেক ছাত্রলীগ নেতাই কোন পদে নেই। তারা যেকোন ভাবে পদে আসতে চান।

এদিকে জল্পনা কল্পনা দলের অনেক পদ নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের পদে আসবেন কিনা তার আলোচনা সর্বত্র। বছরের শুরুতে দলের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা থাকলেও এখন তা একেবারেই নেই। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, দলের যুগ্ম-সাধারণ ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মধ্য থেকে কেউ থাকবেন।

এছাড়া সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে বেশ আলোচনা। সভাপতিমন্ডলীর অনেক সদস্য দলে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না কিংবা অসুস্থ থাকায় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। গত সম্মেলনেই অনেকে বয়সের কারণে বাদ পড়বেন বলে আলোচিত হয়েছিলেন। এবার অনেকেই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হবেন বলে আলোচনা হচ্ছে।

দিতীয়ত দলের চার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনা। প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কিছুদিন আগে। তিনি সভাপতিমন্ডলীতে স্থান পেতে পারেন। ২য় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণির অবস্থানও খুব ভাল; এছাড়া জাহাঙ্গীর বির নানক ও আব্দুর রহমান দলে ভালভাবে মূল্যায়িত হবেন বলে আলোচনা রয়েছে।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে টেনসন একটু বেশি কাজ করছে। অনেকেই তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দলে আসেন। তারা কি প্রমোশন পাবেন, না ডিমোশন হয়ে বাদ পড়বেন তা নিয়ে অনেক আলোচনা দলের ভিতর-বােিহরে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল ও পানি উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম দক্ষতার পরিচয় রেখে চলেছেন। আর এমপি মনোনয়ন না পাওয়া বিএম মোজাম্মেল হক মূল্যায়িত হতে পারেন।
এদিকে কেন্দ্রের অনেক পদেই বরাবরের মতো অপরিচিত মুখ আসতে পারে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী অনেক নারী নেতৃত্ব আসতে পারে।

দলের জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, আমাদের জাতীয় সম্মেলন করতে হবে। আমাদের নেত্রী এবং আমারও ইচ্ছা যথাযথ সময়ে সম্মেলনের কাজ সমাপ্ত করা। আওয়ামী লীগ কোনো বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া কখনও সম্মেলন করতে গিয়ে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করেনি। আমরা এখন জাতীয় সম্মেলনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগে তৃণমূলে উল্লেখযোগ্য হারে তরুণ নেতৃত্ব আসবে। তবে যারাই আসুক প্রবীণদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করবেন তরুণ নেতারা।

সম্মেলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, দলের সম্মেলন অব্যাহত একটা প্রক্রিয়া। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা হবে। সেখানে যথাসময়ে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হতে পারে আবার যৌক্তিক কারণে অল্প কিছুদিন পিছিয়েও সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কাজেই এখনি চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না সম্মেলন পেছাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০টি কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ ৬ জনকে সভাপতি পদে আর সাধারণ সম্পাদক পদে পেয়েছে ৯ জনকে। বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ সভাপতি আর ওবায়দুল কাদের দলটির নবম সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ও জাতীয় চার নেতা নিহত হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। এর পরের বছর ১৯৭৭ সালে দলের ১১তম কাউন্সিলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করা হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিরা : দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত চারটি কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছর একটি বিশেষ কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। ১৯৬৪ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি পদে ছিলেন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সভাপতি পদে ছিলেন। ১৯৭৪ সালে দশম কাউন্সিলে সভাপতি হন এ এইচ এম কামরুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে ঘাতকের গুলিতে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত হন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে কাউন্সিলে সভাপতি হন আবদুল মালেক। তিনি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে দলের সভাপতি পদে আছেন শেখ হাসিনা। দলের ১৩তম কাউন্সিলে তিনি প্রথম সভাপতি হন। সর্বশেষ ২০তম কাউন্সিলেও তিনি একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

৯ জন হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক : আওয়ামী লীগ গঠনের পর ১৯৪৯ সালে দলের প্রথম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। এরপর ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দলের দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৮৭ সালে সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ছিলেন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। এরপর জিল্লুর রহমান আবারও দুই মেয়াদে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল, ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওই বছর দলের ১৮তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। সর্বশেষ কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়ে নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের



 

Show all comments
  • শিব্বির ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৩০ এএম says : 0
    গুড নিউজ....
    Total Reply(0) Reply
  • নাহিয়ান ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৩১ এএম says : 0
    চমকের কথা কথা শুধু মিডিয়ায় জানা যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৩১ এএম says : 0
    খুব্ই ভালো কথা
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৩ পিএম says : 0
    চমক তো আসতেই হবে !!!!!!!!!!!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • নাবিল ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৪ পিএম says : 0
    তাতে এই দেশের সাধারণ মানুষের কোন লাভ হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির আহমেদ বাবু ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৫ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের পদে আসবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ